

তৃণমূলের সদর দফতরের সামনে বেরিয়ে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী ফলাফলের জোর লড়াই শেষে যখন বাংলার চতুর্দিকে সবুজ ঝড়। হুইল চেয়ারে নয়,পায়ে হেঁটেই। করোনাভাইরাসবিধি ভুলেই জয়ের উচ্ছ্বাসে কর্মীরা ভিড় জমিয়েছেন।
মাইক হাতে নিয়ে দিদিসুলভ ভঙ্গিতে বললেন, “এটা বাংলার জয়। মাটি-মা-মানুষের জয়”। হাততালি, জয়োৎচ্ছ্বাস, জয় বাংলা ধ্বনি ততক্ষণে দিল্লি পৌঁছেছে। তৃণমূল কর্মীদের মুখে তখন মমতার জয়গান।
২৯২ আসনের মধ্যে ২১৩ আসনে জয়লাভ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি সেখানে ৭৭। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে মমতাকে হারাতে দাবার ঘুঁটি সাজিয়ে সব চাল চেলেছিল পদ্ম।
ঘাসফুল শিবিরের থেকে পদ্মশিবিরে রথী-মহারথীরাই তো বেশি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হেভিওয়েট নাম সব।
যদিও তৃণমূল নেত্রী আত্মবিশ্বাসী ছিলেন প্রথম থেকেই। নির্বাচনী জনসভায় বলেছিলেন, “আমি একাই লড়াই করছি। ২৯৪ আসনেই আমিই প্রার্থী। আর একজন নারীকে হারাতে বিজেপি কত নেতা আনছে।”
মমতা বচন সত্য করল বঙ্গবাসী। প্রমাণ করল, ‘বাংলা নিজের মেয়েই চায়’। কেবল পরিসংখ্যান নয়, এও প্রমাণ হল ভারতবাসী মোদি ম্যাজিকে ভাসলেও,
বাংলার আস্থা মমতা ম্যাজিকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিত্বই কিন্তু এবারের একুশের জয়ের অন্যতম। এর বেশ কিছু কারণও রয়েছে।
কল্যাণমূলক কাজ। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে বিপুল আসনে জয়লাভের পর, ২০১৯ সালে লোকসভা আসনে প্রত্যাশিত ফল করতে পারেনি তৃণমূল। ৪২ আসনের মধ্যে ১৮ আসন পেয়েছিল বিজেপি। শতকরার হিসেবে তা ৪০%।
এরপরই তৎপড়তা বাড়ে মমতা শিবিরে। দুয়ারে সরকার, দিদিকে বলো, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো একাধিক প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে রাজ্যবাসী। দেখা গেছে নারী ভোটাররা কিন্তু আস্থা রেখেছেন মমতার ওপরেই।
এই নির্বাচন ক্ষমতার নির্বাচন ছিল। তাই ব্যক্তিত্বের লড়াই জারি ছিল। ফলাফল বলছে সে লড়াইয়ে এগিয়ে মমতাই। ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষা বলছে যে তৃণমূলীয় দুর্নীতি নিয়ে সুর চড়িয়েছেন মোদি-শাহ।
সেই ক্ষোভ বাংলার মানুষের ছিল স্থানীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে, মমতার বিরুদ্ধে নয়। নন্দীগ্রামে পায়ে আঘাতের পর মমতার হাসপাতালে ভর্তি, পায়ে প্লাস্টার, হুইলচেয়ারে প্রচার লড়াকু ব্যক্তিত্বকেই বাড়িয়ে তুলেছিল সাধারণ মানুষের মনে।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে ভিন্নসুরে ‘দিদি ও দিদি’ ডাক ভালমনে নেয়নি বঙ্গবাসী। যার প্রভাব পড়েছে ফলাফলে।
একুশের নির্বাচনে বাংলার মসনদ জয়ে মরিয়া বিজেপি নির্বাচনের আগেই দলে নেয় তৃণমূলের একাধিক নেতানেত্রীদের। মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, সব্যসাচী দত্ত,
বৈশালী ডালমিয়া, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের বড় বড় নেতারা মমতাকে ত্যাগ করে ভিড়েছিলেন পদ্ম শিবিরে। বিষোদগার করেছিলেন একদা নেত্রীর নামেই। ফলাফলে তারাই শূন্য। বরং হ্যাটট্রিক করলেন মমতা।