
অনলাইন ডেস্ক
অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও খ্যাতিমান ড্রামার সুব্রত বড়ুয়া রনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে আজ বুধবার ( ২৬ মে) ভোর ৫টায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
প্রায় দেড় বছর ধরে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন সোলসের এই খ্যাতিমান ড্রামার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার বড় ভাই শৈবাল বড়ুয়া। এই সংগীত তারকার মৃত্যুতে চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন তিনি।
সুব্রত বড়ুয়া রনি সংগীতের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন গত পাঁচ দশক ধরে। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রামের কয়েকজন গান অন্ত-প্রাণ তরুণ সাজিদ, জিলু, নেওয়াজ, সুব্রত বড়ুয়া রনি ও তাজুল মিলে ‘সুরেলা’ নামে একটি গানের দল গঠন করেন। ১৯৭৩ সালে সেই ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘সোলস’।
দীর্ঘ-যাত্রায় সোলস ব্যান্ড ও সুব্রত বড়ুয়া রনির সঙ্গী ছিলেন নকীব খান, পিলু খান, তপন চৌধুরী, নাসিম আলী খান, কুমার বিশ্বজিৎ ও আইয়ুব বাচ্চু। আর এখন আছেন পার্থ বড়ুয়া।
সোলস (Souls) মূলত দেশের একটি জনপ্রিয় পপ মিউজিক ব্যান্ড। এটি চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ঢাকায় চলে আসে। গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যান্ডটি বেশ কিছু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছে শ্রোতাদের।
স্বাধীনতার ঠিক পরের বছর, ১৯৭২ সাল। দেশ তখন সবদিক দিয়েই অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, শিল্প-সাহিত্য-সংগীতেও অচলাবস্থা। সে সময় চট্টগ্রামের কয়েকজন গানপাগল তরুণ সাজিদ, জিলু, নেওয়াজ, রনি বড়ুয়া ও তাজুল মিলে গানের দল গঠন করে যাবতীয় অচলাবস্থাকে পাশ কাটাতে চাইলেন। তখনকার সনাতনীয় প্রথাগত মিউজিকের বাইরে গিয়ে বিদেশী ব্যান্ডগুলোর অনুপ্রেরণায় ‘ওয়েস্টার্ন রক’ চর্চার এবং রক-মিউজিকের সাথে দেশের তরুণদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার তাগিদ থেকেই তারা অগ্রসর হন।
স্বাভাবিকভাবে তাদের এই কাজে অগ্রসর হওয়া সহজসাধ্য ছিলো না। বাংলা গান তখন সীমাবদ্ধ ছিলো শাস্ত্রীয়-ফোক, রবীন্দ্র-নজরুল, বাউল-লোকগান-আধুনিক মেলোডিয়াস গানের মধ্যে। শুধুমাত্র মনোবলকে পুঁজি করে নতুন কিছু করার স্পৃহা থেকেই চট্টগ্রামে ১৯৭২ সালে প্রাথমিকভাবে ‘সুরেলা’ নামে তারা ব্যান্ডযাত্রা শুরু করেন। তখনকার দিনে বড় বড় ক্লাব-হোটেলে ছাড়া কোথাও গানবাজনা হতো না। আর সেইসব জায়গাতে শুধুমাত্র ইংরেজি গানের কাভার করা হতো, বাংলা গান ছিলো ব্রাত্য। তাই ব্যান্ডগুলোর নামও ইংরেজিতে রাখার চল শুরু হয়েছিলো। এসবকে বিবেচনায় নিয়ে ১৯৭৩ সালে ব্যান্ডের নাম পাল্টে ‘সোলস’ রাখা হলো, বাংলার যার অর্থ হয় ‘আত্মার সমন্বয়ে’।
১৯৭২ সালের শেষদিকে লুলু ব্যান্ড ত্যাগ করায় নকীব খান এই ব্যান্ডে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর নকীবের ছোটো ভাই পিলু খানও যোগ দেন সোলসে। কিছুদিন পর তপন চৌধুরী সোলসে নাম লেখান। তখনও সোলসের তৎপরতা শুধুমাত্র চট্টগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। প্রথম প্রথম শুধু ইংরেজি গান কাভার করলেও তারা একটা সময় নিজেদের গান করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম গানটি কম্পোজ করেছিলেন নকীব খান নিজেই।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে পপ মিউজিকের একটি প্রতিযোগিতায় নাম লেখায় ‘সোলস’, জিতেও নিয়েছিলো সেরার পুরস্কার। মূলত সেই থেকেই শুরু হয়েছিলো সোলসের জয়যাত্রা। ১৯৭৭ সালে ব্যান্ডটিতে যোগ দিলেন নাসিম আলী খান। কুমার বিশ্বজিৎ এবং গিটারম্যান আইয়ুব বাচ্চু সেসময় ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে ছিলেন। ১৯৮২ সালে সোলসে যোগ দেন এবি। আইয়ুব বাচ্চুকে ব্যান্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন পিলু খান। এবি শুরুতে ছিলেন একাধারে গিটারিস্ট-ভোকালিস্ট-লিরিসিস্ট-কম্পোজার। আশির দশককে সোলসের স্বর্ণযুগ বলা হয়, কারণ সে সময়ে তাদের ব্যান্ড লাইনআপ ছিলো দুর্দান্ত।
নকীব খান, পিলু খান, তপন চৌধুরী, নাসিম আলী খান, আইয়ুব বাচ্চু, রনি বড়ুয়া, নেওয়াজ, সাজেদ। নামগুলো পড়লেই তাদের সে সময়ের লাইনআপ সম্পর্কে বুঝতে পারার কথা। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বেইজিস্ট তানিমও কিছুকাল সোলসে বাজিয়েছেন।