সোমবার-১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৪ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

করোনার ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রীর ফেসবুক স্ট্যাটাস

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ৮ মে (শনিবার) সকাল ১০টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে তিনি এ স্ট্যাটাস দেন।

ওবায়দুল কাদেরের ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসটি হুবহু নিচে তুলে দেওয়া হলো-

‘করোনার মতিগতি বোঝার সাধ্য কারো নেই। দুনিয়াজুড়ে বেপরোয়া গতিতেই ছুটে চলেছে অবিরাম। কোভিডের এই ছুটন্ত মিছিলের শেষ কোথায় কেউ জানে না।

দ্বিতীয় তরঙ্গ ভীষণ ভয়ঙ্কর। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস কাজে লাগছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেডিকশন কোভিডের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা অসহায়ভাবে কেবল নিষ্ফল প্রেসক্রিপশন দিয়ে যাচ্ছেন। প্রাণঘাতি করোনা কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না। অদৃশ্য শত্রু হার মানছে না কিছুতেই।

বিশাল ভারত এখন করোনার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড। বিখ্যাত অক্সিজেন উৎপাদক দেশে আজ অক্সিজেন সঙ্কট। হাসপাতালে একটি বেডের জন্য হাহাকার লেগেই আছে। কারপার্কিং, ফুটপাত এখন ভারতে শ্মশানঘাট। চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে সংক্রমণ। প্রতিদিন মরছে কয়েক হাজার মানুষ।

এদিকে আবার তৃতীয় তরঙ্গের আভাস। অক্সিজেনের অভাবে রাস্তায় মারা যাচ্ছে কত মানুষ! ভয়ঙ্কর ভাইরাস এখন ভারতে পূর্বমুখি গতিপথ নিয়েছে। পাশের বাংলাদেশে আমরা বিপদজনক বার্তা পাচ্ছি।

দ্বিতীয় তরঙ্গের আঘাতে এমনিতেই আমাদের উদ্বেগ-আতঙ্ক চরমে। বিশাল একটি অংশ মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। সর্বত্রই মাস্ক ব্যবহারে চরম অনীহা। হাত ধোয়ার বালাই নেই। নেই সামাজিক দূরত্ব। সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা কিছুটা নিম্নমূখি হলেও বিপদ কিন্তু কাটেনি।

ভ্যাকসিনের ঘাটতি মেটাতে শেখ হাসিনা সরকারের সর্বাত্মক আন্তরিক প্রয়াস আশা করি ব্যর্থ হবে না। তবু মানুষ ছুটছে শহর থেকে গ্রামে। লকডাউনকে ফাঁকি দিয়ে গ্রামমুখী মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথ থেকে এই সেদিনই সলিল সমাধি হল ২৬টি মূল্যবান জীবনের।

তবু উদাসীন মানুষের ছুটন্ত যাত্রার যেন শেষ নেই! শহর থেকে গ্রামে। গ্রাম থেকে শহরে। ঝুঁকিপূর্ণ এই যাত্রায় ভাইরাসের ভয়াল থাবা ওঁত পেতে আছে পথজুড়ে।

করোনার করাল গ্রাসে বদলে যাচ্ছে আজ সারা পৃথিবী। ধরিত্রী আজ ধুঁকছে ভাইরাসের ভয়ঙ্কর আঘাতে। বদলে যাচ্ছে দেশের চিত্র। বদলে যাচ্ছে মানুষের মন।

দেশে দেশে শরণার্থীদের অসহায় আর্তনাদ। কর্মহীন বেকারের চিত্র সারা দুনিয়ায়। হু হু করে বাড়ছে গরীব মানুষের সংখ্যা। করোনা কাবু করে ফেলেছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি।

প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হচ্ছে অস্বাভাবিক গতিতে। ভ্যাকসিন সঙ্কটে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। দেশে দেশে অশান্তি। সুখের সব শহর আজ অসুস্থ। শান্তির জন্যে নোবেল পেয়েও ইথিওপিয়া অশান্ত।

গৃহযুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত সোমালিয়া। বিধ্বস্ত মোজাম্বিক। সুদানের যুদ্ধ আজো থামেনি। প্রচণ্ড প্রতিবাদের মুখেও বেলারুশের আলেকজান্ডার লুকাসেঙ্কো পদত্যাগ করেননি।

বিদেশি হস্তক্ষেপে ইয়েমেনের যুদ্ধ আরও ভয়াবহ। গৃহযুদ্ধের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হানা। চাদের প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস দেবি বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ের পরপরই বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে নিহত।

লিবিয়ার সন্ধি দীর্ঘস্থায়ী হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ফিলিস্তিনিরা এখন আরও অবরুদ্ধ, আরও অসহায়। কঙ্গোতে আবারও শুরু হয়েছে প্রাণঘাতী ইবোলার ছোবল। সাগরে মাছ ধরা নিয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স মুখোমুখি।

ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনারা প্রচুর সমরাস্ত্র নিয়ে হাজির। তাজিকিস্তান ও কিরগিজস্তান পানি বিরোধে উত্তেজনা। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার বিরোধ চরম সীমায়।

থাইল্যান্ডে গণতন্ত্রের দাবীতে জনতার বিক্ষোভ চলছে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জনতার বিক্ষোভ ফেব্রুয়ারি থেকেই রক্তাক্ত করছে রাজপথ। এত প্রাণের বিনিময়েও রক্তপাত কমছেনা।

শান্তি কি আছে আটলান্টিকের ওপারে আমেরিকায়! করোনায় ক্লান্ত আমেরিকায় এ কী ছবি গণতন্ত্রের। কী দেখালেন দোর্দণ্ড প্রতাপের সদ্য পরাজিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখনো থেমে থেমে বন্দুক হামলায় মানুষ মরছে বিভিন্ন শহরে।

ভেনিজুয়েলার পর কলম্বিয়া সরকার বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল। অর্ধশতাধিক ক্রু নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সাবমেরিন ডুবে গেছে সাগরের গভীরে।

দক্ষিণ চীন সাগরের জলসীমার অধিকার নিয়ে শক্তিধরদের যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব থামেনি। স্বার্থের খেলায় মেরুকরণ জোরালো হয়েছে চীন-রাশিয়া এবং ইউরোপ-আমেরিকার।

পরমাণু বোমা নিয়ে ইরানের সঙ্গে আমেরিকার সমঝোতার সম্ভাবনা সামান্যই। গৃহযুদ্ধে রক্তের হোলিখেলা চলছে আফগানিস্তানে। চীন-ভারত ও ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এখনো উত্তেজনা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার নিয়েও ব্রাজিলের বলসোনারোর ডোন্ট-কেয়ার ভাব। রাশিয়ার বিরোধি নেতা নাভালনির আশু কারামুক্তি বিক্ষোভ-আন্দোলনে অনিবার্য বলে মনে হয়না।

এদিকে আমাদের প্রতিবেশি ভারতে করোনার তৃতীয় তরঙ্গের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। পাশের দেশের বাসিন্দা আমাদের তাহলে কী হবে? অভিন্ন শত্রু করোনাকে বাদ দিয়ে এখনো এখানে রাজনীতির ’ব্লেম-গেইম’ চলমান।

যত দোষ কেবল নন্দ ঘোষ শেখ হাসিনা ও তার সরকারের। অথচ বাংলাদেশ এখনো তুলনামূলকভাবে ভাল আছে শেখ হাসিনার মত সাহসী, দূরদর্শী ও মানবিক নেতৃত্বের কারণে।

জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় করে তিনি পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়েছেন। একথা তার নিন্দুকেরাও স্বীকার করে।

দেশ ও মানুষের কথা ভেবে দেশরত্ন শেখ হাসিনা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। করোনাকালে তার নির্ঘুম রাত কাটে খেটে খাওয়া অসহায়, ভাসমান মানুষদের চিন্তায়।

করোনায় বদলে গেছে আমাদের চিরচেনা ঢাকা শহরের চিত্র। আনন্দ উৎসবের সেই চেনাসুর আজ অচেনা হয়ে গেছে। কোলাহল মুখরিত ক্যাম্পাসগুলোতে এখন কেবলই শূণ্যতার হাহাকার।

চঞ্চল তারুণ্যের ছুটন্ত মিছিল এখন আর চোখে পড়ে না। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় আমাদের মায়াবী শহর আজ কাঁদছে অবিরাম। দিকে দিকে স্বজন হারানোর হাহাকার। দু:সময়ে মানুষ চেনা দায়। কত আপন মানুষ দূরে সরে গেছে কভিডের নিষ্ঠুর তাড়নায়।

কত পরিবারে বিচ্ছেদের করুণ বীনা বাজছে। সহিংস তাণ্ডবে ভেঙ্গে গেছে কত সুখের সংসার। করোনাকালেই বিল গেটস-ম্যালিন্ডার ২৭ বছরের মধুর দাম্পত্যে হঠাৎ নেমে এসেছে বিচ্ছেদের বিষাদ ছায়া।

আমাদের সুন্দর গ্রামগুলি এখন হতাশায় হতশ্রী। পাখির গান, রিমঝিম বৃষ্টির শব্দ, নদীর কলতানের চিরচেনা সুর যেন হারিয়ে গেছে। পূর্ণিমার চাঁদ দেখার মতো সেই মনটাও আজ যেন মরে গেছে।

করোনার স্রোতধারায় স্মৃতির মিছিলগুলো আজ যেন ছন্দহারা হরিণের মত পথহারা। কত বোবা কান্না মানুষের অন্তরে গুমোট বেঁধে আছে।

না বলা বেদনায় কত মানুষ বিষাদসিন্ধুতে ভাসছে। কে রাখে তার হিসেব। কে দেয় কৈফিয়ত। সময়টা এখন সত্যিই বড় নিষ্ঠুর।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype