লড়ছে মধ্যবিত্ত
———————-
মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম :
লকডাউন। বড়ই বেদনাদায়ক শব্দে পরিণত আজ। তবে, সবার জন্য নয়, মধ্যবিত্তের জন্য।
বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের চার কোটি পরিবার রয়েছে। এরমধ্যে নিম্নবিত্ত ২০ ভাগ আর উচ্চবিত্ত ২০ ভাগ। মাঝের যে ৬০ ভাগ, এরাই মধ্যবিত্ত। এই সংখ্যা আড়াই কোটি পরিবার হবে।
এই আড়াই কোটি পরিবারই এখন যুদ্ধ করছে। বেঁচে থাকার যুদ্ধ। এমনিতেই এই শ্রেণি সব সময় দোটানায় থাকে। পারে না মন খুলে হাঁসতে, না পারে আওয়াজ করে কাঁদতে। এই করোনাকালীন লকডাউন (সরকারের ভাষায়-সাধারণ ছুটি) তাদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। যারা গ্রামে থাকেন, তারা গ্রামেই লড়ছেন আর জীবন জীবিকার তাগিদে যারা শহরে বাস করেন, তাদের একদল ফিরে গেছেন গ্রামে। বাকিরা লড়ছেন এখনো এই শহরে। স্রেফ টিকে থাকার সংগ্রাম। জিডিপি, ঊর্ধ্বমুখী ইমারত, বড় বড় ওভারব্রিজ, মেট্রোরেল যে জীবনমানের প্রকৃত নির্দেশক নয় তা এখন আরও খোলাসা হয়ে গেছে। ভোগবাদী এই সমাজে মধ্যবিত্ত প্রায় সবসময়ই বিপদে। চিরকালীন মধ্যবিত্তের জীবনটা সবসময়ই কঠিন। বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় যেভাবে বেড়েছে সেভাবে তাদের মানিব্যাগ বড় হয়নি। পরিবারের সদস্যদের চাওয়া পাওয়ার অনেক কিছুই পূরণ হয়নি।
মিডিয়া মারফত আমরা জানতে পারছি, ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অনেকেই বাসা ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছেন। লকডাউনের প্রথম এক দুই মাস টেনেটুনে বাসা ভাড়া আদায় করতে পারলেও আশানুরূপ ব্যবসা বাণিজ্য না হওয়ায় কিংবা কাজ কর্ম না থাকায় অথবা কিছু ইনকাম থাকলেও পেটের ভাত জোগাড় করতে করতেই সব টাকা ফতুর। ফলে অনেকেরই দুই তিন মাসের ভাড়া বকেয়া পড়ে গেছে। নাকমুখ সব যেন বন্ধ হয়ে গেছে। আর নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। এক সময় অনেকেই অনেকটা নিরুপায় হয়েই কারও দশ বছরের আবার কারও বিশ বছরের আপন কিংবা অনেকের কাছে আরও বেশিদিনের প্রিয় শহর ছেড়ে চোখের জলে বিদায় নিচ্ছেন।
আফসোস হয়, করোনার এই দুঃসময়ে অল্প ক’জন ঘরমালিক ছাড়া বাকিরা মধ্যবিত্তের সহায়তায় এগিয়ে আসেননি। কেউ কেউ চোখের জলমাখা কষ্টের টাকায় ঘরভাড়া দিলেও মালিকের যেন এতে কিছুই যায় আসে না, একটুও কনসিডার করার সুযোগ নেই। হোক সেই টাকা জাহান্নাম থেকে আনা। অথচ যারা কোটি টাকায় ঘর করে ভাড়ায় দিতে পারেন, তারা চাইলেই দুই মাস বা একমাস কিংবা আধা মাসের ভাড়া মাফ করেও দিতে পারেন। কথায় আছে, “কাফনের পকেট নেই “। তাই টাকা কবরে নিয়ে যাবার সুযোগ নেই । তবে, মধ্যবিত্তের সহায়তায় এগিয়ে আসলে কবরে তার প্রতিদান পাবার কথা কুরআন- হাদিস নিশ্চিত করেছে।
আসুন, আমরা মধ্যবিত্তের টিকে থাকার লড়াইয়ে শামিল হই।