আতিকুর রহমান রিয়াজ
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি
নিম্নে তার লিখা কিছু কবিতা
“বিষবৃক্ষ”
রহিমা আক্তার ফারজানা
চোখে মুখে শয়তানি
ঠোঁটেতে ক্রূর হাঁসি
ভাবখানি করেছে বিশ্বজয়!!
আদ্যপ্রান্ত দেখে
হারাম গেলে ঠেসেঠেসে
সব কাজেই নয়ছয়
মুখে মুখে স্বাধীনতা
চেয়ে দেখি অধীনতা
মিথ্যার বুলি শুধু কপচায়
নজরেতে রামমূলো
ঝুলে আছে তুলো তুলো!!
মানবতা হেথা খালি ভেংচায়
কেউতো সুখে আছে বাকীরা যদি যায় বুঝে
বোকাদের তাই ওরা ধমকায়
কেনাবেচা হয় নাকি সরলতা আর ভন্ডামি
ঈমানটা বিকোয় সস্তায়
ধুন্ধুমার নেশাখোর
কিযে বলে হড়বড়
ফুল বাবু সেজে পরে কোট-টাই
দিনমান যুঝি আমি কোথায় যে গিয়ে থামি
কি করে বাঁচাবো পিঠ টাই!!
হু হু করে দাম বাড়ে পেঁয়াজ তেলে ভাটা পরে
সাধারণে শুধু ভয় পায়
ব্যাংকে নাই অর্থ তবু আছ শর্ত
শেষ পুঁজিটাও বুঝি যায় যায়
কাঠামো পর কাঠামো উন্নয়নে ঠাসানো
মুখে তবু কেন হাসি নয়?
খেতে খেতে সবি খেলো এবার তো দম ফেলো
দেশটা কি তোমার ও নয়??
“শুদ্ধশৃঙ্গ”
রহিমা আক্তার ফারজানা
ইট পাথরের এই জীবনটাতে
চলছে কেমন চরকা ঘর
ক্ষণিক মোহ ক্ষণিক আবেগ
কেউবা আপন কেউবা পর।
বৃষ্টি শেষে রৌদ্র উঠে
অশ্রু শেষে হাসি
রাত্রি শেষে প্রভাত নামায়
আলো রাশি রাশি।
মন্দ শেষে দ্বন্দ্ব ঘটায়
নির্বিশেষে ঝড়ায় প্রাণ
ভালো কাজের প্রভাব ধীরে
সৎ পথিকের নাড়ির টান।
লোভ লালসা বাড়ায় শুধু
এই দুনিয়ায় মায়ার টান
ঘৃণ্য কাজে আফসোস নাহি
যায় চলে যাক আপন জান!
শাখের করাত এই দুনিয়া
রঙ্গমঞ্চ মেকি সাজায়
সর্প হইয়া দংশন করে
নাটক কইরা ঝারে ওঝায়!
আত্মার বাঁধনে জড়াইয়া কেউ
পুত্র শোকে হয় কাতর
ক্রোধে অপমানে কেউ বা আবার
আগুন পুষে বুকের ভিতর!
মৃত্যু মিছিল ডাক দিয়ে যায়
সময় আর নেই তো বাকি
যা পারি তা দু’হাতে নেই
ভাবখানা যে দিব ফাঁকি!!
অলস দুপুর বিকেল গড়ায়
কাটছে সময় হেলায় ফেলায়
জিতবো নাকি হারবো আমি
এই জীবনের শেষের খেলায়।
“তাহজিব”
রহিমা আক্তার ফারজানা
কতকাল আর জাগিয়া থাকিয়া
তিমির রাত্রি করিব পার
তাহাজ্জুদে কপোল ভাসাইবো
এমনি কি বার বার?
কতকাল আর বুকেতে পাষাণ বাঁধিয়া
চাহিয়া রহিব উজান পার
নব জীবনের গাহিবে কে গান
জাগাইবে সাহস বারংবার!
কখন আসিবে তাবাসসুম মুখে
তাকবির দিয়ে বুকেতে বল
সিজদায় লুটাইয়া শুকরিয়া করিব
চোখেতে লইয়া অশ্রু জল?
কারণে অকারণে মরিতেছে ঝাঁকে
বাঁচিয়া থাকাই কেবলি উপহাস?
রক্তস্নাত অট্টহাসিতে তারা
করিতেছে কেমন জয়োল্লাস?
মানুষ রূপী অসুরের দল
জীবন নিয়ে করিসনে ছল
মাহদী আসিলে ভাঙ্গিবে তোদের
তুরুপের তাসের বাহুবল।
তুষের আগুন বুকেতে লইয়া
তিলে তিলে দিন করেছি পার
তমসা রাত্রি অপসারিত হয়ে
আসিবে শীঘ্রই নব প্রভাতের কিরণ দ্বার।
আমি কিছু জানি নে
রহিমা আক্তার ফারজানা
আমি বাপু নিরামিষী, তেমন কিছু খাইনে
সুযোগ পেলে নন ভেজ কখনোই ছাড়িনে
আমি বাপু হক কথা সামনেই বলে দেই
পিছনেতে নিন্দাই আমার কোন জুড়ি নেই
আমি বাপু গ্যাঞ্জামের ধারে কাছেই ঘেষিনে
আগুন উসকে দিয়ে নিরাপদে থাকিনে
আমি বাপু কটু কথা কাউকে যে বলিনি
লোকে তাও বলে আমি নাকি অন্তরটিপুনি
আমি বাপু সুদ নিয়ে নাড়া চাড়া করিনে
সুদি মহাজন হয়েও তকমাটি রাখিনে
এক কথার মানুষ হয়ে থাকি বারোমাস
কলমের খোঁচা দিয়ে করি সব গ্রাস
কেতাদুরস্ত ফিটফাট হয়ে থাকা মোর স্বভাব
জিলাপির প্যাঁচে নাকি আমি লাজবাব
চোখের চামড়া নিয়ে আমি বাপু ধার ধারিনে
কথায় চিড়া না ভিজলে কল কাঠি অত নাড়িনে
ধর্মকর্ম নিয়ে আছি বাপু আমি মহাসুখে
কারো পাকা ধানে মই দিব আমি কোন দুঃখে
কে কি করিল না মরিল আমি নাহি যাচি
নাক না গলালে আবার আমি নাহি বাঁচি
কংস মামা বলে মোরে পাড়া প্রতিবেশী
ঝাঁকের কই যাই বলুক আমি তাতে খুশি
“এমন কেন হলো”
রহিমা আক্তার ফারজানা
ফেইক নাকি সকলি হালের এই জমানায়
সত্যি না ভাবলে আমার ভাই কি দায়!
কি আছে কি নেই সেই টা বড় নয়
লোকে কি জানছে সেইটাই বড় হয়
চকচক করিলেই সোনা হয় না
এই কথাটি আজ কারো মনে রয় না
রং চং মেখে কেউ মিথ্যার পসরা সাজায়
অতি উৎসাহী অনেকেই তাতে ভড়কায়
দিশেহারা হয়ে তাই লোকে দেয় ঝাঁপ
সব হারিয়ে শেষে বলে বাপ রে বাপ
বন্ধুত্ব, ভালবাসা হয়ে গেল ফেইক আর জাল
স্বার্থসিদ্ধির পরে কেটে রাখে বড় একখান খাল
লাইক আর ফলোয়ারস এর সংখ্যাই সব নয়
পরিবারের আপন গুলোয় সব থেকে দূরে রয়
মিটিং এ মিছিলে যেন নারীর অধিকার উপচায়
নারীরাই নারীদের সবচেয়ে বেশি পিন্ডি চটকায়
যৌতুক ভাল নয়, যৌতুক হেন নয়, তেন নয়;
খোঁজ নিয়ে দেখ তারাই যৌতুক বেশি লয়
উপদেশ নীতি কথা যারা বেশি কপচায়
কুৎসিত মিথ্যার সাথে তারাই শয্যা সাজায়
জনগণের বন্ধু বলে যারা বেশি সোচ্চার
গভীরে গিয়ে দেখ তাদের চেহারা কি কদাকার!
ফেইকের দুনিয়ায় সবাই কেমন ডুবে যায়
সত্যটা আজ তাই বেমানান আর অসহায়।
“ছদ্মবেশ’
রহিমা আক্তার ফারজানা
শয়তানরে বলি কেন রে বাছা
বাংলা ছাড়ি যাও কেন তুমি চলে?
তবে কি বাংলার মানুষ যোগ দিয়েছে
সব সাধু সন্ন্যাসীর দলে?
শয়তান বলে কস্মিনকালেও
ভাবিবেন না আমি শেষ
বাঙ্গালীর কাছে হার মানিয়া
আমি যাইবো নিরুদ্দেশ
দুঃখ সমেত যাইতেছি চলিয়া
আসিব না হেথা আর
জারিজুরি সব বিলীন করিয়া
লইয়াছি আরো ধার
হেথা যদি আর ক্ষণ কাল থাকি
বিষম খাইবো শেষে
মোর পেশাটি কাড়িয়া লইয়া
ওরা আজ আছে বেশ সুখে
শয়তানিতে আছে কিছু সীমা
আর আছে কিছু বোধ
ওরা জানে শুধু খুনোখুনি
বিপরীতে নিতে প্রতিশোধ
ঝড়,খরা, মহামারিতে
ওরা নয় মোটেই শঙ্কিত
উল্লাসে আরো করিতেছে চুরি
পাপে সাদা কাফন রঞ্জিত
এমন দুর্যোগে তওবা পড়িয়া
সবে চাহে যেথা আশীর্বাদ
দালাল বদমাইশ বাঙ্গালীগুলাই
মানুষের রিজিক করিতেছে বরবাদ
বেবাক দুনিয়া ত্রাহি ত্রাহি রবে
যেথা আজ দিশেহারা
এ জাতিই কেবল
চুরি,খুন,গুমে মাতোয়ারা
শয়তান হাসিয়া আরো দুইখান কথা
কহে মোর কানে কানে
বাঙ্গালী জাতিরে কুর্নিশ করি
মানি গুরু মনে প্রাণে।
বিশ্ব বেগতিক
রহিমা আক্তার ফারজানা
স্হিতি হাল সবিশেষ আজি
সাতিশয় ক্ষতি হায়
অশুভ তিথি অদম্য বাণে
কেবলি রহিয়া যায়।
দেহাংশ অবয়ব গুটাইয়া লইয়া
প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ ঠাঁই
দিনমান যেন কলির সন্ধ্যা
ইহা হইতে মুক্তি নাই।
ম্লান নিষ্প্রভ হয়ে আছে আশা
কাটে হালের দুনিয়া
সময়ের হেরা ফেরি চলিতেছে যেন
আঠারো মাসে বছর গুনিয়া।
বিত্ত বৈভব অক্ষম সবি
ক্ষমতা ও যেন তেন ক্ষীণ বল
আত্মার আত্নীয় সরিয়া গিয়াছে
ফেলেনা দু’ ফোঁটা অশ্রু জল।
সর্বভুক শিখা জ্বলিতেছে দ্বারে
অঙ্গার করিবে এই বুঝি কারে
পরিতাপ খেদ জাগিতেছে মনে!
পূর্ণ কি পেয়ালা পাপের ভারে?
আর্জি যাচনা ধোপেতো টিকেনা
যমদূত হাসিয়া যায়
পায়ভারী আর কড়ার ভিখারি
কেবলি কি অসহায়!!
উদক উদীচী খুঁজ নাকো হেথা
আপনারে কহ আজ
এতদিন তবে উচ্ছলিত রবে
পরেছিলুম কিসের তাজ?
বৃদ্ধ শিশু নর নারী আর
উঁচু নিচু ভেদাভেদ
মৃত্যু সেতো কঠোর নীরস
তীব্র প্রখরে করে সমুচ্ছেদ।
ছক্কাপাঞ্জা যতই হাকাও বাবা
যাদুর ছরি লাগিবেনা কাজে
বিধাতার ইশারায় সাধু সংহারে
প্রাপ্য যাহা ধরণীর মাঝে।
বাজারেতে একদিন
রহিমা আক্তার ফারজানা
বলি হ্যা রে জলদাশ!কেন চাস এতো দাম
অনেক তো লাভ করেছিস, এবার একটু থাম
গদগদ হয়ে তাই জলদাশ হেসে কয়
ভাইরাসে মাছ ধরি বুকেতে নিয়ে ভয়
মায়ের কৃপায় তো মাছ সব সময় পাইনে
অসময়ে দাম বেশি দিলে কমে যাবে মাইনে?
কর্তা বাবুর চেহারাটা রেগে হলো লাল টমেটো
হেঁকে কন গোটা দুই দিয়ে দে বিশ টাকা কমেতো!
থলে খানা খালি গেলে রেগে গিন্নি কথা কন্না
পাতে শেষে দিয়ে দিবে চচ্চড়ি আর ডালের বন্যা
মাছ পেয়ে খুশি হয়ে ফুরফুরে মেজাজে
হেলেদুলে চলে যান হরিপদ সবজির বাজারে
পটল আর উচ্ছে খেতে খেতে অরুচি
চৈতালি লাউ দেখে করেছি তার নিকুচি
ঝিঙ্গা আর চিচিঙ্গা দেখিলেই হাসফাস
আলু বেটা আছে ঘিরে রান্নায় বারোমাস
কানে কানে বলে যাই সবজি সব টাটকাই
হরিপদ মহাশয় দেখেশুনে বাচাবেন টাকাটাই
নিরামিষে আছি এখন মুরগীতে যাবো না
খাসির মাংসটা বাসী বলে একদমই খাবো না
করোনার বাজারে দাম চলে বেফাঁসে
তাই দেখে হরিপদ বিড়ি খান আয়েশে
দুই টাকার ধনিয়া আর পাঁচ টাকার লঙ্কা
থলে দেখে গিন্নি নির্ঘাত বাজাবেন ডঙ্কা
গিন্নিটা রেগে গেলে সাত পাঁচ বুঝাবেন
মাছ দিয়ে রান্না কিছু দিন চালাবেন
কিপটা হরিপদ করে নাকো রাখঢাক
পয়সা বাঁচিয়ে খুশিতে সে বাগ বাগ।
অতঃপর আমি এক স্কুল
রহিমা আক্তার ফারজানা
ওহে শুনছিস! কে কোথায় আছিস
সময় হলে আমার ঘন্টি একটু বাজিয়ে দিস
একটু পরে খোকাখুকুর দল
আসবে আমার বুকে করে কোলাহল
শোরগোলে উঠবে ভরে আমার এ উঠোন
পেয়ে বুঝি যাবো মোর কাঙ্ক্ষিত ক্ষণ
মাস্টার মশাইয়ের ডাস্টার আর সাদা চক খানি
হরিপদ কবেই যে রাখিয়াছে আনি
ঐ তো টেবিলের পরে সব আছে জায়গামতন
শুধু কোলাহল বিহীন নিস্তব্ধ ছন্দপতন
আপা মনি দের ঐ বসার ঘর খানি
ধুলোর স্তরে ভরে গেছে জানি
বই খাতা আছে সব থরে থরে সাজানো
নির্জীব -নিস্প্রাণ আজ হয় না তাদের জাগানো
হাই বেঞ্চ লো বেঞ্চ আছে সব ঠিকঠাক
দরজা জানালা বন্ধ আর পরিপাট
মাঝে মাঝে হরিপদ দিয়ে যায় ঝাটা
ঝরা পাতা আগাছা কিছু হয় কাটা
শুনিনা ভোরের ঐ সূরাহ আত-ত্বীন
উচ্ছ্বাসে ভরা পিটি স্যারের এক-দুই-তিন
বহুদিন শুনি না সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি
ছোট ছোট শিশুদের শপথের দৃঢ়তার হাসি
মহামারি করোনাতে ‘আমি স্কুল ‘ হয়ে আছি বন্ধ
চপলতা হীন নিঝুমপুরিতে লাগছে বধির অন্ধ
শুরু থেকেই ইট পাথরের দালান হয়ে ছিলাম বেশ
ছোট ছোট শিশুদের হাসি আনন্দ অনিঃশেষ
কোথা থেকে হঠাৎ করে কি যে হয়ে গেলো
মৃত্যু আর শংকায় সব এলোমেলো
তবু বলি ছোট বড় বাবুরা ঘরেতে নিরাপদ থেকো
আবার যে দেখা হবে তাই মনে রেখো।
শুদ্ধশৃঙ্গ
রহিমা আক্তার ফারজানা
ইট পাথরের এই জীবনটাতে
চলছে কেমন চরকা ঘর
ক্ষণিক মোহ ক্ষণিক আবেগ
কেউবা আপন কেউবা পর।
বৃষ্টি শেষে রৌদ্র উঠে
অশ্রু শেষে হাসি
রাত্রি শেষে প্রভাত নামায়
আলো রাশি রাশি।
মন্দ শেষে দ্বন্দ্ব ঘটায়
নির্বিশেষে ঝড়ায় প্রাণ
ভালো কাজের প্রভাব ধীরে
সৎ পথিকের নাড়ির টান।
লোভ লালসা বাড়ায় শুধু
এই দুনিয়ায় মায়ার টান
ঘৃণ্য কাজে আফসোস নাহি
যায় চলে যাক আপন জান!
শাখের করাত এই দুনিয়া
রঙ্গমঞ্চ মেকি সাজায়
সর্প হইয়া দংশন করে
নাটক কইরা ঝারে ওঝায়!
আত্মার বাঁধনে জড়াইয়া কেউ
পুত্র শোকে হয় কাতর
ক্রোধে অপমানে কেউ বা আবার
আগুন পুষে বুকের ভিতর!
মৃত্যু মিছিল ডাক দিয়ে যায়
সময় আর নেই তো বাকি
যা পারি তা দু’হাতে নেই
ভাবখানা যে দিব ফাঁকি!!
অলস দুপুর বিকেল গড়ায়
কাটছে সময় হেলায় ফেলায়
জিতবো নাকি হারবো আমি
এই জীবনের শেষের খেলায়।