
উৎপল বড়ুয়া, সিলেট প্রতিনিধি
মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছেই। তবুও সচেতন নগরীর শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। নগরীর হাট-বাজারে দেখা যাচ্ছে পুরনো চিত্র। ভিড় সেই আগের মতোই। সকাল থেকে বিকেল অবধি ভিড় করছেন শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। কাজে কিংবা অকাজেও হাট-বাজারে ঘুরাফেরা করছেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও। করোনার স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অনেকটাই উদাসীন তারা। এ কারণে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
স্পট সোবহানীঘাট সব্জি বাজার ঃ রোববার সকাল ৮টা। বাজারে পাইকারের পাশাপাশি খুচরা দোকানীদের ভিড়, আছেন পিকআপ-ভ্যান-হাতাগাড়ি চালক। কিন্তু তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। নেই স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণও। তাদের মধ্যে শতকরা ৯৫ জনের মুখে দেখা মেলেনি মাস্কের। অনেক দোকানী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাজারে সামাজিক দূরত্ব মানেন না কেউই। আর মাস্ক বা স্যানিটাইজার ব্যবহার তো অনেক দূর।
বাজারের শ্রমিকরা জানান, কাজের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার করা অস্বস্তি। তাই, তারা কাজের সময় (মাল বহন) করার সময় তারা মাস্ক ব্যবহার করেন না। একই অবস্থা খুচরা দোকানের জন্য মাল কিনতে আসা ব্যবসায়ী ও চালকদের মধ্যে।
স্পট কালিঘাট ঃ রোববার বেলা ১১টা। কালিঘাটের পেঁয়াজ বাজারে দেখা গেলো মানুষের ভিড়। বেশিরভাগ মানুষই দোকানদারীর পাশাপাশি আড্ডায় মত্ত। তাদের সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। নেই স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণও। দিনের বেলায় যেমন, তেমনি রাতের চিত্র। রাতে ট্রাক বোঝাই মালামাল নামাতে ব্যস্ত থাকে শ্রমিকরা। এসময় অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করেন না। আর রাতে চা স্টল গুলোতেও আড্ডা জমে বেশ। তা চলে ভোর পর্যন্ত। এই চিত্র সোবহানীঘাট সব্জি বাজারেও।
স্পট বন্দরবাজারের লালবাজার ঃ দুপুর ১২টা, প্রচন্ড ভিড়। ক্রেতাদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার থাকলেও বিক্রেতাদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার কম দেখা যায়। আর বাজারে সামাজিক দূরত্ব বলতে কিছু দেখা যায়নি। একই চিত্র জালালবাজারেও।
কালিঘাটের ব্যবসায়ী শরীফ হোসেন জানান, ক্রেতাদের মাস্ক না থাকলে আমি তাদের কাছে কোন মাল (পেঁয়াজ, রসুন, আদা, শুকনো মরিচ) বিক্রি করি না। আবার অনেক ক্রেতা মাস্ক পড়লেও সামাজিক দূরত্ব মানতেই চান না। তাদের মধ্যে অসচেতনতাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে করোনা ছড়াচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
একজন সচেতন নাগরিক ও ব্যবসায়ী সৈয়দ মুহিবুর রহমান জানান, যখন লকডাউন ছিল, তখনও কালিঘাট বাজারে মানুষের ভিড় ছিল। তখনও ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা দেখা যায়নি। তারা স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কাই করছেন না। এতে সংক্রমণ ঝুঁকি অনেক বাড়ছে।
মহাজনপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া জানান, ‘যতদিন যাচ্ছে সিলেটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শহর ছাড়িয়ে উপজেলাগুলোতেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ সদস্যও আছেন। এরপরেও মানুষ অবাধে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সিএনজি-লেগুনা-টমটমে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনও করা হচ্ছে। এতে করে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছেই।’
শুধু কালিঘাট ও সোবহানীঘাট সব্জি বাজার নয়। নগরীর কাজিরবাজার মাছের আড়ৎ, রিকাবিবাজার, আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, তেররতন, মাছিমপুরস্থ বেটিবাজার ছাড়াও দক্ষিণ সুরমার ফলের আড়ৎ, কদমতলী বাজার, স্টেশন রোড সব জায়গাতেই একই চিত্র দেখা যায়। জানা গেছে, সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার দশদিন পর গত ৫ এপ্রিল সিলেট জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর শম্ভুক গতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অবশ্য ৫৬ দিনের মাথায় এই জেলায় আক্রান্ত হন ৫শ জন। গতকাল রোববার আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৭ শ ছাড়িয়েছে। বাড়ছে মৃত্যুও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত ঈদের আগে শপিংমল খুলে দেয়ার দিন থেকেই সিলেটের হাট-বাজারে বাড়তে থাকে জনসাধারণের ভিড়। ঝুঁকি নিয়েই অনেকে ছুটতে থাকেন বাজারে। আবার ঈদের ছুটি পেয়ে অন্য জেলা থেকে অনেকেই সিলেটে প্রবেশ করেন। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যাও। জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায়ও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগী।
আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বিস্তারের কারণে সিলেট জেলাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবুও নগরীর হাট-বাজার এলাকায় মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা খুবই কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না- তা নিশ্চিতে জেলা জুড়ে অভিযান শুরু করে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা এড়িয়ে চলা সম্ভব। কিন্তু সিলেটে মানুষ তা মানছে না। বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক ছাড়া বাহিরে চলাফেরা করেন। সামাজিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না। এ কারণে সিলেটে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।’ তিনি আরো বলেন, দোকানী যাদের মাস্ক নাই তাদের থেকে ক্রেতা সাধারণ যাতে কোন পন্য না কিনেন তা হলে দোকানীরাও মাস্ক ব্যবহার করা শুরু করবেন বলে মন্তব্য করেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৬৮ জন। আর মারা গেছেন ৪৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৪২ জন।