বুধবার-১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ-১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ-২২শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

আজ ভয়াল সেই ২৯ এপ্রিল

১৯৯১ সালের ভয়াল সেই ঘূণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া কিছু ফাইল ছবি।

আজ ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলে এ রাতে আঘাত হেনেছিল মহাপ্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। লাশের পর লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল চারদিকে।

বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। পরদিন বিশ্ব অবাক হয়ে গিয়েছিল সেইদিনের ধ্বংসলীলা দেখে। কেঁপে উঠেছিল বিবেক। সহায় সম্বল ও স্বজনহারা উপকূলের কিছু মানুষ পেয়েছিলেন নবজন্ম। এত বছর পর কেমন আছেন তারা।

সব কিছু তছনছ করে মহা ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেই সময় এতবড় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি উপকুলের মানুষ আর কখনো হয়নি।

তাই আজও ২৯ এপ্রিল আসলে স্বজন হারা মানুষের কান্নায় ভারি হয় উপকূলের পরিবেশ। সেদিন জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে অকালে হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের স্মৃতি উপকূলবাসীকে এখনো তাড়ায়। বেদনা অশ্রু ভারাক্রান্ত হন তারা।

ক্ষতিগ্রস্তদের মতে, সেদিন আবহাওয়া বিভাগ উপকূলীয় এলাকায় ৯নং সতর্ক সংকেত জারি করলেও অজ্ঞতার বশে লোকজন নিরাপদ স্থানে না যাওয়ায় মহা দুর্যোগের শিকার হন।

রাত ১০টার পর ১০ থেকে ২০ ফুট উচ্চতায় সাগরের পানি মুহূর্তেই লোকালয়ে ঢুকে জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবলীলায় অনেক মা হারায় সন্তান, স্বামী হারায় স্ত্রী, ভাই হারায় বোনকে। অনেক পরিবার আছে যাদের গোটা পরিবারই পানির স্রোতে হারিয়ে গেছে।

৩০ বছর আগের এই দিনে মহাপ্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার প্রায় আড়াইশ কিমি বেড়িবাঁধ। বাঁশখালী উপকূলীয় ৩নং খানখানাবাদ ইউনিয়নসহ অপর ৯টি উপকূলীয় ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের বেড়িবাঁধও মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল।

২৯ এপ্রিলের সে ভয়াল স্মৃতি মনে করে এখনও কাঁদেন স্বজন হারানো উপকূলবাসী। প্রশাসনের হিসাব মতে, ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় ১৯ জেলার ১০২ থানা ও ৯টি পৌরসভায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮ ‘শ ৮২ জন নিহত, ১২ হাজার ১ ‘শ ২৫ জন নিখোঁজ, ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৪ জন আহত হন।

মাছ ধরার ট্রলার, নৌকা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ-পালা, চিংড়ি ঘের, স্কুল-মাদরাসা, পানের বরজ, লাখ লাখ গবাদি পশু, ব্রিজ কালভার্ট ভেঙ্গে গিয়ে ক্ষতি সাধিত হয় কয়েক হাজার কোটি টাকার। তাই ৩০ বছর পরও অতীতের স্মৃতি ভুলতে পারেনি উপকূলবাসী।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৫৬১ সালের জলোচ্ছ্বাসেও উপকূলের বিপুল মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ১৭৬২ সালে, ১৭৯৫ সালের ৩ জুন, ১৮৯৭ সালের ২৪ অক্টোবরে, ১৯০৫ সালের ২৯ এপ্রিলে, ১৯৬৩ সালের ২৭ মে,

১৯৬৫ সালে, ১৯৭২ সালের অক্টোবরে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়া-দ্বীপসহ উপকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

সর্বশেষ ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে কুতুবদিয়া খুদিয়ার টেক নামক একটি এলাকা পুরো বিলীন হয়ে গেছে।

১৯৯১ সালের এ দিনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর উপ-দ্বীপ ধলঘাটা-মাতারবাড়ি, পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়ন, কুতুবদিয়ার প্রায় পুরো উপজেলা এবং সদরের বৃহত্তর গোমাতলী এলাকায়।

ওখানে অধিকাংশ বাড়ি থেকে পরিবারের ৫-৬ জন লোক মারা যান। অনেক যৌথ পরিবারে ৪০ জন মারা যায়। তাই এ দিনটিতে এখনও স্বজন হারানোর বেদনায় বিলাপ করেন অনেকে।

এখন চলছে ঝড়, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। আবাহওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এপ্রিল-মে, জুন মাসে একাধিক নিম্নচাপের আশংকার কথা প্রকাশ করেছে। কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ অরক্ষিত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার উপকূল অঞ্চলসমূহ।

বাংলদেশের অন্যতম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামের বন্দর নগরীর পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজন এখনো রয়েছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্কে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype