আতিকুর রহমান রিয়াজ
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি
=================
মোহাম্মদ আমজাদ হোসন তিনি একজন মহৎ মানুষ..পেশায় একজন শিক্ষক…
তিনি একজন মেধাবি ও আদর্শ মানুষ..
বর্তমানে তিনি নিজ চেষ্টা লিখছেন সুন্দর সুন্দর কবিতা..তার ফেইসবুক আইডিতে দেখা যায় তার লিখা বেশ কবিতা..তার মধ্যে কিছু কবিতা হলো:-
১/ “প্রিয় চট্টগ্রাম”
আমজাদ হোসেন
কেমন আছো তুমি প্রিয় , জানি ভালো নেই তুমি ..!
তোমার সবুজ বুকে যে আজ ভীষণ শ্বাসকষ্ট
অার্তনাদের জলে তোমার চোখজোড়া আজ অস্পষ্ট,
তোমার শহরের মোড়ে মোড়ে স্বজনহারা জীবন্ত লাশ
ছুটোছুটি করে ফিরছে নিয়ে বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস,
হাসপাতালের করিডোরে অসহায় পিতার কোলে
নিষ্পাপ শিশুর নিথর দেহখানি অভিমানে গেছে ঝুলে,
এতটুকু প্রাণবায়ুর অভাবে হুইলচেয়ারে লড়ে প্রাণপণ
কন্যার চোখের সামনেই পিতার অসহায় আত্মসমর্পণ,
সামান্যতম শুশ্রূষার চরম অভাবে গর্ভধারিণী কত মা
ছেড়ে দিয়ে হাল পরলোকে নাম দিয়েছে জমা,
সুযোগসন্ধানী চিকিৎসা সন্ত্রাসীদের ঘৃণ্য ছোবলে
নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর কোলে তুমি পড়ছো ঢলে,
বিবেকহীন সন্ত্রাসীদের কাছে তুমি পারো নাহ হারতে
তুমি সতেজ হবে আবার সোনার ছেলেদের ছোঁয়াতে,
তোমার সুস্থ নিঃশ্বাসের উষ্ণতায় পুড়বে পাপের রাজ্য
কেটে যাবে ঘোর অমানিশার এই কৃত্তিম নৈরাজ্য…
——————————-
২/ “ফেরা”
আমজাদ হোসেন
যদি অস্তগামী সূর্য চিরতরে মাটির গর্ভে না হারায়,
যদি গ্রহণলাগা চাঁদখানা চির-তিমিরাচ্ছন্ন হয়ে না পড়ে,
যদি উন্মুক্ত গগন গভীর অন্ধকারে ঢেকে না যায়,
যদি নিভে না যায় আশার প্রদীপ প্রলয় পবনে,
যদি ভরা তরী অকুল পাথারে ভেসে না যায়,
যদি থেমে না যায় ভালোবাসার
বেচাকেনা মায়ার হাটে,
যদি চেনা সেই হাটের চিরচেনা
বনিকেরা উদ্ভাস্তু হয়ে না যায়,
যদি পরম যত্নে গড়া বাগিচার
সৌরভ ছড়ানো পুষ্পরা না যায় ঝরে,
যদি মায়ার মৌচাকে ভীড় জমানো
মৌমাছিরা পথ না হারায় অবেলায় ,
যদি আজন্ম লালিত মৌচাক মুখ থুবড়ে না পড়ে,
তবে আমি ফিরবো আবার… পুরনো সে হাটে,
নতুনরুপে জড়াতে গভীর মমতার বাঁধনে,
আমি ফিরবো…..!!!
মায়ামাখা আলোছায়াময় সেই বারান্দায়,
আমি ফিরবো বিলিয়ে দিয়ে সবটুকু মায়া
নিঃস্ব হতে আবার…!!!
—————————————
৩/ “খোঁজ”
আমজাদ হোসেন
এসেছে পবিত্র রমজান,
সিয়াম সাধনায় মগ্ন ধর্মপ্রাণ মুসলমান,
সেহেরি ইফতারে হচ্ছে প্রতিনিয়ত
নানারকম বাহারি আয়োজন,
শতরকম আইটেম দিয়ে আমরা
করছি রোজ তা ভোজন,
সুযোগ পেলেই লেপ্টে দিচ্ছি
সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি প্রত্যেকটার,
খোঁজ কি রেখেছি আমরা আমার
অসহায় অভুক্ত প্রতিবেশীটার..!
কিংবা কোন এক কলেজের প্রবেশমুখে
শুকনো চোখে তাকিয়ে থাকা
বার্ধক্যে জর্জরিত সেই বুড়ি মা-টার..!!
হয়তো খোঁজ রাখিনি আমি
হয়তো রাখেনি আমাদের কেউ,
হয়তো তাদের কষ্ট বেমালুম ভুলিয়েছে
আমাদের নিত্যকার বাহারি আয়োজনের ঢেউ…!!
———————————–
৪/ “হে মানব”
আমজাদ হোসেন
হে মানব!!!
কখনো কি করেছ অনুভব
তোমার আবর্জনায় নিজের রঙ
হারানো সেই স্রোতস্বিনী নদীটির কান্না..!!
শুনেছ কি সবুজ পাতাটির নীরব অার্তনাদ,
যে তোমায় প্রানবায়ু বিলিয়েছে
তোমার দূষণের আস্তরণে নিজেকে হারিয়েছে..!
দেখেছ কি ঘরহারা পাখিটির বোবা অশ্রু
ধ্বংস করেছ যার ছায়াময় আবাস
সাজাতে তুমি তোমার কৃত্রিম নিবাস…!
কখনো কি করেছ উপলব্ধি
তোমার ছুড়ে ফেলা প্লাস্টিক নিয়ে পাকস্থলীতে
সেই নীল তিমিটি ছটফট করেছে কতটা অস্বস্তিতে..!
তুমি, হ্যা তুমিই দায়ী শুধুমাত্র
বিবর্ণ করেছ তাদের বর্ণালী বৈচিত্র
আজ দেখো……..
ওরা কেমন ফিরে পেতে
শুরু করেছে তাদের স্বাভাবিকতা
দিয়ে তোমায় উপহার অস্বাভাবিক মরণ বার্তা…!!
……………………………………………
৫/ “দ্বিধা”
আমজাদ হোসেন
কখনো ভাবিনি এমনও আসবে দিন
মুক্ত আকাশের নিচেও থাকব পরাধীন,
কখনো ভাবিনি এমনও হবে অবসর
অবসর থেকে মুক্তির গুনতে হবে প্রহর,
কখনো ভাবিনি এমন ও আসবে রাত
যেই রাতের হবে না কোন প্রভাত,
কখনো ভাবিনি এভাবে জমবে মেঘের দল
যেই মেঘে বৃষ্টি নয়, ঝড়বে শুধু অশ্রুজল,
কখনো ভাবিনি এমনও হবে বিদায়
বাঁচতে হবে আবার দেখা হবে কি না সেই দ্বিধায়
—————————
৬/ “চুপসানো শহর”
আমজাদ হোসেন
আজ কোলাহলপূর্ণ এই শহরটা
কেমন জানি চুপসে গেছে,
নেমে এসেছে সকরুণ নীরবতা
এই মানব শহরের বুকে,
কিসের যেন এক দীর্ঘশ্বাস
করেই চলেছে গভীর সর্বনাশ ,
সর্বনাশের বিষাক্ত থাবায়
শহরটা ডুবেছে চরম এক নিস্তব্ধতায়…!
——————————
৭/ “চাপা কান্না”
আমজাদ হোসেন
শুনতে কি পাও স্বজন হারানো
শূন্য হৃদয়ের সেই চাপা কান্না..!!
পড়ে থাকা নিথর দেহের কাছে
যাওয়া-ও যে তাদের মানা….!!!
ফিরে আর কখনো আসবে নাহ জেনেও,
তাকে শেষবার ছুঁয়ে দেখা হবে নাহ….!!!!
ভোরের শিশিরের মতো ধীরেধীরেন মলিন হয়ে যাবে
তার পরে থাকা শেষ স্মৃতিটা-ও
হয়তো কখনো প্রিয়জনেরা খুঁজে পাবে নাহহ
তার জরাজীর্ণ কবরটা-ও…!!!!