রবিবার-১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৩ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা হলো

কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ২৭ তম উৎসব সোমবার থেকে শুরু। প্রদীপ জ্বালিয়ে এদিন বিকালে কলকাতার নজরুল মঞ্চে উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। প্রধান অতিথি হিসাবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বলিউড অভিনেতা ও তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা।

অন্য তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শত্রুঘ্নপত্নী পুনম সিনহা, গায়ক ও বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়, চলচ্চিত্র উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান পরিচালক ও বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মলয় ঘটক, ইন্দ্রনীল সেন, বিরবাহা হাঁসদা, রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত কুমার গোয়েল, বিধানসভার স্পিকার বিমান ব্যানার্জি। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী মাধবী মুখার্জি, শকুন্তলা বড়–য়া, অনামিকা সাহা, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শতাব্দি রায়, নুসরাত জাহান, মিমি চক্রবর্তী, ইন্দ্রানী হালদার, কোয়েল মল্লিক, শুভশ্রী গাঙ্গুলী, কৌশানী মুখার্জী, সায়নী ঘোষ, রুক্ষিনী মৈত্র, পাওলি দাম, পরিচালক গৌতম ঘোষ, সন্দীপ রায়, হরনাথ চক্রবর্তী, শ্রীজিত মুখার্জী, সংগীতশিল্পী অজয় চক্রবর্তী প্রমুখ। অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, অরিন্দম শীল, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দীপক অধিকারী (দেব), শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী সহ একঝাঁক তারকা। এবারের উৎসবের থালি গার্ল হিসাবে ছিলেন অভিনেত্রী সায়ন্তিকা ব্যানার্জি। এ উৎসব চলবে আগামী ১লা মে পর্যন্ত।
উদ্বোধনী ভাষনে মমতা বলেন, ‘সবকিছুরই একটা উৎসব থাকে। চলচ্চিত্র জগৎ আগামী দিন আলোর জোয়ারে, নিজেদের মন খুলে আড্ডা মারবে, আলোচনা করবে, কথা বলবে, ভাববে, চিন্তা করবে এবং আরো ভালো করে কি করা যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখবে।’

তার মতে ‘এই মাটিতে তৈরি হয়েছে পথের পাঁচালী, অপুর সংসার, চারুলতা , মেঘে ঢাকা তারা, যুক্তি তক্কো গপ্পো, তিতাস একটি নদীর নাম’ এর মত সিনেমা। এবং নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরাও অনেক সিনেমা তৈরি করছেন। তাদের জন্য আমার অনেক অনেক আশীর্বাদ থাকবে।’

তিনি বলেন ‘করোনার কারণে সবাই বলছিল এবছর চলচ্চিত্র উৎসব হবে না। কিন্তু আমি বলেছিলাম হবে। করোনার ভয় পেয়ে বসে থাকলে চলবে না, তবে তো গোটা জীবনটাই করোনা করেই কেটে যাবে। করোনা আসবে, লড়াই করতে হবে, নিরাপদে থাকতে হবে আবার শান্তি সম্প্রীতির লক্ষ্যে সকলকে নিয়ে লড়তেও হবে।’

মমতার অভিমত, ‘বাংলা সিনেমার জৌলুস এখন অনেক বেড়েছে। আমি মনে করি যদি জৌলুসই না থাকতো তবে শুধু একটা চলচ্চিত্র উৎসবকে কেন্দ্র করে বাইরের ৪৭ দেশের ছবি এখানে আসতো না।’

মমতা বলেন, ‘আজকের টেলিফিল্ম যেভাবে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে, মানুষ দেখে খুশি হচ্ছে… তেমনি বাংলার চলচ্চিত্র পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ। আমরা হয়তো ব্র্যান্ডিং পাইনি, তাই হয়তো সেই জায়টায় গিয়ে পৌঁছাতে পারিনি। কিন্তু তা সত্বেও গোটা বিশ্বের মধ্যে বাংলা সিনেমায় গভীর শিকড়ের টান রয়েছে। আমি বলিউডকে অবশ্যই প্রশংসা করি। তাদের প্রচুর অর্থ আছে। বিনিয়োগ করার ভালো লোক আছে। কিন্তু বাংলায় সেটা নেই, খুব কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি বলবো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ঘিরে অনেক অর্থনীতি তৈরি হয়। অনেক মানুষ দেখেন, অনেক মানুষ কাজ পায়, এখানে যুক্ত হয়ে বহু মানুষ তার ভবিষ্যৎ তৈরি করে। তাই ফিল্ম জগৎকেও ইকোনমিক ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা উচিত। বিষয়টি দেখার জন্য দলের সাংসদ এবং অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহাকে অনুরোধ জানান মমতা।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর নভেম্বর মাসে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয়ে থাকলেও করোনার কারণে গত দুই বছর তা করা সম্ভব হয়নি। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় গত জানুয়ারী মাসে এই উৎসব আয়োজনের কথা ভাবা হলেও তৃতীয় ঢেউ’এর শঙ্কায় ফের তা পিছিয়ে যায়।
এবারে ফিনল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, জাপান, কিরগিজস্তান, ভিয়েতননাম, বাংলাদেশ, ফিলিপাইনস, ইতালি, úন, ভিয়েতনাম, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, তাজিকিস্তান, ফ্রান্স, লেবানন, তিউনিশিয়া, পোল্যান্ড, নরওয়ে, হাঙ্গেরি, অষ্ট্রেলিয়া, স্লোভাকিয়াসহ বিশ্বের ৪০ টি দেশের মোট ১৬৩ টি ছবি দেখানো হবে এই উৎসবে। এবারের উৎসবের ফোকাশ কান্ট্রি ফিনল্যান্ড। সাতদিনের এই উসবে ফিনল্যান্ডের মোট ৭ টি ছবি দেখানো হবে। নন্দন-১,২,৩, রবীন্দ্রসদন, শিশিরমঞ্চ, নজরুল তীর্থ-১,২ রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন, কলকাতা তথ্যকেন্দ্র, চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবন- এই দশটি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো উৎসবের ছবিগুলি।

উদ্বোধনী ছবি হিসাবে এদিন সন্ধ্যায় দেখানো হয় বিশ্ববরেণ্য পরিচলাক প্রয়াত সত্যজিত রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’। এই উৎসবে বাংলাদেশ থেকে মাত্র একটি ছবি স্থান পেয়েছে। সেটি হল পরিচালক ড. শবনাম ফিরদৌসের ‘আজব কারখানা’। ১১০ মিনিটের স্বল্প দৈর্ঘ্যরে এই ছবিটি আগামী ২৬ এপ্রিল নন্দন ২ প্রেক্ষাগ্রহে এবং ২৮ এপ্রিল নজরুল তীর্থ-১’এ প্রদর্শিত হবে।

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি মাথায় রেখে এবার বেশ কয়েকটি ছবি রাখা হয়েছে। প্রদর্শন করে শতবর্ষ উপলক্ষে সম্মান জানানো হবে সত্যজিৎ রায়, চিদানন্দ দাশগুপ্ত প্রমুখকে। একইভাবে স্মরণ জানানো হবে প্রয়াত দিলীপ কুমার, লতা মঙ্গেশকর, বাপি লাহড়ী, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, অভিষেক চ্যাটার্জি, সৌমিত্র চ্যটার্জি, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকে।

অন্যবারের মতো এবারও আন্তর্জাতিক বিভাগ, ভারতীয় ছবি, এশিয়ার সেরা ছবি, তথ্যচিত্র, স্বল্প দৈর্ঘ্যরে ছবি সহ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সেরাদের পুরস্কৃত করা হবে। এদিনের গোটা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন পরমব্রত চ্যাটার্জি ও জুন মালিয়া।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype