রবিবার-১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৩ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রাম পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর উদ্বোধন করলেন  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এম পি

 দামপাড়াস্থ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে নবনির্মিত “পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, চট্টগ্রাম” এর শুভ উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান, এম পি। প্রায় ছয় হাজার বর্গফুট আয়তনের এই জাদুঘরে সংগ্রহ করা হয়েছে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদার নেতৃত্বে গঠিত ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র সদস্যদের ছবি, ব্যবহৃত অস্ত্র, পোষাক ও বিভিন্ন জিনিসপত্র। জাদুঘরের একটি অংশজুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। সেখানে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের চট্টগ্রামের অংশটির পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন স্মারক/ডকুমেন্ট স্থান পেয়েছে। এছাড়াও জাদুঘরে সংগৃহীত হয়েছে তৎকালীন পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ও পোশাক, শহীদ পুলিশ সুপার এম শামসুল হক এর স্মারক হিসেবে ব্যবহৃত র্যাংক ব্যাজসহ টিউনিক সেট, স্টিক, ক্যামেরা, কলম, বেল্ট, পোশাক, ক্যাপ এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আরআই আকরাম হোসেন এর স্মারক হিসেবে তাঁর ব্যবহৃত রেডিও। খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে “দিগ্বিজয়ী” প্রথম উইলিয়ামের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নর্ম্যান, ব্রেটন, ফ্লেমিশ এবং অন্যান্য ফরাসি প্রদেশের অধিবাসীদের এক যৌথ বাহিনীর ইংল্যান্ড আক্রমণ, বিজয় ও অধিকারের ফলশ্রুতিতে অ্যাংলো-স্যাক্সন জনগোষ্ঠীর ইকোলজিতে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল তার কিয়দংশের সুরাহা করার জন্য ১২৩৩ ও ১২৫২ সালে জারিকৃত অধ্যাদেশে ওয়াচ এন্ড ওয়ার্ড বা কনস্টেবুলারী নিয়োগের আবশ্যকতা লিপিবদ্ধ ছিল। শান্তি স্থাপন ও রক্ষা এবং আইন প্রয়োগকে কাঠামো প্রদান করা হয়ছিল ১২৮৫ সালের ওয়েস্টমিনিস্টার স্ট্যাটুটের মাধ্যমে।

অভিন্ন কায়দায় গোপনীয়তার সংস্কৃতি চর্চার ফলে পরবর্তী ৫০০ বছর পুলিশের ইতিহাসের অরৈখিকতা নিয়ে কোন স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়নি বিধায় ১৮২৯ সালে রবার্ট পিল কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক মেট্রোপলিটন পুলিশকে তদানীন্তন নগর ও নাগরিকের আস্থা অর্জনে বহুমুখী নতুনত্ব আনয়ন করতে হয়েছিল। বিজ্ঞানসম্মত, প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাজীবী ইতিহাসচর্চা ও গবেষণায় জানা যায় যে, রবার্ট পিলের নগর পুলিশ ও নাগরিকের মধ্যকার পারস্পরিক দুরত্ব ও পলায়নপরতা মূলত পুলিশের দেশ ও সমাজ সম্পৃক্তার ইতিহাস স্মারক ও প্রমানকের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে না পারার কারনেই। বর্তমান প্রজন্ম পরবর্তী প্রজন্মকে স্বাধীনতা, সমাজ, পুলিশ সম্পর্কে যে প্রসঙ্গ কাঠামো প্রদান করবে তার আলোকেই ভবিষ্যতের নাগরিকরা পুলিশের সাথে সম্পৃক্ত হবেন।

এই ইতিহাস সংবেদনশীলতা থেকেই চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আধুনিক শিপ্প ও স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত জাদুঘরে নজীরবিহীন বিপ্লব ও দেশপ্রেমের স্মারক থরে থরে সাজিয়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টার দা সূর্য সেন এর নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের ব্রিটিশ পুলিশের চট্টগ্রামে অবস্থিত অস্ত্রগার লুণ্ঠন, টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিসের ধ্বংস সাধন ও ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলা চালানোর মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের প্রয়াস এবং ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে চট্টগ্রামের এসপি এম শামসুল হক, কোতোয়ালী থানার ওসি আব্দুল খালেক, দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের আরআই আকরাম হোসেন সহ ৮১ জন পুলিশ সদস্যের শাহাদাৎ বরণ ও অন্যান্য ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাবলীকে দৃষ্টিলব্দ অবয়ব প্রদানের লক্ষে মৌলিক ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীতে প্রতিষ্ঠিত লাল ভবনদ্বয়ের অখন্ডতা বজায় রেখে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, শিল্প ও স্থাপত্যের ক্রিয়ামূলকতা ও মিনিমালিজম আরোপনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে “পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, চট্টগ্রাম” নির্মাণ করে।

পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে যথাযথভাবে উপস্থাপন। মাস্টারদা সূর্য সেনের ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহ ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম পুলিশের আত্মত্যাগ মূলত চট্টগ্রামের ইতিহাস। এর বিশেষ লক্ষ্য এ অঞ্চলে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করে তোলা, যার ফলে তারা মাতৃভূমির জন্য গর্ব ও দেশাত্মবোধে উদ্দীপ্ত হবে এবং উদার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সম্মানিত কমিশনার জনাব সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর, পিপিএম। উদ্বোধন শেষে আমন্ত্রিত অতিথিগণ জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন সময়ের পুলিশের পোষাক, তৎকালীন সময়ের সরকারি দপ্তরের চিঠি, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, বীরশ্রেষ্ঠদের বৃত্তান্ত , বর্তমান পুলিশ সদস্যদের পোশাক, দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের ম্যাপ, ফাঁসির মঞ্চ, ভিজুয়াল ডিসপ্লে সংবলিত হল রুম, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের ছবি, তথ্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্রিক দেশি বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকার নিউজ, বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন বই, বঙ্গবন্ধুর ছবি ও তাঁর লেখা বই, মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র ইত্যাদি পরিদর্শন করেন।

এসময় সেখানে মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মেয়র, চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, আ জ ম নাসির উদ্দীন, বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম মোঃ আশরাফ উদ্দিন, ডি আই জি, চট্টগ্রাম রেন্জ মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিপিএম, ( বার), পিপিএম (বার), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) জনাব শ্যামল কুমার নাথ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) জনাব মোঃ শামসুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব সানা শামিনুর রহমান, উপ পুলিশ কমিশনার (সদর) জনাব মোঃ আমির জাফর, বিপিএম, পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম জেলা, এস এম রশিদুল হক, পিপিএম, সহ পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype