
জুবাইর চট্টগ্রাম
মাত্র ১৮০ দিনের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক পদে দায়িত্ব নেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। আজ এ দায়িত্বগ্রহণের ৬০ দিন তথা দুই মাস পূর্ণ হচ্ছে। নির্ধারিত সময়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে প্রথমদিন থেকেই সক্রিয় আছেন তিনি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। অবশ্য কিছু কিছু সমালোচনাও আছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বল্প সময়ে সিটি কর্পোরেশনে ব্যাপক রদবদল করে অনিয়ম না করার বার্তা দেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আবার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অনিয়ম তদন্তে কমিটিও গঠন করে দেন। পাশাপাশি স্বয়ং নাগরিক সমস্যা চিহ্নিতকরণে ‘নগরসেবায় ক্যারাভান’ কমসূচি এবং ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত ও হকারদের বন্দর-কাস্টমস থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায়ে হয়েছেন সোচ্চার। আবার তদবির করে নগরে গণপরিবহন সেবা নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতেও কাজ করেছেন। দুই মাসের কর্মকাণ্ড নিয়ে গতকাল ইতিহাস ৭১ এর সাথে একান্ত আলাপকালে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ছোটবেলা থেকে মানুষের জন্য কাজ করেছি। আজও করছি। আমার অন্য কোন চাওয়া-পাওয়া নাই। কারণ, আমার ছোট্ট সংসার। স্ত্রী কলেজে অধ্যাপনা করে, ভালো অংকের বেতন পায়। নিজের ঘর আছে। আমার বড় ছেলেও কলেজে অধ্যাপনা করে, তারও ইনকাম আছে। আমি মোটামুটি দু’বেলা খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারছি। কাজেই বিত্ত অর্জনের কোন আকাঙ্খা নেই। মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। শহরের সক্ষমতা বাড়াতে চাই। শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমার যে অভিযাত্রা, আমার যে ক্যারাভান যে প্রচেষ্টা তার সাথে থাকার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহবান থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৬০ দিন পূর্ণ হবে। কিন্তু সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির কারণে অফিস করেছি ৫২ দিনের মতো। তবে প্রতিদিনই আমি যুদ্ধ করেছি। একদিকে যুদ্ধ করেছি কর্পোরেশনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাকে শৃঙ্খলায় আনতে এবং দুর্নীতি রোধ করতে। অন্যদিকে চেষ্টা করেছি পরিচ্ছন্ন আবাসযোগ্য শহর করার, ভাঙা রাস্তাগুলোকে সংস্কার করার বিশেষ করে নগরের প্রাইম দুটি সড়ক তথা পোর্ট কানেকক্টিং রোড ও স্ট্র্যান্ড রোড মেরামত কাজ এগিয়ে নেয়ার জন্য। কতটুকু পেরেছি সেটা নগরবাসী দেখেছেন। তারপরও আমি মনে করি, শহর কিছুটা পরিচ্ছন্ন হয়েছে এবং বৃষ্টি না হলে ভাঙা রাস্তাঘাটের সংস্কার কাজ শেষ করে ফেলা যেতো। যদি অক্টোবর মাসে বৃষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই সবগুলো সড়ক চলাচলের উপযোগী করে তুলতে সক্ষম হবো। ক্যারাভান কর্মসূচি। ভিন্নধর্মী কর্মসূচি ‘নগরসেবায় ক্যারাভান’ নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন খোরশেদ আলম সুজন। সপ্তাহের প্রতি বুধবার নিজে স্কুটি চালিয়ে তাৎক্ষণিক নাগরিক সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানও করেন এ কর্মসূচির মাধ্যমে। এ পর্যন্ত ৬টি ক্যারাভান কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। গত ২৪ আগস্ট কর্মসূচির প্রথম দিন বহাদ্দারহাট মোড় আরাকান সড়ক হয়ে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত, ২ সেপ্টেম্বর ফিরিঙ্গিবাজার থেকে নজরুল ইসলাম সড়ক, সদরঘাট রোড, স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে মাঝিরঘাট হয়ে রশিদ বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত, ৯ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালী মোড় থেকে আশারাফ আলী রোড হয়ে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত এবং ১৬ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদ ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর মার্কেট-বেপারীপাড়া হতে শুরু করে বড়পোল- নিমতলা পর্যন্ত, ২৩ সেপ্টেম্বর আন্দরকিল্লাহ থেকে সিরাজদ্দৌলা রোড, চকবাজার, জামালখান ও চেরাগী পাহাড় হয়ে পুনরায় আন্দরকিল্লা পর্যন্ত এবং ৩০ সেপ্টেম্বর ২নং গেইট থেকে বায়েজিদ হয়ে অঙিজেন পর্যন্ত কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রশাসক বলেন, অষ্টম শ্রেণি থেকেই রাস্তায় ঘুরছি। আমার একটা ভেসপা (স্কুটি) ছিল সেটা নিয়ে ঘুরেছি, অনেক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি এই মোটরসাইকেলে বসে। আমি দেখলাম, মেয়রের কাছে একটা লোক সাক্ষাতে এলে অনেক দূর থেকে কষ্ট করে আসেন। তাই আমি চাচ্ছি, কেউ আমার কাছে না আসুক বরং আমিই সবার কাছে যাবো। সেজন্য নগরসেবায় ক্যারাভান কর্মসূচি পালন করছি। তিনি বলেন, ক্যারাভান এটা অ্যাারাবিক কালচার। উট নিয়ে দল বেধে যখন ব্যবসায়িক দল চলে তখন সেটাকে ক্যারাভান বলা হয়। আমাদের কর্মসূচিতে কর্পোরেশনের প্রতিটি বিভাগের লোক নিয়ে একসঙ্গে ছুটে চলছি। যেখানে অসঙ্গতি দেখছি সাথে সাথে সমাধান করছি। যেটা তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব নয়, তার জন্য সময় নির্ধারণ করে দিচ্ছি। প্রশাসক বলেন, ক্যারাভানের সুফল পাচ্ছেন মানুষ । যতদিন দায়িত্বে আছি এটা অব্যাহত থাকবে। এর মাধ্যমে মানুষকে জাগিয়ে দিতে চাই। মানুষকে বলছি, নিজের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসুন। ফুটপাতে গাড়ি চালানো এবং পাশের নালা-নর্দমা পরিচ্ছন্ন থাকুক সেটাও আপনার অধিকার। আপনারা আমাকে জানান, সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমার। চার তদন্ত কমিটি। জ্বালানি তেল সংগ্রহ ও বিতরণ যাচাই-বাছাই, আইসোলেশন সেন্টারের যন্ত্রপাতি ক্রয়, বিতরণ ও স্থাপন এবং সেবা সংক্রান্ত, সৌন্দর্যবর্ধণ প্রকল্প এবং ডোর টু ডোর প্রকল্পের ‘অনিয়ম’ অনুসন্ধানে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় প্রশাসকের নির্দেশে। কমিটি বিভিন্ন অনিয়ম চিহ্নিত করে। জ্বালানি তেল ছাড়া বাকি তিনটি প্রকল্প সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদকালে বাস্তবায়ন করা হয়। তাই প্রকল্পগুলোর বিষয়ে তদন্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন গুঞ্জনও আছে। তবে প্রশংসাও আছে ।