শুক্রবার-৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১১ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

প্রেসবিজ্ঞপ্তি : সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও ঘরবাড়ি সংস্কার এবং আইনি ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর। আজ মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দফা দাবি তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন হিল্লোল সেন উজ্জ্বল।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সাবেক সভাপতি সাধন ধর, বিমল কান্তি দে, অ্যাড. চন্দন তালুকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, সুমন দেবনাথ, শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত, সহ-সভাপতি প্রদীপ শীল, বিপ্লব চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক মিথুন মল্লিক, সজল দত্ত, অ্যাড. নটু চৌধুরী, বিপ্লব সেন, অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন টুটুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক স্ট্যালিন দে, সহ-পূজা বিষয়ক সম্পাদক প্রিয়তোষ ঘোষ রতন, সদস্য সঞ্জয় ভৌমিক কনকন, অয়ন ধর, প্রিয়তোষ বল, লিটন দাশ, রাসেল দত্ত, সমীরণ মল্লিক, অর্পণ চক্রবর্তী, রুবেল কান্তি নাথ প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, বিগত দিনে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম যাতে সাম্প্রদায়িক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং তার আশু ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য। তারপরও আমরা লক্ষ্য করছি দেশের কিছু কিছু স্থানে মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী সনাতনী সম্প্রদায়ের উপর হামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে জবরদখল, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা এখনো ঘটে চলেছে। গত বৎসর ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন চট্টগ্রামের প্রধান পূন্ডপ জে.এম সেন হলে হঠাৎ হামলা হয়।

এসময় বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠন প্রতিবাদ জানালে প্রশাসনের সহযোগিতায় ৮ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রায় ৭৬ জনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। পূজা পরিষদের আইনী সেলের মাধ্যমে আদালতে জোড়ালো আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামিরা দীর্ঘদিন জেলহাজতে ছিলেন। পরে উচ্চ আদালত  থেকে আসামিরা একে একে জামিনে বের হয়ে আসায় আমরা শঙ্কিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা পোস্ট দিয়ে সম্প্রিতি নষ্ট করার চেষ্টা থেকে বিরত ও সজাগ থাকতে হবে। আমরা প্রত্যাশা রাখি বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও বলিষ্ঠ ভূমিকায় এবারের শারদোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তি-শৃঙ্খলার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বাঙালির দুর্গোৎসবকে বিশ্বের সর্বোচ্চ ইউনেস্কো তাদের অধরা সংস্কৃতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এখন বাঙালির এই দুর্গোৎসব একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে রূপ নিয়েছে। এই বিশেষ স্বীকৃতির জন্য আমরা আনন্দিত। তিনি বলেন, প্রতিবছরের মত এবারও মহানগরের জেএমসেন হলসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত/ঘট পূজাসহ প্রায় ২৮৩টি পূজা  ১ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পাঁচদিনব্যাপী দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। গত ২৫ অক্টোবর রবিবার জেএম সেন হলে দেবীপক্ষের সূচনা শুভ মহালয়ার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নগরীর সকল পূজামন্ডপ ডিজেমুক্ত ও প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া পূজার আনুষ্ঠানিকতা রাত ১২টার মধ্যে শেষ করার জন্য পূজার আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে এবং প্রতিমা বিসর্জন ৫ অক্টোবর দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ১৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিসমূহ হলো-৭২’র সংবিধানের আলােেক সকল স¤প্রদায়ের সম-অধিকার নিশ্চিত করা, মঠ-মন্দির, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লুটপাট, হামলা ভাঙচুরসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শাস্তির ব্যাবস্থা করা, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৪দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা, শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইন কার্যকর করে প্রকৃত ভূমি মালিকদের ফেরত দেয়া, সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড, পুলিশ প্রশাসন ও সচিবালয়সহ সকল সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিদের আনুপাতিকহারে নিয়োগ, সরকারি সংস্কৃত কলেজস্থাপনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা, সীতাকুন্ডকে জাতীয় তীর্থ¯স্থান ও ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে জাতীয় মন্দির হিসেবে রাষ্ট্রীয় ঘোষণা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্ম এবং সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, চন্দ্রনাথ ধাম ও কক্সবাজার আদিনাথ মন্দিরে সরকারি সহায়তায় উন্নয়নের ব্যাবস্থা এবং দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন দ্রুত প্রণয়ন করা, দক্ষিণ কাট্টলীর বারুণী স্নানের জন্য রানী রাসমনি ঘাটের ৫ একর জায়গা বরাদ্দ দেয়া, শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালীন সরকারি-বেসরকারি সকল স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখা, সারাদেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে একটি করে মডেল মন্দির নির্মাণে ভূমি বরাদ্দ দেওয়া।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype