শনিবার-১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কাল ছিলো মহানায়িকা শাবানার জন্মদিন

কাল ছিলো মহানায়িকা শাবানার জন্মদিন

বিনোদন ডেস্ক : শাবানা ছিলেন বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের প্রথম সারির চিত্রনায়িকা। টানা তিন দশক তার সুনিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন কোটি দর্শকের মন। তার পারিবারিক নাম আফরোজা সুলতানা রত্মা। ১৫ জুন ছিল এ নায়িকার জন্মদিন।

ভাষা আন্দোলনের বছর ১৯৫২ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শাবানা। ঢাকার গেণ্ডারিয়া হাই স্কুলে ভর্তি হলেও মাত্র ৯ বছর বয়সে তার শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটে।

১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন শাবানা। ওই সময় পর্দায় নাম ছিল রত্মা। এরপর ‘তালাশ’-সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় নৃত্যশিল্পী ও অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন তিনি। সহনায়িকা চরিত্রে দেখা যায় ‘আবার বনবাসে রূপবান’ ও ‘ডাক বাবু’তে।

১৯৬৭ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘চকোরী’তে চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেন তিনি। আর তখন রত্মা থেকে হয়ে যান শাবানা। বাংলা ও উর্দু ভাষায় নির্মিত ‘চকোরী’ ছবি ব্যবসা সফল হয়। এরপর থেকে শাবানাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।

তিন দশকের ক্যারিয়ারে নাদিম, রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জসীম, সোহেল রানার সঙ্গে জুটি বেঁধে শাবানা উপহার দেন জনপ্রিয় অনেক ছবি। তিনি কাজ করেছেন বলিউডের রাজেশ খান্নার বিপরীতেও।

তার উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হচ্ছে- ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবনসাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’ ও ‘চাঁপা ডাঙার বউ’।

১৯৭৩ সালে সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন শাবানা। দুজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন প্রযোজনা সংস্থা এসএস প্রোডাকশন। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে অনেক জনপ্রিয় সিনেমা।

১৯৭০-এ মুস্তাফিজের সঙ্গে ‘একই অঙ্গে এত রূপ’সহ কাজী জহিরের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করেন ‘মধুমিলন’ ছবিতে। অভিজাত সৌন্দর্য ও স্বাভাবিক অভিনয় ক্ষমতা দিয়ে সাফল্যের সঙ্গে বক্স অফিস ও দর্শকের মনেও জায়গা করে নেন তিনি।

তিন দশকেরও বেশি সময় অভিনয়ের ক্ষেত্রে শাবানা একচেটিয়া রাজত্ব করেছিলেন। একাধারে এত রাজত্ব আর কোনো তারকা করতে পারেননি।

১৯৬৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত শুধু তাঁর নামেই ছবি চলত। কোনো ছবিতে শাবানা আছেন শুনলেই এখনো টিভির সামনে ভিড় হয় দর্শকের। শাবানা অভিনয় করেছেন ২৯৯টি ছবিতে।

প্রথমবার ১৯৭৭ সালে প্রত্যাখ্যান করেন ‘জননী’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রের জন্য পাওয়া এ পুরস্কারটি। ১৯৮০ থেকে ৮৪ সাল টানা জয় করেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার। এর মাঝে ১৯৯০ সালে সেরা প্রযোজক হিসেবেও জয় করেন এটি।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। এ ছাড়াও শাবানা পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার (১৯৮২ ও ১৯৮৭), আর্ট ফোরাম পুরস্কার (১৯৮৪, ১৯৮৮),

সায়েন্স ক্লাব পুরস্কার (১৯৮৪), কথক একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৯), নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৮৮), প্রযোজক সমিতি পুরস্কার (১৯৯১), কামরুল হাসান পুরস্কার (১৯৮৭),

নাট্য নিকেতন পুরস্কার (১৯৮৫), ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৫)। শাবানার ঝুলিতে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, রুমানিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল,

কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসহ আরও বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে শাবানা ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

১৯৯৭ সালে শাবানা অজানা কারণে হঠাৎ বিদায় নেন চলচ্চিত্র থেকে। ২০০০ সাল থেকে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বসবাস করছেন। এরপর বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে আসলেও জনসম্মুখে দেখা যায়নি এ অভিনেত্রীকে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype