
সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা। কিশোর গ্যাং হিসাবে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করলেও বাস্তবে যুবক-তরুণরাও এর সদস্য। তাদের মধ্যে ছিন্নমূল পরিবারের সন্তান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীও রয়েছে। তারা তুচ্ছ ঘটনায় সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। পাড়া-মহল্লায় দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা দেওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া, তরুণীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে গ্যাং সদস্যরা।
দীর্ঘদিন থেকে সিলেটে কিশোর গ্যাং সদস্যদের তৎপরতা থাকলে পুলিশের কাছে কিশোর গ্যাং সদস্যদের এলাকাভিত্তিক কোন তালিকা নেই। প্রায় ৮ মাসেও কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা তৈরী করতে পারেনি পুলিশ। তবে সম্প্রতি অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সিলেট মহানগর পুলিশ থানা ভিত্তিক গ্যাংয়ের তালিকা তৈরীর কাজ হাতে নিলেও সেই তালিকা এখন প্রস্তুত হয়নি বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শুধু তা-ই নয়, চুরি-ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ধর্ষণসহ হত্যাকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র বা নারীঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটাচ্ছে অপরাধ কর্মকাণ্ড। জমি দখল এবং রাজনৈতিক প্রভাববিস্তারের জন্য প্রভাবশালীরা ব্যবহার করছেন গ্যাং সদস্যদের।
সর্বশেষ আলোচনায় আসে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কামালবাজার ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মোবাইল ফোনে উভয় পক্ষের কথাকাটাকাটি। সেই বিরোধের জেরেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পরিকল্পনা করে তওফিকুল ইসলাম তাইম নামের এক কিশোরকে অপহরণ করার ছক। সব প্রস্তুতি নিয়ে তাইমকে অপহরণ করার জন্য সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজার এলাকার নভাগি গ্রামের যায় ১৬ জন কিশোর গ্যাংয়ের একটি দল। তাইমদের বাড়িতে যাওয়া মাত্রই ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়রা তাদেরকে আটক করে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
গত সোমবার (৩১) রাতে কামালবাজারের নভাগি গ্রামের কছির মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটে। ওইদিন রাতেই থানায় উভয় পক্ষের মধ্যে বৈঠক শেষে পুলিশ আটককৃতদের কাছ থেকে মুচলেকা রেখে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়।
এছাড়া সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন শিববাড়ি কালীবাড়ী সংলগ্ন রোডে একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় কিছু ব্যক্তিদের মদদে এসব কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমনকি গ্যাংয়ের সদস্যরা ইভটিজিং, নেশা, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে। এলাকার কিছু জায়গাকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রকাশ্যে মাদক সেবন করতে দেখা যায়। স্থানীয়রা ভয়ে কিশোর গ্যাংয়ের এসব অপতৎপরতার প্রতিবাদ করেন না। এছাড়া প্রতিনিয়ত জুনিয়র-সিনিয়র বিরোধে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার পাশাপাশি মারধর করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
এদিকে, গত সোমবার (৩১ মে) বিকেলে সিলভার সিটি এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের একটি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অশেষ কর নামের এক কিশোরকে ছুরিকাঘাত করার পাশাপাশি মারধর করে ফেলে যায়। বর্তমানে অশেষ কর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, গত বছরের অক্টোবর থেকে থানা ভিত্তিক, এলাকা ভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা তৈরীর কাজ শুরু করেছে পুলিশ। সেই কাজ কতটুকু এগিয়েছে তা জানা নেই। তবে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান সবসময় অব্যাহত আছে। সেই সাথে কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে তথ্য দেয়ার জন্য স্থানীয়দের অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সিলেটে মোটরসাইকেল চোরের বড় গ্যাং পুলিশের জালে : সিলেটে মোটরসাইকেল চোরের একটি বড় গ্যাং ধরা পড়েছে পুলিশের জালে। গত রোববার ও সোমবার সিলেট মহানগরী এবং কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া শাখা জানায়, গত ১০ মে সন্ধ্যার সময় কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন দয়ারবাজার পয়েন্ট হতে ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক কোম্পানীগঞ্জ কালিবাড়ী গ্রামের বিলাল আহমদকে এক ছদ্মবেশী ছিনতাইকারী ভাড়ায় বুড়িডহর গ্রামে যাওয়ার জন্য ৩৫০ টাকায় চুক্তি করে। রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার সাইফুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে আসামাত্র পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আরও দুইজন ছিনতাইকারী রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়, পরে যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীসহ আরও দুইজন ছুরি দিয়ে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে বিলাল আহমদের মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বিলাল বাদি হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে থানাপুলিশের পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ছিনতাইকারী চক্রকে চিহ্নিত করে গ্রেফতারে অভিযানে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার বিকেল থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত জেলা গোয়েন্দা শাখা (উত্তর), কোম্পানীগঞ্জ থানা এবং কানাইঘাট থানার কয়েকটি টিম কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা এবং সিলেট মহানগরী এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭ আসামিকে গ্রেফতার করে।
এদের মধ্যে সজল আহমদ ঘটনার সময় সরাসরি ছিনতাইকাজে অংশ গ্রহণ করেন। অপর আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল একে অপরের নিকট বিক্রি করেছেন। সর্বশেষ বিবাদি মারুফের হেফাজত থেকে ভিকটিমের ছিনতাইকৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
অভিযানকালে আসামী আল আমিন শিমুলের তথ্যের ভিত্তিতে আরও একটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে, গ্রেফতারকৃত আসামী সজলের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানা, সিলেটের কোতয়ালি এবং এয়ারপোর্ট থানায় ইতোপূর্বে ছিনতাই (দ্রুত বিচার)সহ মোট ৮ টি মামলা রয়েছে। আসামী রায়হানের বিরুদ্ধে শাহপরাণ থানায় ২ টি দ্রুত বিচার এবং অপর ১টি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। আসামি দুলালের বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাসল্ট ও হত্যাচেষ্টাসহ মোট ৪ টি মামলা রয়েছে।
আসামীদের মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান জানান, সাম্প্রতিককালে কোম্পানীগঞ্জসহ বেশ কিছু এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ সুপার মহোদয়ের ক্লোজ মনিটরিংয়ে কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট থানা এবং ডিবির কয়েকটি টিম বিরামহীন অভিযানে মূল ছিনতাইকারীসহ চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে চোরাই ২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যান্য ছিনতাইকারী গ্রেফতারসহ উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে জেলা পুলিশ।