শুক্রবার-৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১১ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় দাফন-কাফনে শেষ ভরসাস্থল গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ

শেষ ভরসা হয়ে উঠেছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণকালে দাফন-কাফন ও সৎকারে । সন্তান, স্বজন, সহকর্মী, প্রতিবেশীরা যখন দূরে দূরে তখন হাসিমুখে এগিয়ে আসছে এ কমিটির সদস্যরা।

পিপিই পরে করোনা পজেটিভ ও করোনা উপসর্গের রোগীকে হাসপাতাল বা বাসা থেকে নিয়ে গোসল, জানাজা, দাফন বা সৎকার সবই বিনামূল্যে করছে তারা।

গাউসিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও করোনায় মৃতের দাফন- রোগী সেবা কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার জানান, আমরা ১৮ এপ্রিল (রবিবার) পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১ হাজার ৯৩৬ জন এবং সারাদেশে ২ হাজার ৩৫৮ জনকে দাফন সহায়তা দিয়েছি।

এর বাইরে ২৯ জন হিন্দু, ৩ জন বৌদ্ধকে সৎকারে সেবা দিয়েছি। আমাদের দাফন-কাফন সেবা পাওয়ার মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ৩৫ জন, অজ্ঞাত পরিচয়ের মরদেহ ছিল ১৩ জন।

অক্সিজেন সেবা দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৮৬৭ জনকে। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন সেবা দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬৮৯ জনকে। ভ্রাম্যমাণ কোভিড টেস্ট সুবিধা পাচ্ছে দৈনিক ৩০ জন।

তিনি জানান, গত ১৬ এপ্রিল গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের মানবিক স্বেচ্ছাসেবক টিম একদিনেই ১৫ জনের গোসল কাফন-দাফন এবং অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা দিয়েছে।

রাত ২ টার পর থেকে শুরু হয় আমার কাছে একের পর এক বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যাওয়া লোকজনের স্বজনদের ফোন আসা, যা অনবরত দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বদিউল আলম, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মাস্টার, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের চাচি ফাতেমা বেগম,

কর আইনজীবী আহসান হাবিব, বিমা কর্মকর্তা গিয়াসউদ্দিন, বড় উঠানের হাফেজ আহমদ, ডুমুরিয়ার মোহাম্মদ জুবায়ের, পটিয়ার মোহাম্মদ উল্লাহ্, গুমান মর্দনের মোহাম্মদ ইসমাইল,

নোয়াপাড়ার নাসিমুল গনিসহ মোট ১৫ জন নারী পুরুষের মরদেহ গোসল-কাফন এবং অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা সহ দাফনের দায়িত্ব পালন করেছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকরা।

এসব রোগীর অধিকাংশই ছিলেন করোনা পজেটিভ কিংবা করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা। ২০২০ সালে প্রথম লকডাউন সময়ে ১ লাখ অসহায় পরিবারকে সহায়তার পর

দ্বিতীয় লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত দেড় লাখ পরিবারকে ইফতার ও সেহেরি সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে মানবিক সংগঠন।

গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ ( কমিশনার) চলমান এবং ঘোষিত সব কর্মসূচি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী গাউসিয়া কমিটির মানবিক কার্যক্রম প্রসঙ্গে বলেছেন, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে দাফন ও সৎকারে দৃষ্টান্ত ইসলাম ও মানবতার অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে গাউসিয়া কমিটি।

ধর্ম–বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে এভাবে দিন–রাত করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মরদেহ দাফন ও সৎকারে ছুটে চলেন তারা। অশেষ ভালোবাসা ও শুভকামনা এ নির্ভীক সেচ্ছাসেবকদের জন্য।

যেখানে ধর্মের দোহাই দিয়ে এই মহামারিতে একদল লেবাসধারী ধর্মব্যবসায়ীরা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, মুসলিমদের জানাজা না পড়ার হুমকি, সংঘাত, মিথ্যাচার, উগ্রবাদ, হানাহানি,

মসজিদ আর মন্দির ভাঙার মতো অনৈসলামিক ক্রিয়াকলাপে ব্যস্ত। অন্যদিকে প্রকৃত ইসলামের মর্মবাণী বুকে ধারণ করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের অন্তিম যাত্রার সঙ্গী গাউসিয়া কমিটি। এটাই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা। এটাই মানবতার ধর্ম ইসলামের আদর্শ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype