
চট্টগ্রামে করোনা রোগীর স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া ও ভর্তি নিয়ে আশংকার কারণ নেই
নিউজ ডেস্কঃ
চট্টগ্রামে করোনা রোগীর জন্য ডেডিকেটেড ৭৬৮ বেডের মধ্যে ৪১৮ রোগী রয়েছে। বাকি বেড খালি রয়েছে। এখন থেকে প্রত্যেকটি সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল করোনা রোগী ভর্তি করাবে। কোন হাসপাতাল করোনা রোগী ভর্তি করাতে না চাইলে টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) অথবা স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালককে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। এছাড়া চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে। সুতরাং চট্টগ্রামের রোগীদের করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নিয়ে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।
আজ বুধবার ২৪ জুন তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এমপি এর সভাপতিত্বে করোনা সংক্রান্ত বিশেষ সমন্বয় সভায় টেকনিক্যাল কমিটির গৃহীত ব্যবস্থার বিবরণ দিতে গিয়ে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির এ তথ্য উপস্থাপন করেন। সভাটি জুম এপসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
সভায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, হুইপ মো: শামসুল হক, চসিক মেয়র আ. জ. ম নাসির উদ্দিন, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও চট্টগ্রাম বিভাগের করোনা বিষয়ক সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, চট্টগ্রামে করোনা সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন) মো: মিজানুর রহমান, স্বাস্থ্য বিভাগীয় পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির, চট্টগ্রামের সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা প্রান্তে সভা সঞ্চালনা করেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, চট্টগ্রাম প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন বিভাগীয় কমিশনার।সভায় জানান হয়, আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ১৫০ বেড, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ২০০ বেড, বিআইটিআইডিতে ৩২ বেড, রেলওয়ে হাসপাতালে ১০০ বেড, হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০০ বেড, ফিল্ড হাসপাতালে ৫০ বেড, মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৬ বেড, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ১০০ বেড এবং অন্যান্য হাসপাতালে অবশিষ্ট বেড রয়েছে। ইম্পিরিয়াল হাসপাতাল ৬২ বেড নিয়ে আগামী সপ্তাহে রোগী ভর্তি করাবে বলে সভায় জানান হয়। চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল আধুনিক সকল সুবিধাদি নিয়ে ৭০ বেডের করোনা ইউনিট সহসাই চালু করবে বলে সভায় অবহিত করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও ইম্পিরিয়াল হাসপাতাল কোভিড রোগীদের ডায়ালিসিসের ব্যবস্থা করেছে বলেও সভায় জানান হয়। আরও কয়েকটি হাসপাতালও করোনা রোগী ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সভায় অবহিত করা হয়।
সভায় তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি ও কিছু বিশেষজ্ঞের শঙ্কা-আশঙ্কা ভুল প্রমাণ হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ তিনমাসের বেশি সময় ধরে প্রায় সবকিছু বন্ধ। এখন সীমিত আকারে খুললেও সবকিছু চালু হয়নি। সরকারের সঠিক এবং সময়োচিত পদক্ষেপ ও একইসাথে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতার কারণেই তিন মাসে বাংলাদেশে একজন মানুষও অনাহারে মারা যায়নি। দেশে কোথাও খাদ্যের জন্য হাহাকার নেই। খাদ্যের জন্য হাহাকারের সম্ভাবনা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন, তাদের সেই মত ভুল প্রমাণিত হয়েছে। চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রেও সরকার অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং আরো নতুন নতুন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং এগুলো ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমরা যদি এভাবে এগিয়ে যেতে পারি, পরম সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদে আমরা এই মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পৃথিবীর কোন দেশই প্রস্তুত ছিলনা। তাই আমরা ইউরোপ, আমেরিকায়, আফ্রিকায় মৃত্যুর মিছিল দেখতে পেয়েছি। করোনার উৎপত্তিস্থল চীনে মৃত্যুর হার ছিল ৫.৫। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে এ হার ১.৩। সীমিত সামর্থ্য ও সকলের সহযোগিতা নিয়ে সরকার এ সংকট মোকাবিলা করছে।
সভায় ভূমি মন্ত্রী বলেন, করোনা চিকিৎসার আধুনিক সুবিধা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে উপজেলার রোগীদের জেলাতে আসতে না হয়।
চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগে আইসিইউ বেড ১৯৬টি। এখানে শুরুতে যে সংকট ছিল, এখন তা নেই। চট্টগ্রামের রোগীরা যাতে আরো ভালোভাবে চিকিৎসা সুবিধা পায় সেজন্য আমরা সর্বোত্তভাবে চেষ্টা করছি, চট্টগ্রামে নিয়মিত সমন্বয় সভা করছি। স্থানীয়ভাবে বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে যে কমিটি করে দেয়া হয়েছে, তারাও কষ্ট করে অনেক কাজ করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেনারী বিশ্ববিদ্যালয় কোভিড-১৯ টেস্টের ব্যবস্থা করে যে উদাহরণ তৈরি করেছে, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদেরকে অনুসরণ করবে বলে তথ্য মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। মন্ত্রী এসময় চট্টগ্রামে করোনা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং প্রয়োজনে লাশ দাফনের কাজে এগিয়ে আসা মানুষ ও সংগঠনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
জীবন এবং জীবিকা রক্ষা দুটির মধ্যে সমন্বয় করেই নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, সেজন্য এখন এলাকাভিত্তিক রেড জোন চিহ্নিত করা হচ্ছে, বলেন তথ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, চিহ্নিত এলাকায় যেসব বিধিনিষেধ মেনে চলা প্রয়োজন, আমাদেরকে অবশ্যই কঠোরভাবে সেগুলো মানতে হবে। তাহলেই আমাদের পক্ষে নিজেদেরকে, নিজের পরিবারকে, নিজের কাছের জনদেরকে সুরক্ষা দেয়া, সর্বোপরি মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।