শনিবার-১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

মিষ্টির দাম বেড়েছে মিরসরাইতে কেজিতে ২০-৭০ টাকা

ইতিহাস ৭১ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে অন্য পণ্যের পাশাপাশি দাম বেড়েছে মিষ্টির। ফলে আগের তুলনায় কমে গেছে বেচাকেনা। দফায় দফায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মিষ্টির দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান শো-রুমের মালিকরা। গত কয়েক মাস ধরে লোকসান হচ্ছে বলে দাবি তাদের।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শো-রুম রয়েছে বারইয়ারহাট পৌর সদরে। এসব শোরুমে থাকা প্রায় সব ধরনের মিষ্টিতে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এখানকার রীতি রয়েছে, কোনো নতুন আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময় মিষ্টি কেনা অনেকটা বাধ্যতামূলক। এছাড়া বিয়ে, উদ্বোধন অনুষ্ঠান, জন্মদিন, আকিকা, পরীক্ষার ফলাফল, চাকরির পদোন্নতির পর মিষ্টিমুখ ছাড়া চলে না। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মিষ্টির চাহিদা আগের চেয়ে কমে আসছে।

মিঠাছড়া বাজারের অবস্থিত সাদাকালো সুইটসের স্বত্বাধিকারী মো. রাসেদুল ইসলাম বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় পণ্যের দাম বাড়িয়েছি। দফায় দফায় মিষ্টি তৈরির বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু বেচাকেনা কমে গেছে।

বারইয়ারহাট বনফুল শো-রুমের স্বত্বাধিকারী আবু জাফর বলেন, ১৫ দিন ধরে মিষ্টির দাম বাড়ানো হয়েছে। আগে নরমাল মিষ্টি বিক্রি করতাম ২‘শ ৫০ টাকা এখন ২‘শ ৭০ টাকা, চানা বালিসা ৫‘শ ৫০ টাকা এখন ৬‘শ ২০ টাকা, রসমালাই ছিল ৩‘শ ৫০ টাকা এখন ৩‘শ ৮০ টাকা, চমচম ছিল ৩‘শ ৬০ টাকা এখন ৪‘শ টাকায় বিক্রি করছি।

তিনি আরও বলেন, শো-রুমে আগে দৈনিক ৬০ হাজার টাকার মিষ্টি বিক্রি করতাম। এখন ৩০ হাজার টাকার মিষ্টি বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ আগে বিয়ের অনুষ্ঠানে ১০ কেজি মিষ্টি নিলে, এখন ৫ কেজি নিচ্ছে। এছাড়া কিছু অসাধু লোকজন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেট তৈরি করে নিম্নমানের মিষ্টি বাজারজাত করছে। সাধারণ ক্রেতা বুঝতে না পেরে অল্প টাকায় মিষ্টি কিনে ঠকছেন। এ সিন্ডিকেটটি দীর্ঘ সময় ধরে এধরনের কাজ করলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

বড়তাকিয়া বাজারে মিষ্টি কিনতে আসা আবু সুফিয়ান বলেন, আমার ছেলের শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার জন্য মিষ্টি নিতে এসেছি। শোরুমে এসে দেখি সব ধরনের মিষ্টি আগের তুলনায় কেজিতে ২০-৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যে পরিমাণ মিষ্টি কেনার চিন্তা-ভাবনা করেছিলাম, তারচেয়েও কম কিনেছি।

ফুলকলির মিরসরাই শো-রুমের ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ বলেন, কয়েকমাস আগে আমাদের সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু আবারো উপকরণের দাম বাড়ায় দু-একদিনের মধ্যে মিষ্টির দাম বাড়াবে কোম্পানি। তিনি আরও বলেন, আগে শুক্রবারে অনেক বেচাকেনা হতো, এখন অনেক কমে গেছে।

জমজম সুইটস অ্যান্ড বেকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন সোহেল বলেন, বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় ১৫ মে এক দফা মিষ্টির দাম বাড়ানো হয়েছিল। এরপরও কোম্পানিকে রিতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর চিনি, ময়দা, ডিম, দুধসহ সব ধরনের জিনিসের দাম বেড়েছে। পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে। ফলে ১৬ আগস্ট থেকে আবারো মিষ্টির দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।

বিসিক শিল্প মালিক সমিতি নিজকুঞ্জরার আহ্বায়ক সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, দফায় দফায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই করুণ। না পারছি ব্যবসা ছেড়ে দিতে, না পারছি ভালো করে করতে।

গত এক বছরের মিষ্টিসহ বেকারি জাতীয় পণ্য তৈরির সব উপকরণের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি ডিজেলের দাম বাড়ায় অন্য ক্ষেত্রেও ব্যয় বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে বেচাকেনাও অনেক কমে গেছে।

এম.জে.আর

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype