
করোনা পরীক্ষায় টাকা: স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অরাজকতার আলামত?
————————————————————————–
মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম :
বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী মহাসংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনা ভাইরাস। এই মরণব্যাধিতে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫ লক্ষ মানুষ। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মারাত্মক রূপ নিয়েছে এই মহামারী। দিনদিন বাড়ছে সংক্রমণের হার। কিন্তু সে হিসেবে বাড়েনি পরীক্ষার হার। যেখানে চীনে ১৯ দিনে ১ কোটি করোনা পরীক্ষা করেছে, সেখানে আমাদের দেশে সেই সংখ্যা দৈনিক চৌদ্দ/পনেরো হাজারের ঘরে ঘুরছে। আর সাড়ে তিনমাসেরও অধিক সময়ে মাত্র টেস্ট হয়েছে ১ লক্ষ ২০ হাজারের সামান্য বেশি। সংখ্যায় যাই হোক, এতদিন আমাদের দেশে মোটামুটি ধনীদের মতো গরীবদেরও করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ ছিল। অর্থাৎ ধনী-গরীব সবারই টেস্ট হতো বিনা খরচে আর এখন থেকে টাকার বিনিময়ে করাতে হবে। সরকার খরচ বহন করবে না। বাসায় গিয়ে নমুনা নিলে ৫০০ টাকা আর বুথ ও হাসপাতালে ২০০ টাকা দিয়েই পরীক্ষা করাতে হবে।
চলতি সপ্তাহেই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। গত কয়েকদিন ধরে এমনই সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে দেশের প্রথম শ্রেণির মিডিয়াগুলোতে।
যেখানে বিশ্বের সব দেশে সরকার নিজেদের জনগণকে বাঁচানোর জন্য বাসা থেকে ধরে ধরে নিয়ে করোনা টেস্ট করছে আর সেখানে আমাদের মতো গরীব জনগণের পরীক্ষা করাতে টাকা লাগবে-এটি আসলে কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভাবার বিষয় নিশ্চয়ই।
আমাদের দেশে বর্তমান সময়ে প্রাণ রক্ষাকারী নাপা ঔষধ এবং জীবাণু ধ্বংসকারী সেভলন, ডেটল ইত্যাদি নিয়ে ইতোমধ্যে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। মানুষ আরও বেশি মৃত্যু বরণ করতে থাকলে হয়তো কাফনের কাপড়েরও দাম বেড়ে যেতে পারে। আর যেহেতু দেশে দিনদিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা কোন সুবিধাভোগী করোনা টেস্টের বিপরীতে রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ইনকামের নতুন পথ তৈরি করার মতো গর্হিত কাজের পরামর্শ দিচ্ছেন না তো?
এমনিতে দেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে এ খাতটি প্রায় ভেঙে পড়েছে। বিষয়টি আগে সাধারণের নজরে না আসলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরে মানুষ পুরোপুরি বুঝে ফেলেছে। সাধারণ মানুষ বিনা চিকিৎসায় মরছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ছোট বড় কেউই পাচ্ছেন না চিকিৎসাসেবা। এ নিয়ে ফুঁসছেন মানুষ। করোনা টেস্টে টাকা নেওয়ার বিষয়টি মরার ওপর খাড়ার ঘার মতোই হবে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষগুলোর জন্য।
তাহলে লকডাউনের কারণে অর্থনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থায় পড়া আমাদের মতো গরীবদের করোনা হলে বিনা পরীক্ষায় ধুঁকে ধুঁকে মরতে হবে? তাদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই?
আশা করব, এমন লজ্জাজনক ও অমানবিক কাজ থেকে সরকার সরে আসবে।