
ইতিহাস৭১ আন্তজার্তিক ডেস্ক:
চলতি মাসে মালয়েশিয়া পৌঁছান বাংলাদেশের প্রথম ব্যাচের কর্মীরা । অনেক অপেক্ষার পর মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছে। এর জন্য সে দেশের সরকার প্রথমে বাংলাদেশের ২৫টি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়। নানা আলোচনা, তদবিরের পর এদের অধীনে ২৫০টি প্রতিষ্ঠান কর্মী পাঠানোর অনুমোদন পায়। তারপর শুরু হয় লোক যাওয়া। এতে সব পক্ষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও নতুন করে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
মালয়েশিয়া ও ঢাকায় জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সূত্র বলছে, আরো ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া সরকারের কাছে তাদেরও লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার তদবির শুরু করেছে। মালয়েশিয়ার দুজন সংসদ সদস্য ঢাকার নতুন এমন চারটি রিক্রুটিং এজেন্সির পক্ষে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশপত্র পাঠিয়েছে। একই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আরো দুটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক মালয়েশিয়ার জহুর বাহরু প্রদেশের সুলতানের সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদবিরের আরজি নিয়ে।
বর্তমানে যে ২৫ এজেন্সি এবং ২৫০টি সহযোগী এজেন্সি মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে তাদের নেতৃত্বে আছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন, সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ ও সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী। এদের অধীনে এরই মধ্যে ৫৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গেছেন।
২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির নতুন গ্রুপ
এখন নতুন আরো ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অনুমোদন পেতে একজোট হয়েছে। এই জোটের দুটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জানান, এরই মধ্যে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের নামের ভিন্ন একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তালিকাটি মালয়েশিয়া সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে। এই জোটের নেতৃত্বে আছেন দেশের একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে আছেন বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে ঢুকতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি বিন ইয়াকুবের কাছে তদবির করার জন্য সে দেশের সংসদ সদস্যসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যবহার করছেন তারা। গত ২ আগস্ট দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি বিন ইয়াকুবকে চিঠি দিয়েছেন মালয়েশিয়ার সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নিজার বিন জাকারিয়া ও হাজি মোহাম্মদ সেলিম বিন শরিফ। মোহাম্মদ নিজার চিঠিতে ঢাকার মাহী ওভারসিজ (আরএল ১২৯৯), সাইফুল এন্টারপ্রাইজ (আরএল-০১৯৮), মোহাম্মদ সেলিম এ-প্লাস ইন্টারন্যাশনাল (আরএল ১০৮২) ও টাওয়ার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে (আরএল ৪৯৯) মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিতে অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাওয়ার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ইশহাক খান গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতো সেরি আবুল কালাম তাঁর ব্যাবসায়িক অংশীদার। তিনিই তদবির করে মালয়েশিয়ান সংসদ সদস্যকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠিটি পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে মালিকরা কেউ ফোন ধরেননি।
জহুর বাহরু প্রদেশের সুলতানের সঙ্গে বৈঠক
মালয়েশিয়ার জহুর বাহরু প্রদেশের সুলতান ইব্রাহিম ইসমাইল ইবনে আলমারহুম সুলতান ইস্কান্দারের কাছে তদবির করছে বাংলাদেশের দুই জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। আল অর্চার্ড ইন্টারন্যাশনাল মালিক ও বায়রার সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ডা. মোহাম্মদ ফারুক এবং রিয়াজ ওভারসিজের মালিক ও বায়রার সাবেক মহাসচিব রিয়াজুল ইসলাম গত মাসে সুলতানের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর অনুমোদন পাওয়া ২৫ এজেন্সির সঙ্গে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নামও যুক্ত করতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও মানবসম্পদমন্ত্রীকে বলার জন্য সুলতানকে অনুরোধ করেন।
জানতে চাইলে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, গত ১৪ জুলাই তিনি ও ডা. ফারুক জহুর বাহরু প্রদেশের সুলতানের সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানকে লোক পাঠানোর অনুমতি দিতে অনুরোধের পাশাপাশি বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়েও আলাপ করেন তাঁরা।
জানতে চাইলে বায়রার সদস্য ও সংসদ সদস্য লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের আন্তরিক প্রষ্টোয় শ্রমবাজারটি খুলেছে। মালয়েশিয়া আমাদের দ্বিতীয় বৃহৎ শ্রমবাজার। সুতরাং এই বাজার ধরে রাখতে সব পক্ষকে আন্তরিক থাকতে হবে এবং সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘নতুন করে ২৫টি এজেন্সি কর্মী পাঠানোর অনুমতি পাওয়ার তদবির করছে বলে বাজারে গুজব আছে। এর সত্যতা কতটুকু তা জানি না। ’
স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ চেয়ে চিঠি
মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ নিতে হয়। সেই কাজ পাওয়ার জন্য বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার, সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, সাবেক অর্থসচিব মো. ফখরুল ইসলাম, মিজানুর রহমানসহ পাঁচজন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। গত ২৭ জুলাই এই চিঠি দেওয়া হয়। বর্তমানে অন্য প্রতিষ্ঠান এই কাজ করছে।
এসব তৎপরতা জনশক্তি রপ্তানির জন্য কতটুকু সহায়ক বা ক্ষতিকর, তা জানতে চাইলে বায়রার (সম্মিলিত সমন্বয় ফ্রন্ট) মহাসচিব মোস্তফা মাহবুব বলেন, বাংলাদেশ থেকে এক হাজার ৫২০টি এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়া সরকারকে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে দেশটির সরকার ২৫টি এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন সিন্ডিকেট যেসব তদবির ও তৎপরতা চালাচ্ছে এর কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ান সরকারকে সব রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা দিয়েছি। কারা কাজ পাবে তা সেই দেশের সরকারই ঠিক করে। আমাদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘এখন যদি সে দেশের কেউ এই প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেও থাকে তা আমাদের দেখার কথা নয়, সেটা তাদের বিষয়।’