ইতিহাস ৭১ ক্রিড়া ডেস্ক : মোহাম্মদ আলী একটা পরিবর্তনের নাম। তিনি একটা বিপ্লব। ইতিহাসের রঙিন খামে মোড়ানো অবিস্মরণীয় এক অধ্যায় তিনি। তিনি নিছকই এক ক্রীড়াবিদ নন।
কিছু মানুষ চিরকাল অমর হয়ে থাকেন। মানুষের কর্মই এর একমাত্র কারণ। সেই মানুষদের একজন ‘দ্য গ্রেটেস্ট মোহাম্মদ আলী’। অ্যাথলেটে যেমন একজন সফল মানুষ ছিলেন, ধর্মের প্রতিও ছিলেন ঠিক ততটা অনুরাগী। সবসময় প্রতিবাদ করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ‘বর্ণবাদ’র বিরুদ্ধে জীবনভর আলীর লড়াই।
বার্তা সংস্থা বিবিসির বিচারে গত শতাব্দীর সেরা অ্যাথলেট হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন বক্সার মোহাম্মদ আলী। ২০১৬ সালের জুন ৩ সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বক্সিং রিংয়ের এই ভয়ঙ্কর মৌমাছি । ১৯৭৮ সালে ক্যারিয়ারের পড়ন্তবেলায় বাংলাদেশে আসেন তিনি। আমেরিকা থেকে সুদূর বঙ্গদেশেও কৃষ্ণাঙ্গ মহাতারার জনপ্রিয়তা কোনো অংশে কম নয়।
মোহাম্মদ আলীর বক্সার হওয়ার গল্পটা বেশ চমকপ্রদ। ১৯৫৪ সালে একবার তার সাইকেল চুরি হয়। পুলিশের হাতে চোর ধরা পড়ার পর ইন্সপেক্টর মার্টিনকে অদ্ভুত এক অনুরোধ করে ১২ বছর বয়সী আলী। সে জানায়, চোরকে পেটানোর ইচ্ছার কথা। তখন মার্টিন বলেন, এর জন্য তোমাকে লড়াই করা জানতে হবে। পুলিশের পাশাপাশি মার্টিনের আরো একটি পরিচয় ছিল। বক্সিং কোচ! তার অধীনেই বক্সিংয়ে হাতেখড়ি আলীর।
১৯৬৪ সালে তিনি ইসলামী সংগঠন ‘নেশন্স অব ইসলাম’-এ যোগ দেন। নাম বদলে রাখেন মোহাম্মদ আলী। ১৯৭৫ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭২ এবং ১৯৮৮ সালে দু’বার হজ্জ পালন করেন আলী। ইসলাম ধর্ম কেন গ্রহণ করেছিলেন? আলীর ব্যাখ্যাটা খুবই মোক্ষম।
তিনি বলেন, ‘আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, কারণ অন্য কোনো ধর্মে আমি মানুষের মধ্যে এতো প্রেম-ভালবাসা দেখিনি। একে অন্যকে কোলাকুলি করা, সালাম বিনিময়, এক সাথে প্রার্থনা করা। ভাই-বোন, মা-বাবা, পারিবারিক শিক্ষা মূল্যবোধ ইসলামেই সবেচেয়ে শক্ত। তাই ইসলাম ধর্ম নিয়েছি।’
আলী তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে মোট ৬১ ম্যাচে খেলেন। জয়লাভ করেন ৫৬টিতে আর পরাজয় বরণ করেন পাঁচটিতে। ৫৬ জয়ের ৩৭ টিই নকআউট!
২৯ অক্টোবর ১৯৬০ সালে পেশাদার বক্সিংয়ে প্রথম জয় পান আলী। তারপর ১৯৬৩ পর্যন্ত খেলা ১৯ ম্যাচের সবকটিতে জয়লাভ করেন, যার ১৫ টিতেই নকডআউড হয় প্রতিপক্ষ।
১৯৬০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতা আলী খেলার সময় কখনোই বাকিদের মতোন মুখের সামনে হাত রাখতেন না। তার একেকটি পাঞ্চে মনে হতো মৌমাছি হুল ফুটাচ্ছে। আলী সম্পর্কে জনপ্রিয় একটি বাক্য ছিল, ‘উড়বে যখন প্রজাপতি, হুল ফোটাবে বোলতা।’
১৯৬৫ সালে প্রথম চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার সময় আলীর বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর, যা তাকে এনে দিয়েছিল তৎকালীন সর্বকনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়নের খেতাব।
আমেরিকান আর্মির পক্ষ থেকে দেয়া ভিয়েতনাম যুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ প্রত্যাখান করায় ১৯৬৭ সালে বক্সিং থেকে তিন বছর নিষিদ্ধ হন এবং পাঁচ বছরের জন্য জেল হয় আলীর। অবশ্য ১৯৭০ সালে চার বছর পরই মুক্তি পান এবং খেলায় ফিরেন।
কিছু মানুষ চিরকাল অমর হয়ে থাকেন। মানুষের কর্মই এর একমাত্র কারণ। সেই মানুষদের একজন ‘দ্য গ্রেটেস্ট মোহাম্মদ আলী’। অ্যাথলেটে যেমন একজন সফল মানুষ ছিলেন, ধর্মের প্রতিও ছিলেন ঠিক ততটা অনুরাগী। সবসময় প্রতিবাদ করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, যার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ‘বর্ণবাদ’র বিরুদ্ধে জীবনভর আলীর লড়াই।