
অনলাইন ডেস্ক : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। পূজা শনিবার (১ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়ে বুধবার (৫ অক্টোবর) বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে। তবে গত বছরের সহিংসতার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারের দুর্গাপূজা ঘিরে তৎপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই পাঁচদিন দেশজুড়ে থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ মন্দির বিবেচনায় তালিকা করে প্রতিটি মণ্ডপ ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। এছাড়া এবার প্রতিটি মণ্ডপে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। টহলে থাকবেন র্যাব-পুলিশের সদস্যরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর কুমিল্লার নানুয়ার দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে যায় এক যুবক। এর জেরে ওই মণ্ডপসহ নগরীর আরও কয়েকটি মণ্ডপে ভাঙচুর চালানো হয়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুরের বিভিন্ন স্থানে। গতবারের এ সহিংসতার বিষয়টি মাথায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে এবার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এবারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত। দুর্গাপূজার সময় কোনো মহলের উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাশকতা ঘটানোর শঙ্কার বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। এমনকি সম্প্রতি দেশজুড়ে অন্তত ৫০ জন যুবকের বাড়ি ছেড়ে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কার বিষয়টিও থাকছে এবারের নিরাপত্তা বিবেচনায়।
সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে মাঠপর্যায়ে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর। যেকোনো গুজব প্রতিরোধে নজর রাখা হচ্ছে সাইবার স্পেসেও। এরপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র্যাবের হেলিকপ্টারসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স। গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলোর প্রবেশপথে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। প্রয়োজনে পুরো এলাকা সুইপিং করবে ডগ স্কোয়াড ইউনিট।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দুর্গোৎসব ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি বা হামলার তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তারপরও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করতে শতভাগ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে বলা হয়েছে। এর ফলে সবাই নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘ্নে এ আয়োজনে অংশ নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার আন্তরিক। আইন-শঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমরাও প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছি। এ ব্যাপারে পূজা আয়োজকদের ২১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে আর্থিক সঙ্গতি সাপেক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে মন্দিরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রেখে বাইরে আলোকসজ্জা পরিহার করতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট মিলে সারাদেশের সব পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মণ্ডপে আনসার, পুলিশ থাকবে টহলে। স্বেচ্ছাসেবকরা সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশ-র্যাবকে ফোন করে জানাবেন। যেসব এলাকায় আগের বছর প্রতিমা ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এবং যেসব মণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে, সেসব স্থানে বাড়তি নজর রাখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি চলছে, যেন কেউ গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করতে না পারে।
র্যাব সূত্র জানায়, পূজা কমিটি ও মণ্ডপের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে র্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন ও ৬০টি ক্যাম্প। সাদা পোশাকে মাঠপর্যায়ে নজরদারির পাশাপাশি তৎপরতা রয়েছে সাইবার স্পেসেও। মণ্ডপকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় থাকবে স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স।
প্রশাসন জানান গুজব রোধে আমাদের সাইবার মনিটরিং চলছে। অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে, ভুয়া পোস্ট দিয়ে সহিংসতার ঝুঁকি সব সময়ই থাকে। গত বছর কুমিল্লায় একটি মণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখা নিয়ে যে ঘটনা হলো এবারও এ রকম অপতৎপরতা থাকতে পারে।
এদিকে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সসদ্যদের প্রাক পূজা, পূজা চলাকালীন ও পূজা পরবর্তী তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দেন বিদায়ী পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সভায় আইজিপি বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এ দেশের মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে বলে আশা করছি।
এদিকে চট্টগ্রামেও মহাসমারোহে দূর্গাপুজা উদযাপনের প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে ।
কমিউনিটি পুলিশের সদস্য ও বিট পুলিশ কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে পূজার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকতেও পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন আইজিপি। এছাড়া যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করার জন্যও অনুরোধ জানান তিনি।