ডেক্স রিপোর্ট
সব শঙ্কা অতিক্রম করে অবশেষে শুরু হলো বইপ্রিয় বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে
। করোনাভাইরাস মহামারির দম বন্ধ করা সময়ে একটু প্রাণখোলা পরিবেশে বইপ্রেমী মানুষের নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ হলো।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় মেলার দুই অংশের দ্বার খুলে দেওয়া হয় দর্শনার্থীদের জন্য। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মেলায় প্রবেশ করতে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষের জন্য আলাদা প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে। সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে গেলে আর্চওয়ের সামনে প্রথমে তাপমাত্রা মাপা হয়। আর্চওয়ে পেরিয়ে যাওয়ার পর রাখা হয়েছে হ্যান্ডস্যানিটাইজার। দণ্ডায়মান যন্ত্রে পা দিয়ে চাপ দিলে বিশুদ্ধকরণ তরল চলে আসছে হাতে। জীবাণুমুক্ত হয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, বিশাল পরিসর; প্রচুর ফাঁকা জায়গা রেখে স্টল বিন্যাস করা হয়েছে। তবে মেলার প্রথম দিন সব স্টলের সাজসজ্জার কাজ এখনো শেষ হয়নি। অনেক বছর পর এ রকম অবস্থা আবার দেখা গেল। বইমেলা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা, নির্ধারিত ফেব্রুয়ারি মাসে মেলা শুরু না হয়ে দেড় মাস পর মেলা শুরু হওয়া, এসবেরই একটা ছাপ পড়েছে যেন।
মূলত স্বাধীনতাস্তম্ভকে ঘিরে এবারের মেলার আয়োজন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অমর একুশের স্মৃতিবাহী এই বইমেলা এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বাধীনতার মাস মার্চে এসে। সেই জায়গায় হচ্ছে মেলা, যেখান থেকে শুরু হয়েছিল মাতৃভাষা রক্ষার প্রতিবাদ, যেখানে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন স্বাধীনতার ডাক—ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, যেখানে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি বাহিনীর ৯৩ হাজার সদস্য। আর এমন সময়ে এই মেলা হচ্ছে যখন দেশে উদযাপিত হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকীর উৎসব। ইতিহাসের দুই মাহেন্দ্রক্ষণ স্মরণে, ঐতিহাসিক স্থানে, মহামারির দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আয়োজিত এবারে মেলা নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই বিষয়গুলো মনে রেখেই সাজানো হয়েছে এবারের মেলা।
সন্ধ্যার পর মেলা প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হলো মনোরম এক পরিবেশের। স্বাধীনতাস্তম্ভের ভেতর থেকে প্রস্ফুটিত বর্ণিল আলোর বিচ্ছুরণ স্বচ্ছ পানিতে পড়ে এক মোহময় পরিবেশ তৈরি করে, যা উপভোগের সুযোগ আগে কারো হয়নি।
স্তম্ভের জলাধারের উত্তর পাশে স্থান দেওয়া হয়েছে প্যাভিলিয়নগুলোকে। পূর্ব ও পশ্চিম পাশে স্থান দেওয়া হয়েছে এক থেকে তিন ইউনিটের স্টলগুলোকে।
মেলায় এসেছে ‘আমার দেখা নয়াচীন’-এর ইংরেজি অনুবাদ
মেলার প্রথম দিন নতুন বইয়ের খবর প্রচার করা হয়নি। তবে মেলার প্রথম দিন গতকাল প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আমার দেখা নয়াচীন’-এর ইংরেজি সংস্করণ। গত বছর বেরিয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমান রচিত ‘আমার দেখা নয়াচীন’। এবার প্রকাশিত হলো ইংরেজি সংস্করণ। ‘নিউ চায়না ১৯৫২’। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বইটির অনুবাদ করেছেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হাসিনা ও রেহানা : অ-রূপকথার দুই বোন : বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে তাঁর দুই মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি এই দুই বোনের সাহসী ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কথা তুলে ধরেছেন এই গ্রন্থে। বইটি প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। মূল্য ৩৫০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধসমগ্র : বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গল্প ও উপন্যাসের সংকলন তিন খণ্ডে মেলায় এনেছে ‘সময়’। প্রতিটি খণ্ডের দাম এক হাজার টাকা।
দেশ পরিচয় : এই গ্রন্থে শাশ্বত বাংলার বা অভিন্ন বঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে একসময়ের পূর্ববঙ্গ বর্তমান বাংলাদেশকে নিয়ে আলোচনা করেছেন মুনতাসীর মামুন।
আজ শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন। মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়, চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।