শনিবার-১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

বিধ্বস্ত নেদারল্যান্ডস, টাইগারদের নাটকীয় জয়

হোবার্টের বেলারিভে স্টেডিয়ামে সোমবার নেদারল্যান্ডসের সামনে ১৪৫ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রান করে টাইগাররা। জবাবে শুরুতেই হোঁচট খায় নেদারল্যান্ডস। ১৫ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি। ১৩৫ রানে থেমেছে নেদারল্যান্ডসের ইনিংস।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভার থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের শুরু করেন সৌম্য সরকার, দুই বাউন্ডারি থেকে নেন ১২ রান। এরপর চতুর্থ ওভারে এসে টানা দুই বাউন্ডারি হাঁকান শান্ত। অনেকদিন ধরে ধুঁকতে থাকা উদ্বোধনী জুটিত স্বস্তি খুঁজে পায় বাংলাদেশ। ৩০ ম্যাচ পর আসে ৪০ রান ছাড়ানো শুরুর জুটি।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এসে প্রথম ছন্দপতন হয় বাংলাদেশের। ভ্যান মেকেরেনের করা দ্রুতগতির শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েন সৌম্য। দুই চারে ১৪ বলে ১৪ রান করেন তিনি, দলের রান তখন ৪৩। পরের ওভারের প্রথম বলে শান্তকেও হারায় বাংলাদেশ।

এবার সুইপ করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেন শান্ত। ৪ চারে ২০ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান। নিজের ইনিংসকে বড় করতে পারেননি লিটন দাসও। ১১ বলে ৯ রান করে ভ্যান বিকের বলে টম কুপারের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দলের বড় ভরসার জায়গাজুড়ে। কিন্তু তাকে ফিরতে হয়েছে ডি লেডের দুর্দান্ত এক ক্যাচ হয়ে। ৯ বলে ৭ রান করে শারিজের বলে বাউন্ডারি লাইনে লাফিয়ে ধরা ক্যাচে সাজঘরে ফিরতে হয় সাকিবকে।

মাত্র ২০ রানের ভেতর চার উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এর মধ্যেই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ, যদিও ওভার কমেনি। দলের বিপদ আরও বাড়ে ইয়াসির আলি রাব্বি ফিরলে। এরপর পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন নুরুল হাসান সোহান ও আফিফ হোসেন।

দারুণ কিছু বাউন্ডারি হাঁকান আফিফ, মাঝে প্রিঙ্গেল তার ক্যাচও ছাড়েন। ১৮তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ২ চার ও সমান সংখ্যক ছক্কায় ২৭ বলে ৩৮ রান করেন তিনি।

তবে বাংলাদেশের রানের ভিতটা শক্ত করেন মূলত মোসাদ্দেক হোসেন। আট নম্বরে নামা এই ব্যাটার ২ চার ও ১ ছক্কায় ১২ বলে করেন ২০ রান। ডাচদের পক্ষে দুই উইকেট করে নিয়েছেন পল ভ্যান মেকেরেন ও ভাস ডি লেডে।

জবাব দিতে নামা ডাচরা শুরুতেই থমকে যায় তাসকিনের কাছে। ইনিংসের একদম প্রথম বলেই তিনি ফেরান বিক্রমজিৎ সিংকে। তার লেন্থ বলে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ইয়াসির আলি রাব্বি ক্যাচ সেস। পরের বল সিক্সথ স্টাম্প লাইনে করেন তাসকিন।

উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা নুরুল হাসান সোহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ভাস ডি লিট। নিজের প্রথম ওভারে মাত্র ৩ রান দেন তাসকিন। এরপর ডাচদের ব্যাটিংয়ের ভিত ভেঙে দেয় বাংলাদেশের দুর্দান্ত ফিল্ডিং।

প্রথমে আফিফ-সাকিব, পরে শান্ত ও সোহানের যুগলবন্দীতে হয় দুই রান আউট। মিড উইকেট থেকে করা দারুণ থ্রোতে ৮ বলে ৮ রান করে ম্যাক্স ও’ডাউডকে ফেরান আফিফ। এরপর আকারম্যানের মারা বল দ্রুত দৌড়ে বাউন্ডারি আটকান শান্ত, আরও তাড়াতাড়ি করেন থ্রো। উইকেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সোহানও বল পেয়ে দেরি করেননি। ১৫ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে ডাচরা।

ডাচ ব্যাটার একপ্রান্ত আগলে থেকেছেন, অন্য প্রান্তে আসা-যাওয়া করেছেন তার সতীর্থরা। ১৭তম ওভারে এই ব্যাটার যখন ফিরেন, দলের রান ১০১। তাসকিনের বলে ফেরার আগে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৪৮ বলে ২ রান করেছেন আকারম্যান। শেষদিকে অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন পল ভ্যান মেকেরেন। কিন্তু তার ৩ চার ও ১ ছক্কার ১৪ বলে ২৪ রানের ইনিংস শুধু ব্যবধানই কমিয়েছে।

বাংলাদেশের পেসাররা দারুণ করেছেন আজ। তাসকিনের ব্যাপারটা স্কোরকার্ড দেখলেও বুঝতে পারার কথা-৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন চার উইকেট। এর বাইরে গতি, লাইন-লেন্থে দুর্দান্ত ছিলেন হাসান মাহমুদও। ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ ১৫ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন তিনি। সাকিব আল হাসান ও সৌম্যর ঝুলিতেও গেছে এক উইকেট করে।

এদিন ইনিংসের প্রথম ২ বলে দুটি উইকেট তুলে নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। নিজের শেষ ওভারে নেন আরও দুটি উইকেট। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২৫ রানে নেন ৪ উইকেট। টি-টোয়েন্টি দেশের হয়ে কোনো ম্যাচে দুই উইকেটের বেশি পেলেন এই প্রথম। দারুণ বোলিংয়ে তিনিই জিতলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype