সোমবার-১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৪ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

বিআরটিএ কেন ফুল হাতা শার্ট, ফুল প্যান্ট, নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরে মোটরসাইকেল চালাতে বলছে ?

মোটরসাইকেল চালকদের জন্য নতুন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে ফুল হাতা শার্ট, ফুল প্যান্ট, কেডস বা জুতাসহ মানসম্মত নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরে মোটরসাইকেল চালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিআরটিএ’র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে। অপেক্ষাকৃত তরুণরা এই বাহন বেশি চালানোয়, গতিও বেশি থাকে; ফলে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। সাড়ে ৩৬ লাখ মোটর সাইকেল নিবন্ধন করা হলেও, দেশে নিবন্ধিত চালকের সংখ্যা সাড়ে ২৩ লাখ। তার মানে আরও ১৩ লাখ মোটরসাইকেলের চালক রয়েছে, যাদের কোন লাইসেন্স নেই। সাথে স্বপ্ল পাল্লার এই বাহন দূর পাল্লায় ব্যবহার হচ্ছে বলেও জানিয়েছে বিআরটিএ।
বিআরটিএ বলছে, গঠনের দিক থেকে মোটরসাইকেলে একটি অনিরাপদ বাহন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের প্রথম চার মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৮৩০ জন নিহত হয়েছে।

ঈদুল ফিতরের পরের দিন ফরিদপুরের রুবেল হোসেন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কোমরপুরে একজন আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিলেন। মহাসড়কে উল্টো দিক থেকে আসা একটি ইজি বাইকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে গেলে তারা দুজনেই আহত হন।

রুবেল হোসেন বলছেন, ‘সহজ যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করি। ভেবেছিলাম ঈদের মধ্যে রাস্তাঘাট ফাঁকা, দ্রুত চলে যাবো। কিন্তু এভাবে আহত হবো, বুঝতে পারিনি।’

স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহারের কথা থাকলেও এখনও মহাসড়ক ও দূরপাল্লায় মোটরসাইকেল যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে।

এই বছর ঈদুল ফিতরের ছুটির সময় মোটরসাইকেলের চাপে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক ফেরি ভরে যেতেও দেখা গেছে।

ঈদুল ফিতরের ছুটির সময় শুধুমাত্র মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আটশোর বেশি মানুষ ঢাকার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট তাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, মোটরসাইকেলের কারণে সড়কে দুর্ঘটনার হার ক্রমেই বাড়ছে। এআরআইয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে সড়কে যত হতাহতের ঘটনা ঘটছে, তার ৪০ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণে হচ্ছে। অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হতাহতের প্রবণতা দিনে দিনে বাড়ছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ২ হাজার ৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান ২ হাজার ২১৪ জন, যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৫ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় এই হার ৫০ শতাংশ বেশি।

বিআরটিএ বলছে, মোটরসাইকেল চলাচলে অনেক ক্ষেত্রে হেলমেটসহ নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং, নিয়ম না জানা বা নিয়ম না মানা ইত্যাদি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পেছনে প্রধান কারণ।

পরিচালক অধ্যাপক মোঃ হাদিউজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ২০১৬ সাল থেকেই তারা মোটরসাইকেলের ঝুঁকির বিষয়ে ব্যাপারে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি।

‘বরং পলিসির দুর্বলতার কারণে মোটরসাইকেল আরও সহজলভ্য করে তোলা হয়েছে। বিভিন্নভাবে মোটরসাইকেল আমদানিতে ডিউটি ট্যাক্স কমানো, নিবন্ধন ফি কমানোর মাধ্যমে ব্যবহারকে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সিসি লিমিট বাড়ানো হয়েছে। ফলে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ক্যান্সারের সেলের মতো বেড়েছে। সেই সঙ্গে মোটরসাইকেলে আহত বা নিহতের সংখ্যাও বেড়েছে।’

কেন ফুল প্যান্ট, ফুল শার্টের পরামর্শ?
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের রোড সেফটি বিভাগের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘গত কিছুদিনে আমরা দেখতে পেয়েছি, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। এখন হাইওয়েতে মোটরসাইকেল চালাতে কোন নিষেধাজ্ঞা আমাদের দেশে তো নেই।’

‘তাই আমরা মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করছি। তারা যদি নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে হাইওয়েতে মোটরসাইকেল না চালায় তাহলে তো ভালো। আর চালালেও যেন তারা নিরাপত্তার সব সরঞ্জাম ব্যবহার করে, আমরা তাদের জন্য সেই পরামর্শই দিচ্ছি।’

তিনি জানান, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো বা ট্রাফিক আইন ভঙ্গের বিষয়ে পুলিশ ও বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করছেন। কিন্তু মহাসড়কের সর্বত্র যেহেতু এভাবে নজরদারি করা যায় না, তাই নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই তারা মোটরসাইকেল চালকদের সতর্ক হতে বলছেন।

মোটরসাইকেল একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন হলেও দূরপাল্লা বা মহাসড়কে এই বাহনটির চলাচলে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আইনেও এটির চলাচলে আলাদা কোন বিধান রাখা হয়নি।

বিআরটিএ আরও পরামর্শ

*অভিভাবকগণ সন্তানদের মোটরসাইকেল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করুন।
*চালক ও আরোহী উভয়েই হেলমেট, চেস্ট গার্ড, নি গার্ড, এলবো গার্ড, গোড়ালি ঢাকা জুতা বা কেডস, আঙ্গুল ঢাকা গ্লাভস, ফুল প্যান্ট-শার্ট ব্যবহার করুন।
*স্বল্প দূরত্বে মোটরসাইকেল ব্যবহার করুন, মহাসড়কে চালাবেন না।
*মোটরসাইকেলে একজনের বেশি আরোহী বহন করবেন না।
*অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোড় বা বাঁক ঘোরার সময় মোটরসাইকেল কাত হয়ে পড়ে যায়। এ কারণে বাঁক অতিক্রম সময় স্বল্পগতিতে মোটরসাইকেল চালান।
*মোটরসাইকেল চালানোর সময় ইয়ার ফোন বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না।
*ট্রাফিক আইন, ট্রাফিক সাইন মেনে চলুন।
*হালনাগাদ বৈধ কাগজপত্র ব্যবহার করুন। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাবেন না।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype