
রতন বড়ুয়া
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশ সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে প্রশংশিত হয়েছেন । সম্প্রতি একান্ত আলাপে যোগদানের দুবছর পুর্তিতে মাদক সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন । মূলত চারটি চ্যালেঞ্জের কাজ দিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই তাকে চট্টগ্রামে রেঞ্জের ডিআইজি পদে নিয়োগ প্রদান করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই চট্টগ্রাম বিভাগের পুলিশ প্রশাসনকে তিনি ঢেলে সাজানোর জন্য নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সে সময় দায়িত্ব গ্রহণের তার প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল চট্টগ্রাম বিভাগের ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের সকল সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাথে নিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে কোন রকম বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই তিনি এ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।
নির্বাচনের পরে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ছিল তার চট্টগ্রাম বিভাগের সকল পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও সততা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা। প্রতিটি থানায় গিয়ে তিনি থানার পুলিশ কনস্টেবল এ এস আই এসআই ওসি এএসপি এসপিদের সাথে মিটিং করেন এবং তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেন এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করেন। তিনি থানাকে জনগণের আস্থার মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। থানায় গিয়ে সাধারণ জনগণ যেন মামলা জিদ্দি ডায়েরী করার ক্ষেত্রে কোনোরকম হয়রানি না জনমত জরিপের ভিত্তিতে পুলিশের সহায়তা পায় এজন্য বিট পুলিশিং সেবা চালু করেন। কোন পুলিশ সদস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি কোন ধরনের অভিযোগ জনগণ করলে তা তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশসহ জনগণক ও পুলিশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করার জন্য নানামুখী কর্মসূচি তিনি গ্রহণ করেন। তৃতীয় কাজ ছিল বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগকে মাদক নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ করা। বিশেষ করে বৃহত্তর চট্টগ্রামের কক্সবাজার কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক পাচার চোরাচালান সরবরাহ প্রচুর আনাগোনা ছিল ওপেন সোর্স। দেশের বড় বড় মাফিয়া ডনরা নানা কৌশলে মাদক পাচার বিক্রয় সরবরাহ কাজে সর্বদা লিপ্ত ছিল। তিনি চোরা কারবারীদের নামের তালিকা করে তাদেরকে নানান জায়গায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখীন করার এবং এর পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে অনেক চোরাকারবারী ক্রসফায়ারে নিহত হন। এভাবে মাদক চোরাচালান কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি।
এছাড়াও কক্সবাজার জেলায় উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে ১২লাখ রোহিঙ্গা জীবনমান রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। দু’বছরের দায়িত্বগ্রহণের বিচক্ষণতার সাথে তিনি নানা উদ্যোগ নেওয়া সকল ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছেন বলে অভিমত প্রকাশ করেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিশেষ দায়িত্ব হিসেবে এ করোনা কালে ডাক্তারদের পড়ে দ্বিতীয় সম্মুখ সাড়ির যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন বাংলাদেশ পুলিশ চট্টগ্রাম রেঞ্জ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জের এই করোনা কালে বিশেষ করে লকডাউন সময়ে মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া গরীব অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী ব্যবস্থা করা সমাজের অবহেলিত শ্রেণি হিজড়া বেদে সম্প্রদায় মানুষের জন্য খাবার সুনিশ্চিত করা সহ নানা কাজে দায়িত্বপালনকালে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১৬শত পুলিশ করোনা আক্রান্ত হয়েছে এবং দুইজন পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করেছে। এক্ষেত্রে সকল জেলা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসনের সকল সদস্যদের সফল ব্যবস্থাপনায় সঠিক পদক্ষেপের কারণে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে সম্ভব হয়েছে বলে তিনি জানান।