
অনলাইন ডেস্ক : পদ্মা সেতুর পর যোগাযোগ খাতের আরেক স্বাপ্নিক প্রকল্প মেট্রোরেল লাইন-৬ যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে চলতি মাসেই। বিজয়ের মাস হিসেবে ডিসেম্বরের সঙ্গে বাঙালি জাতির আলাদা এক আবেগ, অনুভূতি জড়িত। আর সেই ডিসেম্বর মাসকেই বেছে নেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল উদ্ভোধনের জন্য।
এ প্রকল্পে উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে উদ্বোধনের প্রস্তুতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তাঁর দেওয়া সুবিধাজনক দিনেই উদ্বোধন করা হবে মেট্রোরেল। তবে সেটা ২০ ডিসেম্বরের পর যে কোনো দিন হতে পারে। উদ্বোধনের পর প্রথম সপ্তাহে রেল চলবে দিনে দুবার সকালে ও বিকালে। আধুনিক ও নতুন এই যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে মানুষকে অভ্যস্ত এবং পরিচয় করিয়ে দিতেই প্রথমদিকে দিনে দুবার চলবে রেল। এরপর ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হবে। লাইন-৬ উদ্বোধনের এই প্রস্তুতি সরেজমিন ঘুরে দেখাতে প্রথমবারের মতো গতকাল সাংবাদিকদের নিয়ে এক প্রেস ট্যুরের আয়োজন করে এ প্রকল্পে অর্থায়নকরী ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। অবশ্য এর আগে ডিএমটিসিএল ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বহুবার প্রকল্পের অগ্রগতি ঘুরে দেখানো হয়। গতকালের অনুষ্ঠানে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্পের জেনারেল কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়েইর প্রতিনিধি ফুজিতোমি তাকায়ুকি, প্রকল্পের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মারুবেনির প্রতিনিধি রাসোনো তেতসুয়া, ট্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কাওয়াসাকির প্রতিনিধি মিয়ামোতি হিদিয়াতি। এই মিডিয়া ট্যুরের এক সেগমেন্টে লাইন-৬ এর কাজের বিভিন্ন ধাপের (ঋণচুক্তি থেকে উদ্বোধনের প্রস্তুতি) অগ্রগতি, উদ্বোধনের প্রস্তুতিসহ নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। এ সময় জাইকার বাংলাদেশ মিশন চিফ ইচিগুচি তমোহিদে প্রকল্পের সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক মেট্রোরেলগুলোর একটি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম এই মেট্রোরেল। তবে দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট।
এ ছাড়া মেট্রোরেল লাইন-১ এর মূল কাজও শুরু হবে এ মাসেই। মেট্রোরেল চালু হলে মানুষের জীবনমানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সময় বাঁচবে, অর্থের সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব বাহনে চড়তে পারবেন তারা। পাশের দেশ ভারতের দিল্লিতে পরিচালিত একটি গবেষণার সূত্র ধরে তিনি বলেন, মেট্রোরেল চালুর পর সেখানে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপক সংখ্যায় বেড়েছে। বাংলাদেশেও নারীদের অংশগ্রহণ সেভাবে বাড়বে বলে আমরা মনে করছি।
এ সময় জানানো হয়, মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে সক্ষম। আপাতত যে অংশ চালু হচ্ছে-উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের স্টেশন হবে নয়টি। এতে ভাড়া পড়বে প্রতি কিলোমিটার ৫ টাকা, সর্বনিম্ন ২০ টাকা। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উড়ালপথে চলবে ট্রেন। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের এই পথে মেট্রোরেল সময় নেবে ২০ মিনিট। পূর্ণমাত্রায় চালু হলে এই সময় কমে আসবে ১৬-১৭ মিনিটে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এরপর কমলাপুর থেকে পর্যন্ত মেট্রোরেল এগিয়ে নেওয়ায় মোট ব্যয় বেড়ে হয় প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকায়। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এবং তার পরে কমলাপুর পর্যন্ত অংশ চালু করা হবে বলে জানান এম এ এন ছিদ্দিক। মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা। সেই হিসাবে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভাড়া হবে ৬০ টাকা। অন্যদিকে, উত্তরা নর্থ স্টেশন হতে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত হবে ২০ কিলোমিটারে দূরত্বের জন্য সর্বোচ্চ ভাড়া যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা।
মেট্রোরেলের বিষয়ে জনসাধারণকে ধারণা দিতে দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপোতে স্থাপন করা হয়েছে মেট্রোরেল এক্সিবিশন ইনফরমেশন সেন্টার (এমইআইসি) চালু করেছে ডিএমটিসিএল। প্রদর্শনী কেন্দ্রের পাশাপাশি উত্তরা নর্থ স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কাটা এবং চলাচলের নিয়মাবলি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন জাইকা এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা।