শুক্রবার-৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১১ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন : সেনাবাহিনী প্রধান

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে সেনাবাহিনী প্রধান সুনামগঞ্জের সুরমা ইউনিয়নের মঈনপুর এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।

এসময় তিনি বলেন, বন্যা দুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বন্যা চলে যাওয়ার পরেও যতদিন জনগণের প্রয়োজন হবে ততদিন তাদের পাশে থেকে সেনাসদস্যগণ সকল সহযোগিতা করবে। বন্যা পরবর্তী বিপর্যস্ত জনজীবনের দুর্ভোগ দূরীকরণের নিমিত্তে সরকারের সকল সংস্থা নিরলস ভাবে কাজ করছে এবং সেনাবাহিনীও তাদের প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে অধিকতর তৎপর হওয়ার জন্য তিনি সেনা সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করেন। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম বিশেষ গুরুত্বসহকারে পরিচালিত হবে বলে তিনি উপস্থিত সকলকে নিশ্চয়তা প্রদান করেন।
এসময়ে সেনাবাহিনীর প্রধানের সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাইরেক্টর জেনারেল অব মেডিক্যাল সার্ভিস মেজর জেনারেল মোঃ মাহবুবুর রহমান। এছাড়াও সর্বস্তরের জনসাধারনকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সেনাপ্রধান। পরিদর্শনকালে আরো উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল মোঃ আবু সাঈদ সিদ্দিক, মেজর জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, জিওসি ১৭ পদাতিক ডিভিশন মেজর জেনারেল হামিদুল হকসহ সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ এবং ১৯ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যগণ সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোণা জেলার মোট ২০টি উপজেলায় বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় মোতায়েন রয়েছে। মোতায়েনরত সেনাসদস্যগণ নিরলসভাবে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার ও দুর্গতদের মাঝে খাবার বিতরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোণার বন্যাকবলিত এলাকায় এ পর্যন্ত ১২১৪৮ জন বন্যা দুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে প্রেরণ করেছে, ১৪৭৫০ জনকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, ২১৯৬৮ জনের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, ৫৫১৩৬টি পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণের পাশাপাশি বন্যার্তদের মাঝে ৫৪৮২৮ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ বিতরণ করেছে। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে।

এছাড়াও সেনাসদস্যরা গতকাল হতে সিলেট জেলার সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় মজুদকৃত অর্থ নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের সহযোগিতা করছে। সেনাসদস্যরা সিলেট জেলার বড়ইকান্দি ও কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোকে প্লাবন থেকে রক্ষা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিত করণে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার নিমিত্তে সিলেটের তেলিখালের উপর কাটাগঙ্গা ব্রীজ মেরামত করা হয়েছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়ে পানি নিষ্কাশন ও ভূমিধস রোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে জেল সদস্যদের এবং কয়েদীদের জন্য শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ইউনিসেফ এর অনুরোধে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের জন্য রক্ষিত মূল্যবান ভ্যাকসিন নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোন কোম্পানীর সরঞ্জাম সুরক্ষার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী এবং নিজেদের পাশাপাশি অসামরিক প্রশাসনের জন্য ও ভি-স্যাট স্থাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রেখেছে সেনাবাহিনী।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্য সকল ফরমেশন নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এবং যতদিন প্রয়োজন ততদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। সেনাপ্রধান বলেন, সবাই মিলে কাজ করলে যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype