ইতিহাস ৭১ বিনোদন ডেস্ক : ভারতীয় ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র রবীন্দ্র জাদেজা, যিনি এবার আইপিএল ফাইনালে তার প্রমাণ আবারও রেখেছেন তিনি। শেষ দুই বলে ১০ রান নিয়ে চেন্নাই সুপার কিংসকে শিরোপা এনে দিয়েছেন জাদেজা।
ফাইনালে মুখোমুখি হয় চেন্নাই সুপার কিংস ও গুজরাট টাইটান্স। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে তখন টানটান উত্তেজনা। শেষ দু’বলে দরকার ১০ রান। ঠিক এই সময় ত্রাতা হয়ে ফেরে জাদেজা। ওই দুই বলে ছয় এবং চার মেরে চেন্নাইয়ের শিরোপা নিশ্চিত করেন। ম্যাচ শেষে স্টেডিয়ামেই তৈরি হয় নাটকীয় মুহূর্ত, যার সাক্ষী থাকেন গ্যালারিতে উপস্থিত ক্রিকেট অনুরাগীরা।
ম্যাচ জেতার পর মাঠে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন চেন্নাইয়ের ক্রিকেটাররা। জাদেজার পারফর্ম্যান্সের জন্য তাকে শুভেচ্ছাবার্তাও জানান অনেকে। হঠাৎ মাঠে উপস্থিত সকলের সামনে জাদেজার পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন এক নারী। সচরাচর এমন দৃশ্য খেলার মাঠে দেখা যায় না। কিন্তু চলতি বছরের আইপিএলের শেষ ম্যাচে এমন ঘটনাই ঘটল। এই ঘটনার নেপথ্যে যিনি ছিলেন তিনি আসলে জাদেজার স্ত্রী রিভাবা।
২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল সাতপাকে বাঁধা পড়েন জাদেজা ও রিভাবা। একজন ক্রিকেটদুনিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অন্যজনের সঙ্গে দূরদূরান্তে ক্রিকেটজগতের কোনও সম্পর্ক নেই। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন রিভাবা। ক্ষমতাসীন বিজেপির বিধায়ক তিনি।
জাদেজা ও রিভাবার প্রেমকাহিনি একেবারেই রোম্যান্টিক ঘরানার হিন্দি ছবির মতো। বিয়ের প্রতি বিশেষ কোনও ইচ্ছা ছিল না জাদেজার। কিন্তু রিভাবার সঙ্গে আলাপের তিন মাসের মধ্যেই এক ছাদের তলায় জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
জাদেজার বোনের বান্ধবী ছিলেন রিভাবা। এক সামাজিক অনুষ্ঠানে রিভাবাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন জাদেজার বোন। রিভাবার সঙ্গে তার আলাপ করিয়ে দিতে চাইছিলেন ক্রিকেটারের বোন। কিন্তু প্রথমে তাতে সায় ছিল না জাদেজার।
একাধিকবার অনুরোধ করার পর বোনের কথা শোনেন জাদেজা। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আসা রিভাবার সঙ্গে আলাপ করেন তিনি। প্রথম আলাপেই রিভাবার প্রেমে পড়ে যান জাদেজা। ক্রিকেটারকেও ভাল লেগে যায় রিভাবার।
প্রথম আলাপই যেন শেষ আলাপ হয়ে না থেকে যায় তাই ফোন নম্বর আদান-প্রদান পর্ব চলে জাদেজা ও রিভাবার। বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে প্রেমে গড়াতে বেশি সময় লাগে না। প্রথম আলাপের তিন মাসের মধ্যেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তারা। ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাগদান পর্ব সারেন জাদেজা ও রিভাবা। আংটিবদল হওয়ার দু’মাস পর ওই বছরের ১৭ এপ্রিল গাঁটছড়া বাঁধেন তারা।
১৯৯০ সালের ২ সেপ্টেম্বর গুজরাটের রাজকোটে জন্ম রিভাবার। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর গুজরাট থেকেই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেননি রিভাবা।
রিভাবার মা রেলকর্মী এবং বাবা ব্যবসায়ী। সমাজসেবার সঙ্গেও যুক্ত রিভাবা। নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন তিনি। ২০১৮ সালে বিজেপির হয়ে কাজ করতে শুরু করেন রিভাবা।
২০১৮ সালে বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েন রিভাবা। কানাঘুষা শোনা যায়, গুজরাটের জামনগরে এক পুলিশ কর্মকর্তার বাইককে ধাক্কা মেরে দেয় রিভাবার গাড়ি। ঘটনাস্থলে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন রিভাবা।
পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রিভাবা। তার অভিযোগ, ঘটনাস্থলে ঝামেলার সময় রিভাবার চুল ধরে টানেন সেই পুলিশ। অন্যদিকে ওই পুলিশকর্মীও রিভাবার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের দাবি, রিভাবা অসতর্কভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। রিভাবার অভিযোগের উপর ভিত্তি করে ওই পুলিশকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অবশ্য জামিনে ছাড়া পান তিনি।
২০২২ সালের নভেম্বরে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন রিভাবা। ভোটে জিতে বিজেপি বিধায়ক হন। ২০১৬ সালে বিয়ের এক বছর পর কন্যাসন্তানের জন্ম দেন রিভাবা।
কন্যাসন্তানের পঞ্চম জন্মদিন পালনের সময় ‘সুকন্যা সমৃদ্ধি’ প্রকল্পে শিশুকন্যাদের জন্য ১০১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন জাদেজা ও রিভাবা। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে প্রশংসাও পেয়েছিলেন দু’জনে।
বর্তমানে আবার সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েছেন রিভাবা। আহেমদাবাদের স্টেডিয়ামে স্বামীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছেন বলে রিভাবাকে উদ্দেশ করে বক্রোক্তি করেছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, স্টেডিয়ামে এমন আচরণ করা উচিত হয়নি রিভাবার।
আবার অধিকাংশের মতে, ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন রিভাবা। তাদের দাবি, স্বামীর সাফল্যে তাকে সম্মান জানানোর জন্যই এই পথ বেছে নিয়েছেন রিভাবা।
ই৭১জে