শনিবার-৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৪শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

একজন মানবিক মানুষ জোতির্ময় ধর ও করোনা কালীন বাংলাদেশ

একজন মানবিক মানুষ জোতির্ময় ধর ও করোনা কালীন বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্কঃ

বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের অনেকে নিজ উদ্দ্যেগে অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছে। করোনা যুদ্ধে বিওবানদের পাশাপাশি অনেক তরুণ, তরুণী মাঠে নেমেছে। মানবিকতার হাত প্রসারিত করেছে মানুষের কল্যাণে। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন চট্টগ্রামের জোতির্ময় ধর। যুব রেডক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯২ সাল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেই খেকেই মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

এইচ এস সি পর্যন্ত কাজ করেছেন যুব রেডক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের হয়ে। তারপর ১৯৯৯ সালে স্কলারশিপ নিয়ে রাশিয়ায় ইলেকট্রনিকস পড়তে যান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত রাশিয়ান রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন। পরে কর্মজীবনে জার্মানিতে ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত জার্মান রেডক্রসের সাথে যুক্ত আছেন। তিনি দেশে এসেছেন ১৯ বছর পর।

বলছিলাম জ্যোতির্ময় ধর এর কথা। গত ২৭ মার্চ ২০২০ এ তিনি যুব রেডক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের হয়ে মাঠে নামেন। প্রথমে লিফলেট বিতরণ, স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন।

পরে এপ্রিল মাস থেকে এখনো পর্যন্ত প্রায় ৩০০০ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে। এক্ষেত্রে তাঁদের নাম পরিচয় গোপন রেখে, নিজের গাড়ি ড্রাইভ করে পৌঁছে দিয়েছেন প্রত্যেকের বাসায়।

রমজান মাস চলাকালীন সময়ে ২০,০০০ মানুষকে পৌঁছে দিয়েছেন ইফতার এবং সেহরি । সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত চট্টগ্রামের ২১ জন গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য পুষ্টিকর ফলমূল সমৃদ্ধ উপহার নিয়ে তাদের খোঁজখবর রেখেছেন জ্যোতির্ময়।

নিয়মিত খোঁজ খবর রেখেছেন করোনা-আক্রান্ত সাংবাদিকদের। ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম সংবাদপত্র কম্পিউটার অপারেটর এসোসিয়েশনের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া ৫০ জন সংবাদপত্র কম্পিউটার অপারেটরের পরিবারকে ১০ দিনের শুকনা খাদ্য ও মানবিক সাহায্য প্রদান করেছেন তিনি।

করোনা পরিস্থিতিতে কাজ হারানো ২০ জন সাংবাদিকের পরিবারকে তিনি খাদ্য, মানবিক সাহায্য ও উপহার প্রদান করেছেন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে কর্মরত সকল ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী, পিয়ন, নৈশ প্রহরিদের তিনি ঈদ উপহার নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

পাশাপাশি বিশিষ্ট সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “করোনায় তারুন্য” চট্টগ্রামের ত্রাণ কর্মী হিসেবে মাঠে আছেন জোতির্ময়।

তিনি শুধু চট্টগ্রামেই নয়, ঢাকার স্বেচ্ছাসেবী নাফিসা আনজুম খানের মাধ্যমেও অনেক পরিবারের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।

করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন ও সৎকার কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীদের জন্যও তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন সহায়তার হাত।

এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে অর্থ কষ্টে থাকা কয়েকটি অনাথ আশ্রম ও এতিমখানায় ও বাড়িয়ে দিয়েছেন মানবকল্যাণে সাহায্যের হাত।

বর্তমানে যুব রেডক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের অক্সিজেন সিলিন্ডার সাপোর্ট টিম এর একজন কর্মী হয়েও কাজ করে যাচ্ছেন জোতির্ময়। করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত পুষ্টিকর ফলমূল, খাবার পানি এবং ওষুধপত্র বিনামূল্যে সরবরাহ করছেন।

তিনি বলেন, “অসহায়রা উপহার পাওয়ার পর তাদের চোখ-মুখ থেকে যে প্রস্ফূটিত হাসির প্রতিফলন ঘটে তখন করোনাকালের সব দুঃখ ক্লান্তি ভুলে যান। এ যেন অপ্রাপ্তির মধ্যে বিশাল প্রাপ্তি। আমরা সবাই যদি এসব বিপদগ্রস্ত প্রাণের ডাকে সাড়া দিয়ে পাশে দাঁড়াই, তাহলে এই যুদ্ধে আমারাই জয়ী হবো।”

তিনি আরও বলেন, ” মানুষের জন্য কাজ করার সবচেয়ে বড় পুরস্কার হচ্ছে মানুষের ভালোবাসা। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যে একটি অনাবিল অানন্দ কাজ করে নিজের মধ্যে।”

৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে পারে তাহলে আমরা কেন অল্প কিছু দিনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারব না।

আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, তবে অদৃশ্য করোনা যুদ্ধ দেখছি। তাই এই যুদ্ধের একজন কর্মী হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি।

জয় হোক মানবতার। প্রতিটি বাঙালী প্রান হোক দেশ ও মানুষের কল্যানে নিবেদিত।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype