

বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার আন্তরিক উপহার হচ্ছে “স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ”।
বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতি, বাংলাদেশকে প্রাণের চেয়ে অধিক ভালোবাসতেন সেটি
তাঁর জন্মের পর যখন তাঁর মধ্যে বুদ্ধি জাগ্রত হতে শুরু হয় সেই থেকে মৃত্যু পর্যন্ত
তাঁর কৈশোর ও রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস থেকে আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে
পারি। বঙ্গবন্ধুর তাঁর ভালোবাসার কথা পশ্চিম পাকিস্তানীদেরকে বলেছিলেন, “ফাঁসির
পর তোমরা আমার লাশটা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে”। বাঙালী জাতি, বাংলাদেশের
প্রতি বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ ভালোবাসার কথা ভাবলে আমি নিজে চিন্তা সাগরের অতল
গহŸরে তলিয়ে যাই। আমি সব সময় মনে করি খোকা, শেখ মুজিব, বাংলাদেশ,
বাঙালী জাতি, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এগুলো সব সমার্থক শব্দ। বঙ্গবন্ধু না
হলে বাংলাদেশ কখনো স্বাধীনতার সূর্য দেখতো না। অথচ কোন কোন অসাধু
রাজনীতিবিদ বলে থাকে একটি বেতার ঘোষণায় নাকি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
সেটি যখন ওরা বলে তখন আমার সত্যিই হাসি পায়। তাহলে ভারত বিভাগের পর বঙ্গবন্ধুর
তেইশ বছরের রাজনৈতিক জীবন ইতিহাসে চৌদ্দ বছর কেনো বঙ্গবন্ধু জেলে
কাটিয়েছিলেন, কেনই বা বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের জন্য টেকনাফ থেকে
তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সাড়ে সাতকোটি বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ করতে দিনরাত পরিশ্রম
করেছিলেন? একটি ঘোষণায় যদি স্বাধীন বাংলাদেশ হোত তাহলে নয় মাস কেন যুদ্ধ
করতে হলো? এইসব আজগুবি আবোল তাবোল বিকৃত ইতিহাস যখন বলে আমরা যারা
মুক্তিযুদ্ধ করেছি তখন তাদের হাসির উদ্রেক হওয়া ছাড়া আর কি হতে পারে? তখনই
ভাবি ঐ সব বাক্য উদ্মাদ পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।
বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধু। এই বাক্যটি বহু লেখক, গবেষক,
রাজনীতিবিদ প্রতিনিয়ত বলে যাচ্ছেন, লিখেও যাচ্ছেন। এই সত্য বাক্যটি
ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মাটি, মানুষ, গাছপালা, নদী, সাগর, পুকুর,
রাস্তা, ঘাট, সেতু, হাওড় প্রতিটি ধূলিকণায় বঙ্গবন্ধু মিশে আছেন। বঙ্গবন্ধুকে

২
বাদ দিয়ে যারা বাংলাদেশ ভাবে, তারা শুধু বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে না, বাংলাদেশকেও
তারা অস্বীকার করে ও বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশকে ভালোবাসাতো দূরের কথা।
বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতে না পারলে বাংলাদেশকে তারা কিভাবে ভালোবাসবে।
ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য পাকি-প্রেতাত্মারা বঙ্গবন্ধু ও
তাঁর পরিবারকে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর বহু চেষ্টা করেছে, ইতিহাসকে বিকৃত
করেছে কিন্তু তারা সফল হয়নি। এমনকি কোন এক নেতা ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে
বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার জন্য উন্মও প্রচেষ্টা চালিয়েছে। বাঙালী জাতি এই কুকর্মকে
কোনদিন সমর্থন করেনি, আগামী দিনেও করবে না।
বিস্ময়ের সাথে দেখি এখনো অনেক বাংলাদেশী বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে না, উল্টো
বঙ্গবন্ধু নামে কেউ যে একজন ছিল তা তারা ভাবতেও পারে না। এরা তো বাংলাদেশের
নাগরিক হবার যোগ্যতাও রাখে না। বাংলাদেশে বসবাস করার অধিকারও তাদের নেই।
বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বানানোর জন্য,
বাংলাদেশকে অকার্যকর অস্থির রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য তারা হীনপ্রচেষ্টা অবিরাম
চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরতœ জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এইসব মতলববাজ পাকি-প্রেতাত্মাদের কঠোর হস্তে দমন করবেন ইহাই
প্রত্যাশা। এরা যাতে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে তজ্জন্য যা যা প্রয়োজন শেখ
হাসিনা তাই করবেন ইহাই আমার কামনা। এদেরকে কঠোর নজরদারীতে রাখতে হবে
এবং এরা যাতে কোন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে না পারে তজ্জন্য সদা সচেতন
থাকতে হবে সরকারকে।
জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল এবং সম্প্রতি
উন্নয়নশীল দেশ হিসেব স্বীকৃতি বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যে উজ্জ্বল থেকে
উজ্জ্বলতর হচ্ছে এতে কোন সংশয়ের অবকাশ নেই। মুজিব শতবর্ষে প্রতিটি
বাংলাদেশী নাগরিককে শপথ গ্রহণ করতে হবে যে আমরা সকলেই সৎ হবো, দুর্নীতি
করবো না, সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করবো না, পারিবারিক শান্তি বজায় রাখবো,
হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃস্টান প্রত্যেকে ভাই-ভাইয়ের মতো এদেশে বসবাস করবো,
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্পদ্রায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ত্যাগের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ
হয়ে কাজ করবো।
৩
স্বার্থের কারণে পারিবারিক পর্যায়ে, ব্যক্তি পর্যায়ে হানাহানি, ঝগড়া বিবাদ,
হত্যা, নিপীড়ন, অনাচার, নির্যাতন, শিশুদের প্রতি নির্দয় মনোভাব আমাদের
সচেতন নাগরিকদের ভাবিয়ে তুলেছে। ধর্ম যাজকেরা বা বলা যায় ধর্ম ব্যবসায়ীরা
যেভাবে নৈতিক স্থলন ঘটিয়ে নৈতিক আদর্শের পরিহানি ঘটাচ্ছে এতে বাঙালী
জাতির বৈশিষ্ট্য মøান হতে চলেছে। বিশ্ববিখ্যাত তৎকালীন দার্শনিক বার্ট্রান্ড
রাসেলের প্রতি খৃস্টান ধর্ম যাজকদের তীব্র আক্রমন দেখে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী
আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, “এই সুন্দর পৃথিবীতে ধর্ম যাজকরাই মানুষকে
বার বার উত্তেজিত করে আর প্রতিভাবানরা হয় নির্বাসিত”। বাঙালী সবসময় নজরুল
চেতনায় উদ্বুদ্ধ “বল বীর, চির উন্নত মম শির”। সেই-ই মম শির চির উন্নত বলতে
পারে যার নৈতিক আদর্শ অপরকে প্রভাবিত করতে পারে। যার নৈতিক অধঃপতন হবে সে
কোন দিনই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। মানবতা, মানবিক মূল্যবোধ, নারী
জাতির প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা যে জাতি হারিয়ে ফেলবে সে জাতি কিভাবে বিশ্বে
মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। প্রত্যেক বাংলাদেশী নাগরিককে মনে রাখতে হবে নারীরাও
মানুষ। শেখ হাসিনাকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি তেমনি আমরা সকল নারীদের
নিয়ে সকলে মিলে একটি সুন্দর সমাজ, নির্ভীক পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই। এর জন্য
প্রয়োজন নারী জাতির সম্মানবোধ বৃদ্ধির জন্য স্ব স্ব অবস্থানে কাজ করা। মুজিব
শতবর্ষে এই ধারণাটা আরো বেশী আলোকিত হোক। আমার কেমন যেন প্রায় সময়ই
প্রতীয়মান হয় যে আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নারী জাতির প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান
প্রদর্শন করছে না। এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে শিশু অবস্থায় শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে
যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এজন্য প্রাইমারী থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নৈতিক শিক্ষার
আলাদা কোর্স চালু করা জরুরী বলে মনে করি। কোমলমতি শিশু বালক বালিকাদেরকে
নৈতিক শিক্ষাটা একবার তাদের অন্তরে প্রবেশ করাতে পারলে ভবিষ্যত প্রজন্ম ইহার সুফল
ভোগ করবে ইহা নিঃসন্দেহে সত্যি। আমাদের এই প্রবাদ বাক্যটি মানতেই হবে যে,
“এ বিশ্বে যা কিছু চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”।
নারী সমাজের অবদানকে যারা অস্বীকার করে তারা নারীদের অধিকারের প্রতি অবজ্ঞা
প্রদর্শন করে। আসুন প্রতিশ্রæত বদ্ধ হই নারী সমাজের প্রতি আমরা যথোপযুক্ত
সম্মান প্রদর্শন করবো।
৪
স্বাধীন সার্বভৌম স্তরের বাংলাদেশে পৌঁছতে একদিনে সম্ভব হয়নি। সুদীর্ঘ
সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষা, রক্তপাত, অত্যাচার, নিপীড়ন, নিষ্পেষনে বাঙালীরা ছিলো
জর্জড়িত। বৃটিশ ভারত ভাগ হাবার পর থেকেই এই সংগ্রাম শুরু হয়। সংগ্রামের শুরু
হয় যখন পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী আমাদের প্রিয় মাতৃভাষার উপর আক্রমন শুরু
করে। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা নয় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার অপপ্রয়াসে পাকিস্তানীরা লিপ্ত
হয়ে উঠলে বাংলার দামাল সন্তানরা প্রতিবাদের ঝড় তুলে এবং এতে নেতৃত্ব
দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ২১
শে ফেব্রæয়ারিতে বাংলার দামাল ছেলেদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে মেনে নিতে পশ্চিম পাকিস্তানী শাষক গোষ্ঠী বাধ্য হয়েছিল। ১৯৫৪ সালের
যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট জয়ী হবার পরও পশ্চিম পাকিস্তানী
শাসকগোষ্ঠী “পূর্ব বাংলাকে” “পূর্ব পাকিস্তান” নামকরণ করা, ১৯৫৮ সালে
সামরিক শাসন জারী করা, প্রতিবাদের উত্তাল ঢেউ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া, ১৯৬২ এর
শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ৬ (ছয়) দফা, ছাত্রদের ১১ দফা, ১৯৬৮ এ আগরতলার ষড়যন্ত্র
মামলা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৬৯ এর ২৩ শে ফেব্রæয়ারি তারিখে লাখ লাখ জনতার
সামনে শেখ মুজিবুর রহমানকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করা, ১৯৭০ এর
নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরংকুশ বিজয় এবং আওয়ামী
লীগকে সরকার গঠন করতে না দেয়া, ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাক ও
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, ২৫ শে মার্চ কালো রাত্রিতে পাক বাহিনীর নিরস্ত্র
জনগণের উপর আক্রমন এবং হাজার হাজার নিরীহ নরনারী ও শিশু হত্যা, ২৬ শে মার্চ ভোর
রাতে বঙ্গবন্ধুর “স্বাধীনতা” ঘোষণা এবং প্রায় ৯ মাস ব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধ, ৩০ লক্ষ
শহীদ ও দু’লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম বিলিয়ে দেয়া, ভারতে এক কোটি শরণার্থীর আশ্রয়,
স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী
মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর অবিস্মরণীয় কূটনৈতিক তৎপরতা, নব্বই হাজার পাক
বাহিনীর আত্ম সমর্পণ এবং সবশেষে বিশ্ববাসীর চাপে মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এই ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের পটভূমি। তাই
একটি স্বাধীন দেশ হবার পেছনে কত রক্ত দিতে হয়েছে, কত ত্যাগ স্বীকার করতে
হয়েছে সে কি ভাষায় বর্ণনা করা যাবে।
৫
আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম আমাদের মনের চেতনায় জাগ্রত ছিল
এমন একটি দেশ হবে যেই দেশে সকল সম্প্রদায়ের মানুষ ভাই ভাইয়ের মতো সুখে
শান্তিতে বসবাস করবে। যে দেশে থাকবে না সম্প্রদায়গত ধর্মীয় হানাহানি,
মারামারি, বিদ্বেষ। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশই ছিল সকলের কাম্য। সেই লক্ষ্যে
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হল চারি স্তম্ভের উপর। সেই
ঐতিহাসিক স্তম্ভগুলো ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও
ধর্মনিরপেক্ষতা। আমরা সকলেই স্বপ্ন দেখলাম সোনার বাংলার। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ
গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু এগিয়ে চললেন। কিন্তু কে জানতো ঘাতকের দল ঘাপটি মেরে
বসেছিল সব ধূলিসাৎ করে দেয়ার জন্য। কথায় আছে “তোমারে বধিবে যে গোকুলে
বাড়িছে সে”। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে আত্মীয় স্বজন সহ
নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে চুরমার করে দিল। দেশ পড়ে
গেলো মৌলবাদ ধর্মান্ধ ধর্ম ব্যবসায়ীদের কবলে। ১৯৮১ সালের ১৭ই মে স্বদেশে ফিরে
এলেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। শুরু হরো সংগ্রাম। সুদীর্ঘ ১৫ বছর
পরে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা সরকার গঠন করলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোড়নে
দেশবাসী আবার উদ্ভাসিত হল। আবার ২০০০ সালে ছন্দপতন। আবার অপেক্ষা। ২০০৮
সালে আবার শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসা থেকে শুরু করে অদ্যাবধি মুক্তবুদ্ধির চর্চায়
অবতীর্ণ হয়েছি। প্রাণখুলে যেন নিঃশ্বাস নিতে পারছি। আর ২০২১ সালে এসে
দেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হল। বৈদেশিক রিজার্ভ আজ সর্বোচ্চ পর্যায়ে
পৌঁছেছে। মুজিব বর্ষে এবং স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই প্রাপ্তি
দেশবাসীকে আশান্বিত করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি দেশবাসীর আস্থা
বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মাসেতু চালু হলে অবশ্যই অর্থনীতির চাকা আরো গতিশীল হবে।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন, আর বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশকে গড়ে তুলছেন এটিই
তো বাস্তবতা। শ্রীলংকার মতো বন্ধু রাষ্ট্রকে বাংলাদেশ বিশ হাজার কোটি টাকার
মতো ঋণ দিচ্ছে এবং সুদানকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এটি ভাবতেও অবিশ্বাস্য
মনে হয় আমার। শেখ হাসিনার মতো মহান বিশ্বনেতার পক্ষেই এটিই সম্ভব যিনি
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো একটি মেগাসেতু নির্মাণে সাহস
দেখিয়েছেন।
৬
অথচ বিশ্ব মাহামারী কোভিড-১৯ এর সময়ে এদেশের পাকি-প্রেতাত্মা ধর্ম
ব্যবসায়ীরা বসে নেই। একটি মহান ধর্মের অপব্যাখ্যা করে ধর্মের নামে সাধারণ
মানুষকে উত্তেজিত করে সন্ত্রাসী কর্মকাÐে উৎসাহ দেয়া এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট
করার মধ্য দিয়ে কি অর্জিত হল ঐ সব ধর্মব্যবসায়ীর নেতারা কোনদিনই বুঝতে
সক্ষম হবে না। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি ও বিশ্ব আজ বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে এক
হয়ে গেছে সেখানে এখনো ধর্মকে ব্যবহার করা মানেই দেশটিকে ধ্বংস করে দেয়া।
আমরা জানি একটি মুজিব সৈনিক বেঁচে থাকতে তা কোনদিনই হতে দেবে না।
সেজন্যি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্দুর আদর্শে বিশ্বাসী সৈনিকদের সদা সচেতন
জাগ্রত থাকতে হবে। যে কোন সময় ঐসব ধর্মব্যবসায়ীরা উদ্ধত ফনা দিয়ে ছোবল
মারতে পারে। এদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে এবং মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে মতো
কৌশলে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অবস্থানে যেই অবস্থায় এসেছে
সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক পাঠক্রম যোগ করে শিক্ষাকে আধুনিকায়ন করতে হবে
যাতে ভবিষ্যতে ঐসব প্রতিষ্ঠান থেকে যারা বেরিয়ে আসবে তারাও মুক্তিযুদ্ধের
চেতনায় শাণিত হবে। এই বিষয়টাতে কোন ক্রমেই অবহেলা করা যাবে না। একটু
অসাবধানতার জন্য বিরাট বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। চক্রান্তকারীরা বসে নেই, তাদের
চক্রান্ত বিভিন্নভাবে অব্যাহত রেয়েছে। বাংলাদেশ আধুনিক মননশীল সোনার বাংলায়
পরিণত হোক এটা ওরা চায় না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে বিশ্বে মাথা উঁচু
করে দাঁড়াতে হবে এবং শেখ হাসিনার হাতকে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী করতে হবে তাহলে
মুজিব শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন হবে।
মুজিব শতবর্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ২০২১-২০২২ সালের বাজেটে যে সম্মান
জানিয়েছেন তজ্জন্য বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরতœ জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর
প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই বাজেটে
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। যাঁরা
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁদের অনেকের এখন বয়স হয়ে গেছে। এই অবস্থায়
তাঁদের আয়ের উৎসও তেমন নেই। এই ভাতা বৃদ্ধিতে তাঁদের উপকারে আসবে। আমি
নিজেও ভাতা প্রাপ্ত গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের সূর্য সন্তান।
৭
তিরিশ লক্ষ শহীদ ও দু’লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এবং অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার
ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ পেয়েছি। বৃটিশ
বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবীদের এখনো দেশের মানুষ সম্মান করে, কারণ তাঁদের
অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে বৃটিশকে আমরা এদেশ থেকে তাড়াতে সক্ষম হয়েছি।
মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সূর্য সন্তানদের দেখা যায় আজো অনেকে সম্মান দেখাতে
চায় না। অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিসীম অসাধারণ ত্যাগের মহিমা যদি কাব্যে
বর্ণিত হতো তাহলে হাজার হাজার মহাকাব্য রচিত হতো। ক’জন মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব
কাহিনী রচিত হয়েছে? আর কিছুদিন পরে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না,
প্রতিদিন মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে মরছে। বহু মুিক্তযোদ্ধা সংসার চালাতে বেঁচে
থাকার সংগ্রাম চালাচ্ছে। এই দুর্মূল্যের দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রামের চিত্র
তুলে ধরাটা এই নিবন্ধের উদ্দেশ্য নয়। শুধু বলতে চাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের বজ্রকণ্ঠ ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে
লাখো লাখো মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ দিয়েছে, শহীদ হয়েছে। সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের
পরিবার ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার কি অবস্থায় আছে এ ব্যাপারে কোন কি তদন্ত
হয়েছে বা নাকি গবেষণা হয়েছে। যাঁদের আত্মত্যাগে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে
তাঁদের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করা এ প্রজন্মের দায়িত্ব। বঙ্গবন্ধু কন্যা
শেখ হাসিনার উদারতার কারণে মুক্তিযোদ্ধারা আজ কিছুটুকু স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলছে। অন্যদিকে ৫০ বৎসর পরে এসে যাচাই বাছাই এর নামে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে
হয়রানি করার পদক্ষেপ অত্যন্ত দুঃখজনক। সদাশয় সরকারকে এই ব্যাপারে সবিশেষ নজর
দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। একজন সঠিক মুক্তিযোদ্ধা যদি তাঁর ন্যায্য পাওনা
থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি পাবে না। কারণ তাঁর আহŸানেই তো
মুক্তিযোদ্ধারা সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে, অসহযোগ আন্দোলনে যোগ
দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা জাতীয় কর্তব্য।
বঙ্গবন্ধু জন্ম শতবর্ষে একটু আমি অন্য প্রসঙ্গে আসি। বঙ্গবন্ধু বিশ্বজগতে
একজন বিরল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। কিউবার রাষ্ট্রপতি শোষিতের নেতা ফিডেল
ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন- “আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি”। বঙ্গবন্ধু
সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য থেকে অনুধাবন করতে পারি বঙ্গবন্ধু কত উঁচু মাপের
৮
বিশ্বনেতা। এই মহান নেতাকে সাম্রাজ্যবাদের দোসররা, পাকি-প্রেতাত্মারা নির্মম
নিষ্ঠুরভাবে সপরিবারে হত্যা করে এই স্বাধীন দেশকে পাকিস্তানী ভাব ধারায়
প্রতিষ্ঠিত করে বাঙালীরা যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্যি অবিরাম
২১টি বছর সক্রিয় ছিল। এতে তারা সফলও হয়েছে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে যখন বঙ্গবন্ধু
কন্যা সুদীর্ঘ ১৫ বৎসর সংগ্রামের পর এদেশে হাল ধরলেন দেশের চিত্র পাল্টে গেলো।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ শাসন করার যে অঙ্গীকার তিনি করেছিলেন আজ ২০২১ সালে
এসে বিশ্বে বাংলাদেশ একটা রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে
বাংলাদেশ স্বীকৃতি লাভ করেছে। এমনকি করোনা পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশের
অগ্রগতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ প্রসঙ্গে আমি বলবো বাংলাদেশ সরকার
যেনো অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার বেশী গুরুত্ব দেন। যতই যোগাযোগ ব্যবস্থা
মসৃণ হবে ততই অর্থনীতির চাকা বেশী করে ঘুরবে। এখন অনেক অঞ্চল আছে যেখানে
এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যেতে যোগাযোগ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত। যেহেতু
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ সেহেতু কৃষি ব্যবস্থাপনার উপর সবিশেষ জোড় দিতে
হবে। কৃষি, যোগাযোগ, উৎপাদন, রপ্তানী ও আইটি এই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে সমন্বয় সাধন করে দেশের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে সাজাতে হবে। তাহলে দেশের
উন্নতিকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। যদিও বা দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে আনা
অত্যন্ত কঠিন কাজ।
আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি। যা বলি তা বিশ্বাস করি না। দুর্নীতি যদি
সমাজ জীবনকে ক্ষত করে তাহলে জাতি হিসেবে আমরা ব্যর্থ হবো। অতি লোভের
কারণেই দুর্নীতি। যার যা আছে সেই অবস্থায় আমরা সন্তুষ্ট থাকতে পারি না।
প্রত্যেকের আরো চাই, আরো আরো চাই। এহেন অবস্থায় আমরা দুর্নীতির
আশ্রয়গ্রস্থ হতে কোন রকম সংকোচ বোধ করি না। আমরা লজ্জা, শরম, মান, সম্মান
বিসর্জন দিতে দ্বিধা বোধ করি না। অথচ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। দেশের প্রতি
গভীর মমত্ববোধ থাকলে আমরা কোন সময়ই দুর্নীতির আশ্রয় নিতাম না। দেশপ্রেম
অনেকের মন থেকে উবে গেছে বিশেষ করে যারা দুর্নীতি করে। অথচ একটি গোষ্ঠী
দুর্নীতি না করলে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
দুর্নীতিবাজরা জনগণের কল্যাণকামী কখনো হতে পারে না। মানবতা এদের কাছে
৯
ভুলুণ্ঠিত। মানবিক মূল্যবোধ বিসর্জিত এদের কাছে। দুর্নীতিবিাজদের কোন
ধর্ম নেই। মানব ধর্ম যে আছে সেটিও তারা বিসর্জন দিয়ে দেশের ও জনগণের ক্ষতি
করে যাচ্ছে। দুর্নীতিপরায়ন মানুষ প্রজন্মকে যে ধ্বংস করে দিচ্ছে তা তারা
অনুধাবন করতে পারে না কারণ স্বার্থের কারণে তাদের জ্ঞানচক্ষু অন্ধ হয়ে যায়। এরা
দুর্নীতি করে প্রাপ্ত অর্থের মোহজালে আবিষ্ট হয়ে পড়ে। না হলে একজন বন
বিভাগের কর্মকর্তার বালিশ টাকার বান্ডিল দিয়ে সেলানো হতে পারে?। কোটি
কোটি টাকা দেশ থেকে অন্য দেশে অবৈধভাবে পাচার করতে পারে। তবে এও মনে রাখা
উচিত, “চোরের দশ দিন, গেরস্তের একদিন”। দুর্নীতিবাজদের ভবিষ্যত যে অন্ধকার বহু
প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। প্রত্যেককে এই নীতিতে বিশ্বাস করতে হবে “ইব
পড়হঃবহঃ রিঃয যিধঃ ুড়ঁ যধাব” অর্থাৎ যার যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো। কথায়
আছে, “ আপনি ভালো তো জগত ভালো”। এই দর্শন মেনে চললে একটি স্বাধীন
দেশের উন্নত অবস্থা হতে বেশী সময় লাগে না। আমরা তো হাওয়া ভবনের দুর্নীতি
দেখেছি। ঐসব দুর্নীতিবাজরা বা তাদেরকে যারা প্রশ্রয় দিয়েছে তারা এখন
কোথায়। আমরা নিউটনের ৩য় সূত্র জানি, “ ঊাবৎু ধপঃরড়হ যধং মড়ঃ বয়ঁধষ ধহফ ড়ঢ়ঢ়ড়ংরঃব
হবধপঃরড়হ” অর্থাৎ প্রত্যেক কর্মের বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। অর্থাৎ যেমন কর্ম
তেমন ফল। হয়ত সময় লাগে। কিন্তু একদিন না একদিন অবশ্যই এর ফল হবে। সুকর্মের
যেমন সুফল, কুকর্মের কুফল অবশ্যই হবে। দুর্নীতি করে সাময়িক লাভবান হওয়া যায়
কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী লাভবান কোন সময়ই হওয়া যাবে না। রাজনীতিবিদদের এমনকি
ধর্মব্যবসায়ী নেতাদের এত কোটি কোটি টাকা আসে কোত্থেকে। এগুলো ভাবলে
গা-হাত শিহরে উঠার কথা। করোনাকালে বলা হয় বাংলাদেশের মানুষের রোগ প্রতিরোধ
শক্তি (ওসসঁহব ঝুংঃবস) বেশী। আমরা ভেজাল খেতে খেতে করোনার মতো ভাইরাস সেই
শরীরে টিকতে পারে না। আজাদী সম্পাদক মালেক ভাই উল্টো ভাবনা লিখাতে সুন্দরভাবে
প্রকাশ করেছেন। আমাদের খাদ্যে ভেজাল বিশ্বনন্দিত। ফরমালিন দিয়ে তাজা রাখাটাই
আমাদের জন্য স্বাভাবিক। ব্যবসায়ীরাও দুর্নীতিবাজ। সময় বুঝে জিনিসপত্রের দাম
ইচ্ছাকৃত বাড়িয়ে দেবে। এতে ব্যবসায়ীরা মনে করে তারা অনেক লাভবান। কিন্তু এর
একটা খারাপ প্রতিক্রিয়া ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে সাধারণের মধ্যে বিদ্যমান। এই দাম
বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা যে সুখে আছে তা বলা যাবে না। মূল্য বৃদ্ধি এমনভাবে
১০
ব্যবসায়ীরা করে যা সাধারণ ক্রেতার আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। এতে করে সাধারণ
মানুষের শরীরে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়ে এবং এতে করে স্বাস্থ্য হানি
হয়। এর জন্য ব্যবসায়ীদের উপর সাধারণ মানুষ কোন না কোনভাবে অভিশাপ দিয়ে
থাকে। ব্যবসায়ীরা তা বুঝতে অক্ষম।
বাংলাদেশে এমন কোন খাত নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। আমরা আশা করবো আমরা
প্রত্যেকে আসুন দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। আমাদের
প্রত্যেককে মনে রাখতে হবে ভালোবাসার কোন বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ,
বাঙালী জাতি, বাংলার প্রতি ইঞ্চি মাটিকে, মানুষকে ভালোবেসেছিলেন বলেই
তিনি চিরঞ্জীব। সেই রকম ভালোবাসা আমাদের মধ্যে থাকতে হবে। সৎ মানুষের জীবন
একটু কষ্টকর হলেও তিনি কিন্তু শান্তিতে বসবাস করেন। আর অসৎ মানুষের জীবন যতই
সুখকর হউক না কেন তিনি অশান্তিতে জীবন যাপন করেন এবং তার পারিবারিক
শান্তি নষ্ট হয়। ছেলে মেয়েরা যখন দেখে যে এবং বুঝতে পারে যে তাদের পিতা-মাতা
অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছে তখন পিতা-মাতার প্রতি ঘৃণার উদ্রেক হয়। এই
বিষয়টি প্রত্যেক দুর্নীতিবাজদের অনুধাবন করা উচিত।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। বঙ্গবন্ধুর
মনোনীত নিয়ে আমি ১৯৭৪ সালে ভারতে গিয়ে পদার্থবিদ্যায় ডক্টরেট ডিগ্রী
নিয়েছি। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাত থেকে ২০২০ সালে শিক্ষায়
একুশে পদক নিয়েছি। আর কারো জীবনে এই ঘটনা ঘটেছে কিনা আমার জানা
নেই। তাই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ
হাসিনা করোনাকালীন সময়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার অব্যাহত প্রচেষ্টা
বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। শেখ হাসিনা মানবতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ বিশ্বনেতা। আমি
শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করি। বাংলাদেশে এই মূহুর্তে শেখ হাসিনার বিকল্প
নেই। আবারও বলি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমরা কোন ভুলুণ্ঠিত হতে দেবো না।
একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য আমরা মুক্তিসংগ্রামে
গিয়েছি। এটি বাস্তবায়নের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক ভাবধারার
আদর্শের উদ্বুদ্ধ বাঙালী জাতিকে প্রতিনিয়ত সতর্ক থাকতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ
হতে হবে। আবারো বলি “নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস”। সতর্কতার কোন
১১
বিকল্প নেই। মুজিব শতবর্ষে ইহাই সকলের প্রতি আবেদন নিবেদন। আসুন
বাংলাদেশকে ও বাংলাদেশের মানুষকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর
সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান,
শিক্ষায় একুশে পদকপ্রাপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা; বঙ্গবন্ধু শিক্ষা গবেষণা পরিষদের
বৃহত্তর চট্টগ্রামের সভাপতি, প্রাবন্ধিক, পদার্থবিজ্ঞানী ও বহু অভিধা প্রাপ্ত।