
অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে বাঁশখালী কমল স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আজিম বহিষ্কার
নিউজ ডেস্কঃ
অর্থ কেলেঙ্কারির দায়ে বাঁশখালী কমল স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ওসমান গনি মোজাহিদ, শওকতুল ইসলাম ও নূরুল মোস্তাফা সিকদারের যৌথ স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ বহিষ্কার আদেশ জারি করেন।
বৈশ্বিক মহামারি (কভিট-১৯) করোনা ভাইরাসের চলমান সংকটকে পুজি করে বাঁশখালী কমল স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন সংগঠনের পদ ব্যাবহার করে দেশে এবং দেশের বাইরে সংগঠনের শুভাকাঙ্খীদের নিকট ত্রাণ বিতরণের নামে অর্থ কালেকশন করে। আর সেই কালেকশনকৃত অর্থ সংগঠনের ফান্ডে জমা না করে সকলের অগুচরে নিজেই আত্মসাত করে নেয়। পরে বিষয়টি জানানি হলে সভাপতির যোগসূত্রে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ওসমান গনি মুজাহিদ বারবার সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিনকে সশরীরে মিটিংএ উপস্থিত হয়ে বিষয়টি মিমাংসা করার তাগাদা দিলেও নানা অজুহাতে সে মিটিং প্রত্যাখান করে।
সর্বশেষ বিশেষ ক্ষমতা বলে গত ২৬ জুন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ওসমান গনি মোজাহিদের সভাপতিত্বে উপজেলার নাহার কমিউনিটি সেন্টার মিলনায়তনে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আজিম উদ্দিন সশরীরে উপস্থিত হয়ে কালেকশনকৃত অর্থের হিসাব প্রদান করতে ব্যার্থ হওয়ায় উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে আজিমকে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, সংগঠন বিরোধী কার্য-কলাপে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সভার আলোকে গত ২৮ জুন সাবেক তিন নির্বাচন কমিশনারের যৌথ স্বাক্ষরের এক বিবৃতিতে বহিষ্কারাদেশ কার্যকর করেন।
উল্লেখ্য, বাঁশখালী কমল স্মৃতি সংসদ ২০১৬ সালের ১৬ জুন ওসমান গনি মুজাহিদ, বেলাল মাহমুদ, নুরুল মোস্তফা সিকদার, সমাজের গঠনমূলক চিন্তা চেতনা নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই প্রতিষ্ঠাকাল হতে দেশের ক্লান্তিলগ্নে সমসাময়ীক নানান কার্যক্রম সফলতার সহিত বাস্তবায়ন করে আসছে সংগঠনটি। তাতে বেশ সুনামও অর্জন করেছে বটে। গেলো বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ঝাঁকঝমকপূর্ন অনাড়ম্বর পরিবেশে প্রথম বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন পরিচালনা করেন তৎকালিন সময়ের নির্বাচন কমিশনার ওসমান গণি মোজাহিদ, শওকতুল ইসলাম ও নুরুল মোস্তফা সিকদার। সেই নির্বাচনে উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের ৪২ জন কাউন্সিলর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট প্রয়োগের সুযোগ পায়। নির্বাচনে জালাল উদ্দিন সভাপতি ও আজিম উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়।
নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ আরো পাঁচ ও সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে সাত সদস্যের কেবিনেট গঠন করে সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জুন সাধারণ সম্পাদক আজিমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, সংগঠন বিরোধী কার্য-কলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে সেই কেবিনেটের ৭ সদস্যের মধ্যে সভাপতি ব্যাতিত ৫ সদস্যই পদত্যাগ করেন। এতে করে উন্মোচন হয় আজিমের দুর্নীতির সাতকাহন। জানাযায়, দুর্নীতি, সংগঠন বিরোধী কার্য-কলাপে লিপ্ত থাকা আজিম উদ্দিন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী অনুসারী পৌর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্মসম্পাদক।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ওসমান গনি মুজাহিদ বলেন, বাঁশখালী কমল স্মৃতি সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আমরা অনেক ত্যাগ শিকার করেছি। আর সেই ত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের পদ-পদবী এবং ব্যানার ব্যাবহার করে নিরবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবে তা কোন অবস্থাতে সহ্য করা হবে না। আমরা আজিমের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ পেয়েছি। এবং তা প্রমানিত হয়েছে। তাই তাকে বিশেষ ক্ষমতা বলে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক বেলাল মাহমুদ বলেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আজিম ত্রানের নামে আমাদের সংগঠনের বিভিন্ন শুভাকাঙ্খীদের নিকট হতে অর্থ কালেকশন করেছে। কিন্তু সে অর্থ সংগঠনের ফান্ডে জমা না করে নিজেই আত্মসাত করেছে। শুধু তাই নয় আমাদের সংগঠনের বিভিন্ন সম্মানিত সদস্যের সাথে বেয়াদবীও করেছে। তার বিরুদ্ধে সুনিদৃষ্ট আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংগঠনের বিশেষ জরুরী সভায় আজিমকে সর্বসম্মতিক্রমে বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে কমল স্মৃতি সংসদের সাবেক নির্বাচন কমিশনার নুরুল মোস্তফা সিকদার বলেন, পূর্ব নির্ধারিত সভায় সকল সদস্যদের সর্ব সম্মতিক্রমে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, সংগঠন বিরোধী কার্য-কলাপে লিপ্ত থাকার অভিযোগে সংগঠনের সাংগঠনিক পদ সাধারণ সম্পাদক ও সাধারণ সদস্য পদ হতে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাত সদস্য বিশিষ্ট কার্য-নির্বাহী কমিটির পাঁচ সদস্য আজিম উদ্দীনের আর্থিক কেলেঙ্কারী ও সভাপতির নিরবতায় যোগসূত্রের অভিযোগে ক্ষিপ্ত হয়ে সিনিয়র সহ-সভাপতি বেলাল মাহমুদ, সহ-সভাপতি সৈয়দ নুরুল আবচার, সাংগঠনিক সম্পাদক হেফাজ উদ্দীন চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আনিসুজ্জামান, যুগ্ম সম্পাদক নুর উদ্দীন পূর্বেই পদত্যাগ করেন। কার্য-নির্বাহী কমিটির সাত জনের মধ্যে পাঁচজন পদত্যাগ করায় সংগঠনের অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়। এ অচল অবস্থায় সংকট নিরসনে আমরা বিশেষ ক্ষমতা বলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে সভাপতির অভিমত জানতে সংগঠনের সভাপতি জালাল উদ্দিনের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও সংযোগ মিলেনি।