শনিবার-১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কর্মক্ষেত্রে মানসিক সুস্থতা

ইতিহাস৭১ ডেস্ক:   ১। দিনের দুই তৃতীয়াংশ সময় আমরা কর্মক্ষেত্রেই কাটাই। কর্মক্ষেত্রই আমাদের মূল ভরসার স্থল। জীবন-জীবিকা, উন্নতি-সমৃদ্ধি, যশ-সম্মান, অর্থ-বিত্ত সবই নির্ভর করে কর্মক্ষেত্রের ওপর। সেই কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কেমন হবে? কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের গুরুত্ব তাই স্বাভাবিকভাবেই সবার উপরে স্থান পায়। যদি কর্মক্ষেত্রে নামি-দামি-যশস্বী আর উন্নতি করতে চান, আপনাকে হতে হবে সুস্থ। তা শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে। মানসিক সুস্থতা ছাড়া সুস্থতা সম্ভব নয়। মানসিকভাবে সুস্থ না হতে পারলে আপনি কোনোভাবেই কর্মক্ষম, যোগ্যতরভাবে গড়ে উঠতে পারেন না।

২। কর্মক্ষেত্রের মানসিক স্বাস্থ্য/সুস্থতা শুধু ব্যক্তির জন্য নয়, প্রতিষ্ঠান (সরকারি/বেসরকারি, কৃষি থেকে শিল্প, ব্যাংক-বীমা) সবার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি ব্যক্তির উন্নতির জন্য তো বটেই, প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য তদপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে বিভিন্নভাবে— ক। সুস্থ ব্যক্তি, সক্ষম ব্যক্তি, সুখী ব্যক্তি। তার থাকবে কর্মস্পৃহা, কর্মোদ্যম, যার মাধ্যমে বাড়বে উৎপাদন ক্ষমতা, ঘটবে উন্নয়ন। খ। মানসিক অসুস্থতা কেড়ে নেয় সহস্র শ্রমঘণ্টা, ব্যক্তিটি থাকে অনুপস্থিত, হতোদ্যম, উৎপাদনে কার্যক্রমে তাই ঘাটতি হতে বাধ্য। গ। মানসিকভাবে সুস্থ, সুখী ব্যক্তিটি হাসি ফোটায় নিজ কর্মক্ষেত্রে, পরিবারে, সমাজে ু ফলত ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ হয় হাসি-খুশি, প্রাণোচ্ছল আর সমৃদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠান, সমাজ আর দেশ। ঘ। সুস্থ মানুষ তার পাশের জনকে, সহকর্মীকে সব সময় সহযোগিতা করে, সহমর্মিতা দেখায়, সাহায্যের হাত প্রসারিত করে; এতে সহকর্মীর জীবন হয় সুন্দর-পরিপাটি, তার প্রভাব অতি অবশ্যই কর্মক্ষেত্রের উন্নতি, প্রসার। ঙ। মানসিকভাবে সুস্থতা মানে চিন্তায়-চেতনায়, আবেগ-অনুভূতি, ইচ্ছা-স্পৃহায় সুস্থতা ও সুন্দরতা। আর সঠিক না হলে সব কার্যক্রম মূল্যহীন আর গতিহীন হতে বাধ্য। এসব থেকে প্রতীয়মাণ কর্মক্ষেত্রে সুস্থ থাকাটা কতটা জরুরি।
৩। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে বিভিন মানসিক চাপ, যেমন—
ক। অশুভ এবং অসুস্থ তোষামোদ। খ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃক অধস্তনকে কোন কারণ ছাড়াই বুলিং/ গালাগালি করা। গ। সহানুভূতি/ সহমর্মিতার অভাব। ঘ। কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে মানসিক রোগকে অবহেলা, তুচ্ছজ্ঞান করা। ঙ। অধস্তনদের অসুস্থতাকে গুরুত্ব না দেওয়া। চ। কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা/ বিষাক্ত পরিবেশ। ছ। সম্মানবোধের অভাব। জ। কাজে-কর্মে স্বাধীনতার অভাব। ঝ। কর্মক্ষেত্রে বিত্তের বৈষম্য। এসব কারণে মানসিকভাবে হেয় হওয়া, অবসাদগ্রস্ততা, এমনকি মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার হারও কম নয়। প্রতি পাঁচজনের একজন এমনি করে অসুস্থ হতে পারেন।

৪। আমাদের প্রয়োজন কর্মক্ষেত্রকে সুন্দর, সুস্থ রাখা। তা করা যেতে পারে নিম্নরূপভাবে— ক। প্রত্যেককে মানসিকভাবে সুন্দর, সুস্থ হতে হবে। খ। সহকর্মীর প্রতি সহমর্মিতা-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। গ। কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সুস্থ/সুন্দর রাখতে হবে। ঘ। বুলি বন্ধ করা। ঙ। মানসিক চাপ মুক্ত থাকার কৌশল শেখানো। চ। নিজের প্রতি আস্থা বাড়ানোর চেষ্টা করা/ ট্রেনিং দেওয়া। ছ। অসুস্থ বসিং/ তোষামোদ বন্ধ করতে হবে। জ। প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান। ঝ। মানসিক রোগ সম্বন্ধে কুসংস্কারমুক্ত হওয়া। তাই এসব বিষয়ে আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype