শনিবার-১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চসিকের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি উদ্বোধনকালে মেয়র

চসিকের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি উদ্বোধনকালে মেয়র

নিউজ ডেস্কঃ

সবুজ ও পরিবেশ ঘাতকরা করোনারচেয়েও ভয়ংকর ভাইরাস চট্টগ্রাম -০৫ জুলাই-২০২০
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ. ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, সবুজ উদ্ভিদ জগত মানবকুল সহ জীব-প্রাণীর বেঁচে- থাকার অবলম্বন। এ সুবজ উদ্ভিদ মানব ও প্রাণীকূলকে বেঁচে থাকার অক্সিজেন জোগায় এবং নির্গত হাইড্রোজেন টেনে নিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি জগতের ভারসাম্য রক্ষা করে। এ সবুজ উদ্ভিদের প্রতি অশেষ ঋণ থাকা সত্বেও আমরা কতটুকুই বা তা অনুধাবন করি ! আজ লাগামহীন সবুজ উদ্ভিদ নিধনের ফলে অক্সিজেন শূন্যতার সৃস্টি হচ্ছে। প্রকৃতির প্রতি মানুষের নির্দয় ও অবিবেচক আচরণের ফলেই আমরা আজ করোনাকালের দূর্যোগের ঘনঘটায় বিপর্যস্থ। মনে রাখতে হবে সবুজ উদ্ভিদ ও পরিবেশ ঘাতকরা করোনার চেয়ে ভয়ংকর ভাইরাস। এই সত্যকে উপলব্ধি করে চসিকের উদ্যোগে নগরীতে সবুজায়নের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে চলতি বর্ষার মৌসুমেই ৫০ লক্ষ চারাগাছ রোপন করা হবে। তিনি আজ সকালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মিউনিসিপ্যাল স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনে বৃক্ষরোপন কর্মসূচীর উদ্বোধন কালে একথাগুলো বলেছেন। তিনি বৃক্ষের গুরুত্ব, উপযোগিতা, কার্যকারিতা এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধে একে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি হিসেবে অবিহিত করে বলেন, আমরা বহুবার প্রমাণ পেয়েছি যে, সবুজ উদ্ভিদ মানব ও প্রাণি জাতিকে প্রাকৃতিক মহাদূর্যোগ থেকে রক্ষা করে। এই তো কিছুদিন আগেও আম্ফান নামক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়টি তীব্র গতিতে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসার পথে সুন্দরবনের বৃক্ষ বেষ্টনী তার গতি রুদ্ধ করে দূর্বল করে দেয়। এই কারণে আম্ফানের আগ্রাসনে কোলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গ লন্ডভণ্ড হলেও করোনাকালে ভয়াভহ ক্ষতি থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। আজ এটাই প্রমাণিত হয় যে, সুন্দরবনের এই বৃক্ষ বেষ্টনী না থাকলে বাংলাদেশে মানুষের হাহাকার ভারি হয়ে উঠতো। আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, মানবকুল ও প্রাণি জগত উদ্ভিদ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করলেও একমাত্র উদ্ভিদই নিজে থেকেই নিজের খাদ্য সংগ্রহ করে। শুধু তাই নয় ওষুধ, বস্ত্র ও বাসস্থান যোগায়। ঝড়-ঝঞ্জার ও জলোচ্ছ¡াস থেকে রক্ষা করে। শিল্পের কাচাঁমাল ও জ্বালানী যোগায়। শব্দ ও বায়ু দুষণ থেকে রক্ষা করে। সময়মত বৃষ্টিপাত ঘটাতে সহায়তা করে। উঞ্চায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে। তাই পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই। তিনি ক্ষোভ উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল রক্ষায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে যে প্যারাবন বেষ্টণী গড়ে তোলা হয়েছে তা ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে। এই প্যারাবন উজাড় করে সেখানে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করা হচ্ছে। এর ফলে আমাদের উপকূল অরক্ষিত বলে প্রাকৃতিক দূর্যোগে এসকল জনপথ বার বার লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। মেয়র আরো উল্লেখ করেন যে, এই চট্টগ্রাম নগরীতেই অনেকগুলো শতবর্ষী বড় বড় বৃক্ষ ছিল। এক শ্রেণির দস্যু প্রকৃতির মানুষ যারা সরকারি জায়গা থেকে এই শতবর্ষী বৃক্ষগুলোকে একে একে নিধন করেছে এবং এখনও করা হচ্ছে। এ কারণে চট্টগ্রামে যে ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছিল তা আজ অনেকাংশে লুন্ঠিত। তিনি প্রশ্ন করেন যে, লক ডাউনের মধ্যেও পাহাড় নিধন কেন হয়েছে, কেন বৃক্ষ নিধন হয়েছে, কেন জবর দখলের মাধ্যমে সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে? কেমন করে এভাবে প্রকৃতি বিনাশ হলো তার জবাব অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জনগণ চাইতে পারে। এই দাবীর সাথে সকলকে কন্ঠ মেলাতে হবে। সিটি মেয়র বৃক্ষরোপনে অতুলনীয় অবদানের জন্য একাধিকবার জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হওয়ার কৃতিত্বের কথা তার ধারাবাহিকতায় রক্ষায় চট্টগ্রাম নগরীর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসাকেন্দ্র, ওয়ার্ড অফিস, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মিড আইল্যান্ড, নদীর পাড়,কবরস্থান, ঘরের আঙ্গিনা এবং ছাদবাগানসহ সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প স্থানে বৃক্ষরোপনের ব্যপক পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি এই কর্মসূচী সফল করার জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহবান জানান। এ সময় প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম, সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাহেদুল কবির চৌধুরী, কৃষ্ণকুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহমেদ হোসাইন, বন কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন আলী জয়সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন শেষে সিটি মেয়র শিক্ষার্থীদের হাতে ৫শত চারাগাছ বিতরণ করেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype