বৃহস্পতিবার-১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

ডেক্স রিপোর্ট

পবিত্র হজ পালনের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত সোমবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাক্ষরিত পরিপত্রের বরাতে এ খবর জানিয়েছে সেখানকার সংবাদপত্র ওকাজ।

পরিপত্র অনুযায়ী, এ বছর যাঁরা পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে যেতে চান, তাঁদের অবশ্যই করোনার টিকা গ্রহণ করতে হবে। এটি হজের জন্য সৌদি আরবে প্রবেশের অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল শর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

হজযাত্রীদের পাশাপাশি চলতি বছর হজে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের জন্যও করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. তৌফিক আল-রাবিয়াহ। তিনি বলেন, হজের সময় মক্কা ও মদিনায় যাঁরা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত থাকবেন, আগে থেকেই তাঁদের পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য হজ ও ওমরাহর সময় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে, যাতে সেখানে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের বাধ্যতামূলক টিকাগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়।

সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মুখপাত্র ড. মোহাম্মদ আল আবদুল্লাহ আলী বলেন, যাঁরা এরই মধ্যে করোনার টিকা নিয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়, তাহলে সেসব লোকের সংস্পর্শে যাওয়া ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজন হবে না। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখের বেশি মানুষ হজে অংশ নিয়ে থাকেন। এ মাসের মধ্যেই সেই সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা আছে। বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘টিকা বাধ্যতামূলকের খবর আমরা গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছি। এখনো সৌদি আরব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের এ বিষয়ে প্রস্তুতি আছে। আমাদের জন্য বরাদ্দ কোটা অনুযায়ী যাঁরা হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করবেন, তাঁদের আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব। ফলে তাঁদের করোনাভাইরাসের টিকা পেতে কোনো সমস্যা হবে না।’

এবারের হজে বেশ কিছু নতুন নিয়ম-কানুন অনুসরণ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়েছে, মিনা, আরাফাত, মুজদালিফাহর মতো পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই অনুমতি থাকতে হবে। প্রতিটি প্রবেশপথে তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে; সবাইকে এসব চেকপয়েন্টের ভেতর দিয়ে যেতে হবে।

যাঁদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঘ্রাণ বা স্বাদের অনুভূতি হারানোর মতো লক্ষণ থাকবে, চিকিৎসকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁদের একই ধরনের লক্ষণ থাকা মানুষদের গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়ে হজে অংশ নিতে হবে। যাঁদের এসব লক্ষণ দেখা দেবে—এমন কোনো কর্মী হজকেন্দ্রগুলোয় কাজ করতে পারবেন না, যতক্ষণ না তাঁরা পুরোপুরি আরোগ্য হন। হজের সময় সবাইকে মাস্ক পরতে হবে এবং অন্তত দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

করোনা মহামারির কারণে গত বছর স্বল্পসংখ্যক মুসল্লি নিয়ে সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ পালিত হয়। সৌদি আরবে বসবাসরত দেশি-বিদেশি প্রায় ১০ হাজার মুসল্লিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পবিত্র হজ পালনের অনুমতি দেয় সৌদি সরকার। সে সময় বাইরের কোনো দেশ থেকে কেউ পবিত্র হজ পালনের জন্য সে দেশে যেতে পারেননি। তবে এবার টিকা গ্রহণের বাধ্যবাধকতা দিয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে এই অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। প্রায় আট মাস বন্ধ থাকার পর গত বছরের ৪ অক্টোবর কঠোর নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ির মধ্যে ফের ওমরাহ শুরু হয়।

সৌদি আরবে গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে করোনার টিকাদান শুরু হয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন। বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের হিসাবে, গত মঙ্গলবার তিন লাখ ৭৮ হাজার দুজন করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। এ সময়ে প্রাণহানি হয়েছে ছয় হাজার ৫০৫ জনের। বর্তমানে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী আড়াই হাজার।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype