
নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশ জুড়ে আলোচনা চলছে চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে আবারও তোলপাড় । হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন মিতুর স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তার।
গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে বাবুলের পরকীয়া, কল রেকর্ডসহ বিভিন্ন আলামত। তবে বাবুল-মিতু দম্পতির সন্তানদের খোঁজ খবর নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। গত সাড়ে ৩ বছর ধরে বাবুল-মিতুর ২ সন্তান কোথায় আছে, সে খবর জানেন না মিতুর মা-বাবা।
বাবুল-মিতু দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে মাহির আক্তার, তার বর্তমান বয়স ১২ বছর। মেয়ে নিখাদ আক্তার তাবাসুম, তার বর্তমান বয়স ৯ বছর।
এ বিষয়ে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন জানান, তিন বছর ধরে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি তারা।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে কথা হয়েছিল। বাবুল আক্তার ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের (ব্লক: সি, বাড়ি নম্বর: ২২, লেভেল: ৭) যে ঠিকানা দিয়েছিল, সেই ঠিকানা ভুল ছিল।
মোশারফ হোসেন আরও জানান, বাবুলের আগের বাসার ঠিকানায় আমি ও আমার স্ত্রী নাতি-নাতনিদের খোঁজ খবর নিতে গেলে বাবুলের বাসার দারোয়ান আমাদের ঢুকতে দিতো না।
এমনকি আমরা গেলে বাবুলের লোকজনরা আমাদের হেনস্থা করতো। আমরা নাতি-নাতনিদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। আমাদের নাতি-নাতনিদের বর্তমানে কোথায় আছে, কার কাছে আছে তা জানতে অনেক মাধ্যমেই চেষ্টা করেছি।
সর্বশেষ বাবুলের ভাই সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ড. শাহাবুল সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও বাবুলের বর্তমান ঠিকানা দেননি। বাবুল-মিতুর সন্তানরা কোথায় আছে তা তিনি জানেন না বলে আমাদের জানান।
মিতুর বাবার অভিযোগ বিষয়ে বাবুলের ভাই ড. শাহাবুল মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে মুনাভীর বলে পরিচয় দেন। তিনি বাবুল আক্তারকে চিনেন না বলে জানান।
মিতু হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার তার শ্বশুর মোশারফের বাসায় ওঠেন। পরে বাবুল আক্তার ঢাকার মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) পদে চাকরি নেন।
এরপর থেকে আলাদা বাসায় দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন। প্রথম বছর বাসা থেকে সন্তানদের পড়ালেখা করালেও ২০১৮ সাল থেকে একটি ডে কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করান মাহির ও নিখাদকে।
চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, বাবুল আক্তার পুলিশকে তার বাসার ভুল ঠিকানা দিয়েছেন।
পরে বাবুল আক্তারের গাড়িচালকের সহায়তায় সঠিক ঠিকানা খুঁজে বের করা হয়। কিন্তু মোহাম্মদপুরের ওই বাসায় বাবুলের সন্তানদের পাওয়া যায়নি। মিতু হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারের ছেলের সঙ্গেও কথা বলবে পিবিআই।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরের জিইসি মোড়ে সাত বছরের ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন মিতু। এ সময় ছেলেকে ধরে রেখেছিল বাবুল আক্তারের সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, যাকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে।
ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ছেলে মাহিরের বক্তব্য নেওয়া হবে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, বাবুল আক্তার এখন পুলিশ হেফাজতে আছেন। রিমান্ড শেষে পিবিআই তার ছেলের সঙ্গে কথা বলবে।
পাশাপাশি মিতু হত্যা মামলার দুই আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা ও খায়রুল ইসলাম কালুসহ ৮ আসামির ব্যাপারে দেশের সব বিমানবন্দর ও সীমান্তে তথ্য পাঠাবে পিবিআই। মামলার কোনো আসামি যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
১৩ মে (বুধবার) চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে দায়ের হওয়া নতুন একটি মামলায় নিহতের স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
এর আগে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের বিরুদ্ধে বন্দরনগরীর পাঁচলাইশ থানায় নতুন একটি মামলা করেন মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়।
ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন
পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম।