সোমবার-২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জনগণের দোর‌গোড়ায় পুলিশকে নিয়ে যেতে চান আইজিপি

জনগণের দোর‌গোড়ায় পুলিশকে নিয়ে যেতে চান আইজিপি

বর্তমান প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে পুলিশি সেবা জনগণের কাছে নিয়ে যেতে চান বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। পুলিশি সহায়তা পেতে জনগণকে এখন পুলিশের কাছে আসতে হয়। আইজিপি এমন একটি ব্যবস্থা চালু করতে চান, যাতে জনগণকে পুলিশের কাছে আসতে না হয়, বরং পুলিশই জনগণের কাছে সেবা নিয়ে যাবে। বিট পুলিশি়ংয়ের মাধ্যমে পুলিশকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে ইউনিট প্রধানদেরকে নির্দেশনা প্রদান করেন আইজিপি। তিনি বলেন, আমাদের দেশের প্রতিটি ইউনিয়নকে একেকটি বিটে ভাগ করে প্রতিটি বিটের দায়িত্বে একজন পুলিশ কর্মকর্তা‌কে নি‌য়োজিত করা হবে। তিনি নিয়মিত ওই ইউনিয়নের মানুষের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা ইত্যাদির খোঁজখবর করবেন, প্রতিনিয়ত তাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন, তাদের মতামত জানবেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সমস্যার সমাধান করবেন এবং কাঙ্খিত সেবা প্রদান করবেন।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা, ময়মনসিং এবং সিলেটে বিট পুলিশিংয়ের সাফল্য উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, এসব এলাকায় বিট পুলিশিং সফল হয়েছে। আমরা সারাদেশে বিট পুলিশিং চালু করতে চাই, মানুষের কাছে যেতে চাই, মানুষের হৃদয় জয় করতে চাই।

আইজিপি রোববার সন্ধ্যায় সিএমপি, কেএমপি আরএমপি, বিএমপি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল রেঞ্জ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, সিআইডি, র‍্যাব পিবিআই, রেলওয়ে, টুরিস্ট, হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ এবং পুলিশ স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদার প্রধান এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য প্রদানকালে এ নির্দেশনা প্রদান করেন।

বর্তমান করোনাকালে পুলিশের সেবার কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, করোনার সময় জনগণকে আমাদের কাছে আসতে হয়নি। আমরা জনগণের কাছে গিয়েছি, তাদের পাশে থেকেছি, তাদেরকে করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে নিজেরা আক্রান্ত হয়েছি, জীবন বিলিয়ে দিয়েছি। তাদের বাসায় খাবার পৌঁছে দিয়েছি, যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছি, তাদের ধান কাটার ব্যবস্থা করেছি, করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির আপনজনরা যখন কাছে আসেনি তখন আমরা তার দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেছি। এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল না, কিন্তু আমরা মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজটি করেছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ অনবদ্য ভূমিকার জন্য আমাদেরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দেশবাসী অকুণ্ঠচিত্তে আমাদের প্রশংসা করছেন। দেশের জ্ঞানী গুণী ব্যক্তিরা আমাদের পক্ষে কলম ধরেছেন। আমরা মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, একদিন করোনা থাকবে না, তখনও মানুষের আস্থা, ভালোবাসা ধরে রাখার জন্য আমাদেরকে নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও মানুষের কল্যাণে একযোগে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, জনগণের পুলিশ হতে হলে পুলিশকে মাদকমুক্ত হতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্য মাদক খাবে না, মাদকের ব্যবসা করবে না, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সম্পর্ক রাখবে না। বাংলাদেশকে একটি মাদকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের সবাইকে যুথবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

আইজিপি বলেন, কোন পুলিশ সদস্য অবৈধভাবে কোন অর্থ উপার্জন করতে পারবেন না। দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়ে কেউ যদি বড়লোক হতে চায়, তাহলে সে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করুক, বড়লোক হোক, আমরা তাকে সাধুবাদ জানা‌বো। কিন্তু, পুলিশে থেকে কোন ভাবেই দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকা যা‌বে না।

তিনি বলেন, জনগণকে ভালবাসতে হবে, তাদের পাশে থাকতে হবে, তাদের জন্য কাজ করতে হবে। দায়িত্ব পালনকালে নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনি সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে। পুলিশকে সকল ধরনের নির্যাতন থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের পুলিশ হতে হবে।

আইজিপি বলেন, মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে, তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ কর্মকর্তা ও ফোর্সেরও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে। বর্তমানে কোন পুলিশ সদস্য চাকরিরত অবস্থায় নিহত হলে অথবা কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে তাকে ও তার পরিবারকে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়। আমরা চাকরিরত অবস্থায়ই পুলিশ কর্মকর্তা ও ফোর্সের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে চাই। তাদের সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই, যাতে তারা নির্বিঘ্নে জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর আধুনিক সমরাস্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা শুধুমাত্র থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করেছি। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন‌। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকেও উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে তৈরি হতে হবে।

আইজিপি তাঁর বক্তব্যের শুরুতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে আত্মদানকারী পুলিশ সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। যারা অসুস্থ রয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন। কফি পোস্ট

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype