সোমবার-১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৪ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন ।

৮ মে (শনিবার) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তারা এ বাণী দেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০তম জন্মবার্ষিকীতে আমি তার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিভূ।

বাংলাসাহিত্যের প্রায় সব শাখায় রয়েছে তার অবাধ বিচরণ। তিনি আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীতস্রষ্টা, চিত্রকর, সমাজচিন্তক এবং দার্শনিক হিসেবেও বিখ্যাত। সর্বোপরি, বাঙালি জাতীয়তাবোধের প্রধান রূপকারও তিনি।

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসেন ১৯১৩ সালে, গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জনের মধ্য দিয়ে। তিনিই প্রথম অ-ইউরোপীয় হিসেবে বিশ্বসাহিত্যের এই সর্বোচ্চ স্বীকৃতি অর্জন করেন।

তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির বহুত্ববাদ, বৌদ্ধ ধর্মের অহিংস ও ইসলাম ধর্মের সুফিবাদ এবং বাংলার বাউলদের ভাববাদী চেতনার সমন্বয় সাধন করে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন। ”

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, “রবীন্দ্রনাথ মানবতাবাদী অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি। পূর্ববঙ্গ তার শিল্পীসত্তা, মানবসত্তা এবং ঐক্য ও সম্প্রীতির আভায় সমুজ্জ্বল। ফলে সাধারণ বাঙালির দুঃখ-বেদনার কথক হিসেবে যে রবীন্দ্রনাথকে আমরা পেয়েছি,

তা পূর্ববঙ্গেরই সৃষ্টি। এসবের পাশাপাশি মানুষের প্রত্যক্ষ কল্যাণ কামনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে ভেবেছেন।

শিশুসহ নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন শান্তিনিকেতন। সেই সঙ্গে তিনি পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন।

মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার ক্ষেত্রে চিরকাল বিশ্বের জানালাকে খুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের বিশালতা এবং তার সৃষ্টির অপূর্ব মাধুর্যকে অন্তরাত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে রবীন্দ্রচর্চার বিকল্প নেই।

আমি আশা করবো জগৎ-সংসারকে গভীরভাবে জানতে তরুণ প্রজন্ম রবীন্দ্রসাহিত্যে অবগাহন করবে, রবীন্দ্রচর্চায় থাকবে ব্যাপৃত- যা কেবল আচারসর্বস্ব নয়, জীবনসর্বস্ব।

রবীন্দ্রচেতনার আলোকে সাম্য ও শান্তিময় সমাজপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় হোক-এ কামনা করি। ”

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ১৬০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বসাহিত্যের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। বাংলা ও বাঙালির অহংকার। প্রতিভা ও শ্রমের যুগলবন্দির সম্মিলনে তিনি অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম দিয়ে বাংলাসাহিত্যকে করেছেন ঐশ্বর্যমণ্ডিত।

কালজয়ী এ কবি জীবন ও জগৎকে দেখেছেন অত্যন্ত গভীরভাবে, যা তার কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক গীতিনাট্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, সংগীত ও চিত্রকলার সহস্রধারায় উৎসারিত হয়েছে।

আবহমান বাংলার রূপ যেমন তার সাহিত্যসৃষ্টিতে ভাস্বর হয়েছে, তেমনই মানবতাবাদী বাণী তার সাহিত্যকে দিয়েছে অতুলনীয় মহিমা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।

সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পের প্রতিটি শাখায় তার অনায়াস বিচরণ সত্যিই বিস্ময়কর। কবির সমস্ত সৃষ্টির মূলে নিহিত মানবতাবাদ তাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। শান্তি ও মানবতার কবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রকৃতির চিরন্তন সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যের সাধক । ”

তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবোধ বাঙালির অনন্ত প্রেরণার উৎস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার কবিতা ও গান মুক্তিকামী বাঙালিকে উদ্দীপ্ত করেছে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। জীবনের প্রতিটি সমস্যা-সংকট, আনন্দ-বেদনা এবং

আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্রসৃষ্টি আমাদের চেতনাকে আন্দোলিত করে। কবিগুরু ছিলেন বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের একান্ত আপনজন।

শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও পতিসরে অবস্থানকালে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনের মানোন্নয়নে তার অবদান অনস্বীকার্য। গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের জন্য তার পল্লী উন্নয়ন প্রচেষ্টা আজও আমাদের কাছে অনুসরণীয় হয়ে আছে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি সম্মান জানিয়ে সিরাজগঞ্জে ‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ”

এছাড়া, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে কলোত্তীর্ণ ও কবির সৃষ্টিকে প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

রবি ঠাকুরের অমর সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ এবং তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে – এ আমার প্রত্যাশা” বলেও এসময় উল্লেখ করেন তিনি। এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ১৬০তম জন্মবার্ষিকীর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype