
উৎপল বড়ুয়া, সিলেট প্রতিনিধি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) আবাসিক হলের সংকট থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্যাম্পাসের বাহিরে বাসা ভাড়া নিয়ে আবাসিক ছাত্রী হোস্টেল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই হোস্টেলগুলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পরিচালনা করা হয়। এখানে প্রতি সিটের জন্য আবাসিক ছাত্রীদের ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০ টাকা দিতে হয়। এদিকে করোনাকালে গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে ক্যাম্পাস ছুটি থাকায় এবং করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পরিবারের কথা বিবেচনা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভাড়া মওকুফে দাবি করে আসছেন। কিন্তু গত এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ১ হাজার টাকা করে মোট ৫ হাজার টাকা ভাড়া আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে জমা দেবার জন্য শিক্ষার্থীদের ম্যাসেজ দিয়েছেন বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হল কর্তৃপক্ষ। এখানে প্রায় ৪০ শতাংশ ভাড়া কমালেও একসাথে এতো টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে ছাত্রীরা। মহামারীর এই সময়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে থাকা শিক্ষার্থীদের অনেক পরিবারের আয় এখন বন্ধ। অনেকেই টিউশনি করিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতো, এ সুযোগ এখন নেই। একসঙ্গে এতো টাকা পরিশোধ তাদের জন্য যেন অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি করেছে। সমকালের সঙ্গে কথা বলার সময় হোস্টেল ভাড়া পরিশোধ নিয়ে তেমনই অসহায়ত্বের চিত্র তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আসমানী (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, আমার বাবা অসুস্থ গত ১ বছর ধরে। বড়ভাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এবং পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করিয়ে আমাকে এবং বাড়িতে কিছু টাকা পাঠাতো। কিন্তু করোনার মাঝে আমরা সবাই বাড়িতে। এখন পাঁচ সদস্যের এই পরিবার থেকে ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা আমার জন্য কষ্টের। আসমানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাড়া নিয়ে তৈরি ছাত্রী হোস্টেলে থাকে। এ চিত্র আসমানীর মতো হোস্টেলে থাকা অনেকেরই। জানা যায়, শাবির মোট শিক্ষার্থী ৮৬৫২ জন। এই শিক্ষার্থীদের বিপরীতে ছেলেদের তিনটি এবং মেয়েদের দুটি আবাসিক হল রয়েছে। যেখানে ছাত্রীদের দুটি হলে প্রায় ১ হাজার ছাত্রী থাকতে পারেন। এজন্য ছাত্রীদের বছরে প্রায় ১ হাজার ৭০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। হলে সিট পায় না এমন ছাত্রীরা হোস্টেলে থাকে। সেখানে মাসিক প্রায় ১ হাজার ৭০০ টাকা ভাড়া দিতে হয় প্রত্যেকে। করোনার এই সময়ে বিগত পাঁচ মাসের ভাড়া না নিলেও এখন প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে ভাড়া পরিশোধের ম্যাসেজ দিয়েছেন হল কর্তৃপক্ষ বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হল কর্তৃপক্ষ। এই হলের অধীনে বাহিরে তিনটি ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে। সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট সহকারী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজা বলেন, মোবাইল ম্যাসেজে জানানোর বিষয়ে আমার কোন নির্দেশনা ছিলো না। কিন্তু, আমাদের ভাড়া বাসার মালিকেরা ভাড়ার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় ছাত্রীদের যার পক্ষে যতটা সম্ভব ভাড়া পরিশোধ করে দেয় তাহলে তাদেরও ভাড়ার চাপ কমবে এবং আমাদেরও কিছুটা চাপ কমবে। এবিষয়ে শাবি উপচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, সবার সমস্যা হবে এমন না। যে দিতে পারবে সে দিবে। যার সমস্যা আছে সে যেন প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলে তার সমস্যা নিয়ে।