শুক্রবার-৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১১ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

আংশিক লকডাউনের প্রস্তাব ২৯ জেলায়

আংশিক লকডাউনের প্রস্তাব ২৯ জেলায়
আংশিক লকডাউনের প্রস্তাব ২৯ জেলায়

ঝুঁকিপূর্ণ ২৯ জেলার কিছু এলাকায় লকডাউন দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও করোনাপ্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য ডা. নজরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, দিন দিন শনাক্তের হার যেভাবে বাড়ছে এমন পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে অধিদপ্তরের চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা ২৯ জেলা আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা যেতে পারে।’

এ ছাড়া এসব এলাকায় যেসব মানুষ বসবাস করেন, তাদের আশপাশে যারা আক্রান্ত কিংবা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন তাদের চিহ্নিত করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এবার আগে থেকে সতর্ক হতে হবে। আবার যেন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে সতর্ক হতে হবে। প্রতিনিয়ত করোনা শনাক্তের হার যেভাবে বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে মানুষের উদাসীনতা দেখা দিয়েছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য আগের তুলনায় বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন হতে পারে।’

বছরের শুরুতে করোনার সংক্রমণ অনেকটা কমে আসে এবং টিকাদান শুরু হলে মানুষ স্বাস্থ্যবিধিকে অনেকটাই উপেক্ষিত করতে শুরু করে। সেই সঙ্গে দেশের সব পর্যটন এলাকাও খুলে দেয়া হয়।

এমন অবস্থায় মার্চের শেষে এসে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। গত দুই দিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজারের উপরে ছিল। যা দেশে সংক্রমণ বিবেচনায় সর্বোচ্চ।

এমন পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণ ঘটছে এমন ২৯ জেলাকে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের হার যে হারে বাড়ছে, তাতে এখনই এলাকাভিত্তিক লকডাউন দেয়া না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধনামন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন,করোনার নতুন ধরন একটু ভিন্ন। আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
নতুন ধরনে কারও ক্ষেত্রে ফুসফুস, আবার কারও গ্যাস্ট্রো-এন্টারোলজিক্যাল সিস্টেমগুলো মারাত্মকভাবে সংক্রমিত হয়। তখন দ্রুততম সময়ে চিকিৎসার আওতায় নেয়া প্রয়োজন হয়।

এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অধিকাংশকেই আইসিইউতে নিতে হচ্ছে। এই কারণে এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

তিনি বলেন, যেহেতু সরকার করোনা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ২৯ জেলা চিহ্নিত করেছে, সরকারের উচিত হবে এসব জেলাতে করোনা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

প্রয়োজনে এসব এলাকা আংশিক লকডাউন দেয়া যেতে পারে। তবে সারা দেশ লকডাউন দেয়া বাংলাদেশের জন্য ঠিক হবে না।’

তিনি আরও বলেন,স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনা সংক্রমণের হার ২ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে এসেছে। নতুন করে সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তা উদ্বেগজনক। সুতরাং সবাইকে সতর্ক হতে হবে।

একই সঙ্গে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে। না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।’

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। তবে এখনই সাধারণ ছুটি বা লকডাউন ঘোষণার চিন্তাভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ১৮টি নির্দেশনা জারি করার পর সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা সাংবাদিকদের শুনিয়ে বলেন,আগের অভিজ্ঞতা থেকেই এসব নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।’

সাধারণ ছুটি দেয়ার কোনো চিন্তাভাবনা সরকারের আছে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত আমাদের এ রকমের কোনো সিদ্ধান্ত নেই, সাধারণ ছুটি দেয়ার ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।

এখন পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বা ওই ধরনের চিন্তাভাবনা নেই। তবে আমরা সতর্ক হলে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত বছর ২৩ মার্চ প্রথমবারের মতো সাধারণ ছুটি ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। শুরুতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা হলেও পরে তার মেয়াদ বাড়ে কয়েক দফা। ছুটির মধ্যে সবকিছু বন্ধ থাকার সেই পরিস্থিতি
লকডাউন’ হিসেবে পরিচিতি পায়।

তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হয়েছে, এমন এলাকায় আংশিক লকডাউনের পরামর্শ দেয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন,করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বেশি সংক্রমিত এলাকায় আংশিক লকডাউন দিতে পরামর্শ দিয়েছি, যা দ্রুত সিদ্ধান্ত হতে পারে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন,বিনোদনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ওয়াজ মাহফিল, বিয়ে-শাদি ও রেস্টুরেন্টে যাওয়া সীমিত করার প্রস্তাব দিয়েছি। হোম অফিসের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

মাস্ক পরাতে কড়াকড়ি করতে বলা হয়েছে। বেশি সংক্রমিত এলাকায় আংশিক লকডাউন দিতে পরামর্শ দিয়েছি। দুই-এক দিনের মধ্যেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত সরকারিভাবে এসে যাবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ জনে। গত এক দিনে মারা যাওয়া ৪৫ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট ৮ হাজার ৯৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ১৬২ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ৪০ হাজার ১৮০ জন হয়েছে।

২৯ জেলায় রেড জোন চিহ্নিত করা বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হতে পারে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, সেখানকার কোভিড কমিটি চাইলে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে পারে, তবে সাধারণ ছুটির বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি।’

তিনি বলেন,জেলা পর্যায়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটি নিয়ন্ত্রণ কমিটি ঠিক করবে। তবে আমরা বিষয়টি মনিটরিং করব।’

আমরা দেখেছি, প্রথম দিকে নতুন করে করোনা সংক্রমণের জেলা ছিল ছয়টি। ২০ তারিখে সেটি ২০ জেলায় পেয়েছি এবং ২৪ তারিখে পেয়েছি ২৯ জেলায়। সুতরাং করোনা সংক্রমণ বেড়েই যাচ্ছে।’

দেশের ২৯টি জেলাকে করোনা সংক্রমণের তিনটি ক্যাটাগরিতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর মধ্যে উচ্চ ঝুঁকির ছয় জেলা, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুর।

মধ্যম থেকে উচ্চ ঝুঁকির ১৯ জেলা মৌলভীবাজার, সিলেট, নরসিংদী, রাজবাড়ী, ফেনী, শরীয়তপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, বরিশাল, রাজশাহী, নড়াইল, নীলফামারী, গাজীপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, নওগাঁ, রংপুর, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল।

কম ঝুঁকি থেকে উচ্চ ঝুঁকির পাঁচ জেলা নোয়াখালী, বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর ও নাটোর।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype