শুক্রবার-১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-১৫ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

যেখানে সুঁই চলে না, সেখানে কুড়াল চালালেন

আল মামুন ঘিওর, মানিকগঞ্জ 

মানিকগঞ্জের ঘিওর ধলেশ্বরী নদীতে অভৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন ব্যবসা এখন জমজমাট। নদী সহ বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে চলছে অগনিত ড্রেজার মেশিন। জাবরা বাজারের নদীর ঢালে দুইটি ড্রেজার মেশিন চলছে অন্তত প্রায় এক বছর ধরে। জাবরা খান পাড়া কবরস্থানের কোলঘেষা নদীতে চলছে ড্রেজার মেশিন। এছাড়াও ধুলন্ডী, পুখরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় কৃষি জমিতে অবৈধভাবে চলছে ভেকু দিয়ে জমজমাট মাটি ব্যবসা উৎসব। মাঝে মধ্যেই কৃষকের করলা-ভূট্টাসহ রাতের আঁধারে জমির মাটি উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

মাঝে মধ্যেই ড্রেজার ভাংচুর বা হাইট্রলি, ভেকু আটকের সারাসি অভিযানের কানাঘষা চলছে জনগণের মুখে মুখে। সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনায় সমালোচনায় উঠে এসেছেন ঘিওর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোঃ মোহছিন উদ্দিন। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের হিজুলিয়া ২নং ওয়ার্ডের মধ্যপাড়া গ্রামের নবীনের মুদি দোকান হতে মোমিন মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত একটি রাস্তার উন্নয়ন মূলক কাজ চলছিল। হঠাৎ করে ঘিওর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি গিয়ে মাটি ভরাট কাজের যন্ত্রাংশ ভাংচুর করে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন। এতে রাস্তার মেরামত উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় আরো বিপাকে পড়েছে ঐ এলাকার জনসাধারণ। লাশ বা জরুরি মুহূর্তে ডেলিভারি রোগী হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না ঐ রাস্তার অভাবে। মানুষের বাড়ি বাড়ির উপর দিয়ে যাতায়াত করা ছাড়া উপায় নেই তাদের। সেদিকে খেয়াল না করে হিজুলিয়া মধ্যপাড়ার রাস্তার উন্নয়ন মূলক কাজে বাধা দেওয়ার এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পক্ষ-প্রতিপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ-সাংঘার্ষিকতার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় ৮০ বছর ধরে দূর্ভোগের গ্লানি নিয়ে অনেকটা অভিশপ্ত জীবন যাপন করছেন হিজুলিয়া মধ্যপাড়ার বাসিন্দারা। কয়েক দফা গ্রাম্য বৈঠকের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের নিজস্ব অর্থায়নে রাস্তার কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। কাজ শুরু হলেও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে রেশারেশি ও মাটি সংকুলানের অভাবে ঐ রাস্তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এ.এম নাঈমুর রহমান দূর্জয় এমপি মহোদয়ের স্মরণাপন্ন হন স্থানীয় লোকজন। এমপি মহোদয় রাস্তা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। মাটির সংকুলান না থাকায় পুনরায় রাস্তার কাজের জন্য স্থানীয় বৈঠকে হিজুলিয়া মধ্যপাড়া বাসিন্দা মোঃ মোনায়েম খানের পুত্র মোঃ আইয়ুব আলী খান মুকুলের একটি মজা পুকুর থেকে মাটি দাবী করেন স্থানীয়রা। মজা পুকুর থেকে মাটি উত্তোলন করা হলে একদিকে পুকুরের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে এবং সবচাইতে বড় কথা ঐ এলাকার দীর্ঘ প্রায় ৮০ বছরের দূর্ভোগ থেকে মানুষ রেহাই পাবে সেই বিবেচনায় লোকজনের দাবীর মুখে মাটি দিতে রাজি হন পুকুর মালিক মুকুল। পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট পুকুর সংস্করণের জন্য একটি আবেদন করেন বলে জানান তিনি। এরপর আবার রাস্তার কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কোন কিছু না জেনে-না বুঝে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন সহকারী কমিশনার ভূমি। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন ঘিওর এসিল্যান্ড। তবে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলতে বলেন তিনি। এদিকে একই গ্রামের প্রভাবশালী মোঃ রেজাউল করিম উজ্জল দরজির বিরুদ্ধে রাস্তার কাজ বন্ধ করার পেছনে হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠে স্থানীয় লোকজনের মাঝে। ঘিওর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল আলিম মিয়া মিন্টু জানিয়েছেন, মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ.এম নাঈমুর রহমান দূর্জয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বড়টিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত হিজুলিয়া গ্রামে এ পর্যন্ত ছয়টি রাস্তার কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। মধ্যপাড়ার এই রাস্তাটি মেরামত করা হলে হিজুলিয়া গ্রামের পরিবেশ আরো উন্নত হয়ে যাবে। তাই দেশের উন্নয়নের জন্য কাজটি করা জরুরী। এই রাস্তার উন্নয়ন কাজে বাধা দেওয়া ঠিক হয়নি।

কৃষকলীগ নেতা মোঃ রেজাউল করিম উজ্জল দরজি জানিয়েছেন, হয়রানি করার জন্য স্থানীয় কিছু লোকজন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হামিদুর রহমান জানিয়েছেন, হিজুলিয়া মধ্যপাড়ার রাস্তা মেরামত উন্নয়ন কাজের বিষয়টি এমপি মহোদয় অবগত রয়েছেন। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে হিজুলিয়া মধ্যপাড়ার রাস্তার কাজ সম্পন্ন করা হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype