শুক্রবার-৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১১ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

পবিত্র মাহে রমজান মুসলিম নারীদের করণীয়

ইবাদতের শ্রেষ্ঠ মাস হল পবিত্র মাহে রমজান মাস।এই সময় হচ্ছে রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ সময়।প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর কাছে এই মাস বহু কাঙ্ক্ষিত। এই মাসে পুরুষরা আমল করার অধিক সুযোগ পেলেও নারীদের পারিবারিক ও সাংসারিক ব্যস্ততায় আমলের ঘাটতি থেকে যায়।
বিশেষ করে সাহরি ও ইফতারের প্রস্তুতিতে রান্নাঘরেই তাদের দীর্ঘ হয়। তবে এতে হতাশার কিছু নেই। কারণ নারীরা তাদের কর্মব্যস্ততার বাইরে মৌলিক কিছু আমলে গুরুত্ব দিতে পারলে রমজান মাসের ফজিলত ও বরকত লাভে তাদের আমলনামাও পূর্ণতা পাবে। রমজানে নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেসব মৌলিক আমল নিয়ে আজকের এই লেখা।

রোজা পালনে সচেষ্ট হওয়া -রমজানের রোজা প্রাপ্তবয়স্ক সব নারী-পুরুষের জন্যই আবশ্যকীয় বিধান। নিষ্ঠার সঙ্গে এই বিধান যারা পালন করবে, তাদের প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ তাআলা রেখেছেন শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের ব্যবস্থা।

তবে নারীদের সন্তান লালন-পালন, সাংসারিক ব্যস্ততা ও নারীঘটিত বিশেষ অসুস্থতার কারণে তাদের জন্য হাদিস শরিফে বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণা এসেছে। এক বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করেন, রমজান মাসে পূর্ণরূপে রোজা পালন করেন, নিজের সম্ভ্রম ও ইজ্জত-আবরু রক্ষা করে চলেন এবং স্বামীর অনুগত থাকেন; তিনি জান্নাতের আটটি দরজার যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা হবে চাইলেই প্রবেশ করতে পারবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৬৬১)

কষ্টে ধৈর্য ধারণ করা-
নারীরা যেহেতু রোজা রেখে গৃহস্থালির কষ্টসাধ্য কাজগুলো করে থাকে, তাই অনেক সময় তাদের মাঝে বিরক্তি চলে আসে। ফলে তারা অধৈর্য হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে একজন মুমিন নারীর করণীয় হচ্ছে ধৈর্য ধারণ করা। কারণ ধৈর্যশীলতা মুমিন নর-নারীর কল্যাণকর একটি গুণ। পবিত্র কোরআনে ধৈর্যশীলদের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘বলো! হে মুমিন বান্দা, যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো। যারা এই দুনিয়ায় ভালো কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ। আর আল্লাহর জমিন প্রশস্ত, শুধু ধৈর্যশীলদেরই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ১০)

 

যথাসময়ে ফরজ নামাজ আদায় করা
রমজানের রোজার মতোই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করা প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক নর-নারীর ওপর ফরজ। তাই ঘরের শত ব্যস্ততার মধ্যেও যেন নারীদের ফরজ নামাজ ছুটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যথাসময়ে নামাজ আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বলেন, ‘সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫৫)

আর যারা অলসতায় নামাজকে দেরি করে বা ছেড়ে দেয়, তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাজির, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন।’ (সুরা : মাউন, আয়াত : ৪-৫)

সুন্নত নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া
নারীদের অধিক নফল নামাজের সুযোগ যদি না থাকে, তবে অবশ্যই ফরজের আগে ও পরের সুন্নতগুলো আদায়ের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে। এক বর্ণনায় আল্লাহর রাসুল (সা.) ফরজ নামাজের আগে ও পরের সুন্নত নামাজের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিন-রাতে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। জোহরের নামাজের আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের নামাজের পরে দুই রাকাত, এশার নামাজের পরে দুই রাকাত এবং ভোরের ফজরের নামাজের আগে দুই রাকাত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪১৫)

কোরআন তিলাওয়াত ও তাসবিহ-তাহলিল আদায়
রমজান কোরআন নাজিলের মাস। এই কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণেই এই মাস এত মহিমান্বিত।
তাই অবসর কিংবা ব্যস্ততার সময় আমাদের কোরআন তিলাওয়াত ও বিভিন্ন তাসবিহ-তাহলিল আদায়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। নারীরা রান্নাবান্নার কাজের সময়েও সহজ তাসবিহগুলো আদায় করতে পারে। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন রোজা এবং কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি ওকে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং ওর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। আর কোরআন বলবে, আমি ওকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং ওর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করো।’ নবী (সা.) বলেন, ‘অতএব ওদের উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৬২৬)

আরেক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর জিকির করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭১২)

গিবত ও পরনিন্দা থেকে মুক্ত থাকা

কারো সামনে বা পেছনে গিবত বা দোষচর্চা করা একটি নিন্দনীয় অভ্যাস। বিশেষভাবে রমজান মাসে পরনিন্দার এই প্রবণতা থেকে বিরত থাকা উচিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে বলেন, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সুরা : হুমাজাহ, আয়াত : ০১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ সাওম পালন করলে সে যেন পাপাচারে লিপ্ত না হয় এবং মূর্খের মতো আচরণ না করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৬৩)

জাকাত আদায় করা
জাকাত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত ও অন্যতম রুকন বা স্তম্ভ। শরিয়তের অন্যান্য বিধান পালনের প্রতি গুরুত্ব দিলেও অনেক নারী এই বিধান পালনে যথেষ্ট উদাসীন। বিশেষভাবে নারীরা তাদের ব্যবহৃত সোনা-রুপার অলংকারের জাকাত আদায়ে অবহেলা ও গড়িমসি করে থাকে। অথচ হাদিস শরিফে জাকাত অনাদায়ের ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সোনা-রুপার অধিকারী যেসব লোক এই হক (জাকাত) আদায় করে না, কিয়ামাতের দিন তার ওই সোনা-রুপা দিয়ে তার জন্য আগুনের অনেক পাত তৈরি করা হবে, অতঃপর তা জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে। অতঃপর তা দিয়ে কপালদেশ, পার্শ্বদেশ ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। যখনই ঠাণ্ডা হয়ে আসবে, পুনরায় তা উত্তপ্ত করা হবে। এরূপ করা হবে এমন এক দিন, যার পরিমাণ হবে ৫০ হাজার বছরের সমান। আর তার এরূপ শাস্তি লোকদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকবে। অতঃপর তাদের কেউ পথ ধরবে জান্নাতের আর জাহান্নামের দিকে। (মুসলিম, হাদিস : ২১৮০)

 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype