শনিবার-১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

আর্জেন্টিনার কাছে হেরে সেমি থেকে বিদায় নিল ক্রোয়েশিয়া

অনলাইন ডেস্ক : লড়াইটা ছিল লিওনেল মেসি বনাম লুকা মড্রিচের। দুই দলের দুই সেরা ফুটবলারের। সেই লড়াইয়ে মড্রিচকে হারালেন মেসি। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে সব থেকে ভাল ফুটবলটা যদিও খেললেন সেই মড্রিচই। ফুটবলে গোলটাই সব। কিন্তু ভাল খেলেও গোল পেলেন না মড্রিচ। বিপরীতে মেসি নিজে গোল করলেন, অন্যকে দিয়ে গোল করালেন। ৩-০ গোলে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুললেন। দলের প্রথম গোল পেনাল্টি থেকে করলেন মেসি। বাকি দু’টি গোল জুলিয়ান আলভারেসের দিয়ে করালেন এমএল১০।
ব্রাজিলের বিপক্ষে সাফল্যের কারণ ছিল রক্ষণাত্মক কৌশল। রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেই কোয়ার্টারের ওই ম্যাচে বাজিমাত করেছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললেন জ্লাটকো দালিচের ছেলেরা। এটিই ছিল ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় ভুল। প্রথম ৩০ মিনিট বলের দখল বেশি রাখলেও, গোলের সুযোগ বেশি তৈরি করলেও গোলের মুখ খুলতে পারল না তারা।

অন্যদিকে প্রথম ৩০ মিনিট কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিটে খেলার ছবিটাই বদলে দিল আর্জেন্টিনা। জোড়া গোল করে এগিয়ে গেলেন মেসিরা। সেখান থেকে আর ফিরতে পারল না ক্রোয়েশিয়া। এবারের বিশ্বকাপের সব থেকে ভাল ফুটবল সেমিফাইনালে খেললেন মেসিরা। আক্রমণ থেকে রক্ষণ, মেসিরা ছিলেন ১০০-তে ১০০। বিশ্বকাপে নিজেদের রেকর্ড অক্ষত রাখল আর্জেন্টিনা। ছ’বার সেমিফাইনাল খেলে ছ’বারই জিতল তারা।

মেসিকে অন্য দলের মতো ক্রোয়েশিয়াও জোনাল মার্কিংয়ে রেখেছিল। তিনি বল ধরলেই তিন থেকে চারজন ফুটবলার ছুটে আসছিলেন। কিন্তু তারপরেও মেসিকে বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারলেন না তারা। তার একটা কারণ হতে পারে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার ধকল। যত সময় এগোল, ততই ছিটকে ছিটকে বের হলেন মেসি। গোলের সুযোগ তৈরি করলেন। গোল করলেন। গোল করালেন। আবার রক্ষণকেও সাহায্য করলেন। ৯০ মিনিট সমান পরিশ্রম করলেন। বুঝিয়ে দিলেন, নিজের শেষ বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সব কিছু করলেন তৈরি তিনি।

খেলার শুরুটা অবশ্য ভাল করেছিল ক্রোয়েশিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে রক্ষণাত্মক পরিকল্পনা করে নেমেছিলেন লুকা মড্রিচরা। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ফুটবল শুরু করেন তারা। ক্রোয়েশিয়া প্রেসিং ফুটবল খেলছিল। মেসিদের পায়ে বল থাকলেই তাড়া করছিলেন মড্রিচরা। ফলে বলের দখল বেশি রাখতে পারছিল না আর্জেন্টিনা। দুই প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠছিল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু সজাগ ছিল আর্জেন্টিনার রক্ষণ বিভাগ। ফলে গোলের মুখ খুলতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া।

৩৩ মিনিটের মাথায় খেলার গতির বিপরীতে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। বক্সের মধ্যে আলভারেসকে ফাউল করেন ক্রোয়েশিয়ার গোলরক্ষক লিভাকোভিচ। পেনাল্টি দেন রেফারি। স্পট থেকে গোল করতে ভুল করেননি মেসি। গোলরক্ষকের বাঁ দিক দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে নিজের পঞ্চম গোল করে ফেললেন মেসি। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে ১১ গোল করে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বাধিক গোলদাতা হলেন তিনি। ৬ মিনিট পরে বিস্ময় গোল আরভারেসের। পাল্টা আক্রমণ থেকে নিজেদের অর্ধে বল ধরে প্রায় ৫০ গজ দৌড়ে নিয়ে যান তিনি। বক্সের বাইরে তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ঢোকেন বক্সে। লিভাকোভিচকে পরাস্ত করে গোল করেন আলভারেস। তবে সেই গোলের ক্ষেত্রে ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডারদের ভুল চোখে পড়ার মতো। একা ঢুকে গোল করেন আলভারেস। তাকে আটকাতে পারেননি ক্রোয়েশিয়ার ডিফেন্ডাররা।

প্রথমার্ধে আরও একটি গোল করতে পারত আর্জেন্টিনা। ৪২ মিনিটের মাথায় মেসির কর্নার থেকে জোরালো হেড করেন অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার। কোনও রকমে সেই বল বাঁচান লিভাকোভিচ। প্রথমার্ধে আর গোল আসেনি। ২-০ এগিয়ে সাজঘরে যান মেসিরা।

দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ায় ক্রোয়েশিয়া। আক্রমণে লোক বাড়িয়ে দেন কোচ দালিচ। কিন্তু নিজেদের রক্ষণ মজবুত রাখে আর্জেন্টিনা। ফলে গোলের মুখ খুলতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া। রক্ষণাত্মক খেললেও হঠাৎই পাল্টা আক্রমণ থেকে উঠছিল আর্জেন্টিনা। সময় যত গড়াচ্ছিল, চাপ ততই বাড়ছিল ক্রোয়েশিয়ার উপর। লিসান্দ্রো মার্তিনেসকে নামিয়ে তিন ব্যাকে চলে যান আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। রক্ষণ আরও মজবুত করে দেন তিনি।

৭০ মিনিটের মাথায় আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যাচের দ্বিতীয় গোল করেন আলভারেস। তবে গোলটি যত না তার, তার থেকে অনেক বেশি মেসির। ডান প্রান্তে সাইড লাইনের কাছে বল ধরে ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে এগিয়ে যান মেসি। পায়ের কাজ দেখাতে দেখাতে বক্সে ঢোকেন। তারপর বল রাখেন অরক্ষিত আলভারেসের কাছে। ডান পায়ে গোল করে ব্যবধান বাড়ান আলভারেস।

৮০ মিনিটের মাথায় মড্রিচকে তুলে নেন কোচ দালিচ। নিজের শেষ বিশ্বকাপ থেকে খালি হাতেই ফিরতে হল তাকে। আগের বার ফাইনালে গিয়ে হেরেছিলেন। এবার সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে গেল লড়াই। বাকি সময়টা অনেক চেষ্টা করেও গোল শোধ করতে পারেনি ক্রোয়েশিয়া।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype