শনিবার-১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট বৌদ্ধ বিহারে ধর্মদেশনা অনুষ্টান সম্পন্ন

সিলেট বৌদ্ধ বিহারে সুদূর চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা থেকে পরম পুজনীয় ভিক্ষু সংঘ অতিথি হিসেবে আগমনের সুবাদে গতকাল ১৯ নভেম্বর (শুক্রবার সকাল ৯. ৩০ মিনিটে) সিলেট বৌদ্ধ বিহার মিলনায়তনে আগত পরম পুজনীয় ভিক্ষু সংঘদের উদ্দেশ্যে অষ্টপরিস্কারদান, সংঘদান, বুদ্ধপ্রতিবিম্ব দান সহ ধর্মদেশনা অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মদেশনায় সংঘ প্রধান ছিলেন পরম পূজ্য সাধনানন্দ মহাস্থবির(বনভান্তের) শিষ্য,খাগড়াছড়ি ধর্মপুর আর্য বনবিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত দ্বীপানন্দ স্থবির সহ আগত ভিক্ষু সংঘবৃন্দ। আরো ছিলেন সিলেট বৌদ্ধ বিহারের ভদন্ত আনন্দ ভিক্ষু ও ভদন্ত মহানাম ভিক্ষু। ধর্মদেশনায় পূজনীয় সংঘরা বলেন, লোভ, হিংসা, অহংকার, ক্রোধ ইত্যাদি মানুষকে শুধু বিপথে পরিচালিত করেনা, বরং পাশ্চাত্য পন্ডিতগণ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে ক্রোধ মানুষের আয়ুও কমায়। লোভ, হিংসা, অহংকার আর ক্রোধ-এসব এসিডের মত মানুষের ভেতরকে পুড়িয়ে মারে।

বৌদ্ধ দর্শন মতে শত্রু বাইরের কোন ব্যক্তি নয়, বরং অন্তরে অবস্থান করা এসব লোভ, হিংসা, ক্রোধ আর অহংকার হচ্ছে মানুষের আসল প্রকৃত শত্রু। সুখ ও প্রশান্তি বিনস্তকারী এসব শত্রুকে নাশ করতে বুদ্ধ তথাগত “মৈত্রী ভাবনা”(নিজের ও অপরের মঙ্গল, সুখ ও শান্তি কামনা) করার উপদেশ দিয়েছেন। পালি মেত্তা শব্দের বাংলা অর্থ মৈত্রী। মৈত্রী, করুণা, মুদিতা আর উপেক্ষা- এর চারি ভাবনাকে একত্রে ব্রহ্মবিহার বলা হয়। মৈত্রী অর্থ শর্তহীন ও প্রত্যাশাহীন ভালোবাসা তথা নিজের মত অপরের হিতসুখ কামনা। করুণা অর্থ দয়া বা পরের দুঃখ মোচন করবার প্রবলেচ্ছা।

অন্যদিকে পরের শ্রী বা সৌন্দর্য, সম্পদ, যশ, লাভ, ঐশ্বর্য ইত্যাদি সৌভাগ্য দর্শনে নিজ চিত্তের আনন্দই হল মুদিতা। আর উপেক্ষা হচ্ছে চিত্তের অলীন বা অনুদ্ধত অবস্থা। লাভ-অলাভ, যশ-অযশ, নিন্দা-প্রশংসা, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি অষ্ট লোকধর্মে চিত্তের অকম্পিত ভাবই উপেক্ষা। যিনি এই চারটি ভাবনা সত্যিকার অর্থে করতে পারেন তিনি ব্রহ্মবিহার করেন এবং ব্রহ্মলোকের সুখভোগ করেন। মৈত্রী ভাবনার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যায় না। তবুও অতি সংক্ষেপে কিছু দেয়া হল। সব শেষে জগতের সকল প্রানীর সুখ, শান্তি ও মঙ্গল কামনায় মঙ্গল সূত্র পাঠ করেন এই বিহারে, এই গোচর গ্রামে, এই নগরে, এই বঙ্গদেশে, এই জনপদে, এই জম্বুদ্বীপে, এই পৃথিবীতে, এই চক্রবালে, ঐশ্বর্যসম্পন্ন ব্যক্তিগণ, সীমাস্ত দেবতাসমূহ ও সমস্ত প্রাণীগণ শত্রুহীন হোক, বিপদহীন হোক, দুঃখহীন হোক, আত্মসুখে বসবাস করুক, দুঃখমুক্ত(মোচন) হোক, যথালব্ধ সম্পত্তি(যার যা প্রাপ্য) হইতে বঞ্চিত না হোক, এ জগতে সকল জীবের কর্মই সখা বা বন্ধু।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype