
চট্টগ্রামে তিন দিনব্যাপী “অনলাইন প্লাটফর্মে ডিজিটাল মেলা-২০২০” এর সমাপ্তি
নিউজ ডেস্কঃ
রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইসিটির সর্বোত্তম ব্যবহার ও প্রয়োগ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে নাগরিক সেবা সহজিকরণে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগসমূহ প্রচারের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম এর ব্যবস্থাপনায় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ২৮ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রামের ওয়েব পোর্টাল (www.chittagong.gov.bd) এ অনলাইন প্লাটফর্মে ডিজিটাল মেলা-২০২০ আয়োজিত হয়েছে। মেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিগত ১১ বছরের অর্জন সম্পর্কিত কার্যক্রমসমূহ, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ ইত্যাদি ব্যানার/পোস্টার-এর মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এবারের মেলায় জেলাধীন সরকারি দপ্তর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের বিভিন্ন কার্যক্রমকে চারটি বিষয়ভিত্তিক অনলাইন প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে। প্যাভিলিয়ন ১ এ প্রদর্শিত হয়েছে ই-সেবা প্রদানকারী সরকারি সংস্থাসমূহের কার্যক্রম। প্যাভিলিয়ন ২ এ ছিল ডিজিটাল সেন্টার, পোস্ট ই-সেন্টার, এজেন্ট ব্যাংকিং, রুরাল ই-কমার্স ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহ। প্যাভিলিয়ন ৩ এ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবনী উদ্যোগসমূহ প্রদর্শিত হয়।
আর প্যাভিলিয়ন ৪ এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্টার্টআপ ও তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। এছাড়া, মুজিব বর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ‘মুজিব কর্ণার’ নামে একটি প্যাভেলিয়ন তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ কোভিড-১৯ এর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণকে মূল লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করে এবারের ডিজিটাল মেলাটিকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দর্শনার্থীগণ বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের বর্তমান সরকারের সকল উদ্যোগ নিজ ঘরে বসেই জানতে পেরেছেন।
মেলা উপলক্ষে ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিই হাতিয়ার’ শীর্ষক সেমিনার ২৯ জুন বেলা ৩:০০ টার সময় জুম মিটিং এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি উপস্থিত ছিলেন। এ সেমিনারটিতে মুখ্য আলোচক হিসেবে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্যানেলিস্ট হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফ ইফতেখার মাহমুদ ও ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ খান অংশ নেন।
বক্তারা সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জৈব প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর গুরুত্বারোপ করেন। জৈব প্রযুক্তির আওতায় জিন সিকোয়েন্সিং ও এডিটিং, সিনথেটিক বায়োলজি ও ন্যানোটেকনোলজি এবং করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রস্তুত ও পরীক্ষা, কোভিড-১৯ সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রভৃতি নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার যেমন-ডেটা এনালাইসিস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), রোবোটিক ও ড্রোন, টেলি মেডিসিনের ওপর বক্তারা বিশেষ জোর দেন।
মহামারী আক্রান্ত এলাকা নির্ধারণ, ভীড় থেকে জ্বরে আক্রান্ত ও মাস্ক না পরা ব্যক্তিকে সনাক্তকরণ, করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকুয়েন্সে পরিবর্তন পর্যবেক্ষণে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও বিগডাটা প্রয়োগ নিয়ে সেমিনারে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে আলোকপাত করা হয়। একইসাথে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে জনসাধারণের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে টেলিমেডিসিনের ওপর জোর দেয়া হয়। পরবর্তীতে সেমিনারের অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মুখ্য আলোচক ও প্যানেলিস্টগণ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন সেমিনারে অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ দেন এবং ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্টার্টআপ ও তরুণ উদ্ভাবকদের উদ্যোগে সহায়তা প্রদানের বিষয়ে সকলকে আশ্বস্ত করেন। তিনি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগে চট্টগ্রামের নাগরিকবৃন্দের সক্রিয় সহায়তা কামনা করেন। ‘জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম’এর অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজ থেকে সেমিনারটি সরাসরি লাইভ সম্প্রচার করা হয় যেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় বিশ হাজার ভিউজ হয়েছে।
মেলার সার্বিক সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এ. জেড. এম. শরীফ হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), চট্টগ্রাম।