বুধবার-১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৬ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চোখ নিয়ে সাধারণ মানুষের যত ভ্রান্ত ধারণা

চোখ নিয়ে সাধারণ মানুষের যত ভ্রান্ত ধারণা
চোখ নিয়ে সাধারণ মানুষের যত ভ্রান্ত ধারণা

বয়স হলে মানুষের চোখে যে ছানি পড়ে সেটি সাদা না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন করা যায় না। বৃদ্ধ বয়সে শরীরের চুল পেকে যায়, দাঁত নড়ে যায়, শরীর দুর্বল হয়ে যায়। তেমনি কারও কারও চোখে ছানিও পড়ে।

আল্লাহ তায়ালা চোখের ভিতর লেন্স দিয়েছেন। আমরা বাইরে যেসব দৃশ্য দেখতে চাই, সেই লেন্সটা আলোর রশ্মিগুলোকে পেছনে ফোকাস করে। এই লেন্সটা ঘোলা হয়ে যায়।

তখন এই লেন্সটা অপারেশন করে কৃত্রিম একটি লেন্স যেটা মানুষের তৈরি সেটা চোখে সেট করে দেয়া হয়। এলেন্স স্টেশন স্থাপন করলে আবার চোখে ভালো দেখা যায়।

কিন্তু প্রচলিত একটি কথা আছে যে ছানিটা না পাকলে বা সাদা না হলে সেটি অপারেশন করা যায় না। এটি আগেকার দিনের প্রচলিত ভুল ধারণা। কারণ তখন অপারেশনের সময় ছানি পুরোপুরি সাদা না হলে সেটিকে কেটে বের করা অনেক কষ্টসাধ্য ছিল।

সেক্ষেত্রে ছানিটি ভেঙে যাওয়ার অনেক আশংকা ছিল। কিন্তু বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় ছানি অপারেশনের সময় ফেকো সার্জারি করা হয়। এই অপারেশনের সময় আগের মত চোখ অর্ধেকটা কাটতে হয় না।

এক্ষেত্রে ১ থেকে ২ মিলিমিটার ছোট একটা ছিদ্র করেই চোখের ভিতর একটি মেশিন প্রবেশ করিয়ে ছানিটিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে বের করে আনা হয়।

আগে মেশিন চোখের ভিতর প্রবেশ করানোর কারণে ছানি খুব বেশি পেকে গেলে বা সাদা হলে চোখ অপারেশন করতে অনেক অসুবিধা হতো। এমনকি পরবর্তীতে চোখ ভালো করতে অনেক সমস্যা হয়।

কিন্তু এখনকার যুগে চোখে ছানি পড়লে সেটি সাদা না হওয়া পর্যন্ত বা ছানিটি পেকে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। চোখে ছানি পড়ে চোখে ঝাপসা দেখা গেলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চোখের ছানি অপারেশন করে নিতে হয়। এর ফলে অপারেশনের কয়েকদিনের মধ্যেই চোখে আবার স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।

কোন শিশু টেলিভিশন কাছ থেকে দেখলে বুঝে নিতে হবে বাচ্চাটি অবশ্যই দূর থেকে চোখে ভালো দেখছে না। তার চোখে কোন সমস্যা থাকতে পারে। এক্ষেত্রে শিশুটিকে কিছুদিনের জন্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাকে কিছুদিনের জন্য অভ্যাস করিয়ে নিতে হবে দূর থেকে টিভি দেখার জন্য। কিন্তু তারপরও অভিভাবকরা চাইলে শিশুর চার বছরের আগেই চোখের পরীক্ষা করাতে পারবেন।

এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বুঝে নেন, শিশুটির চোখে মাইওপিয়া সমস্যা রয়েছে। তখন তাকে মাইনাস পাওয়ারের চশমা পরতে হবে। চোখে যাদের মাইওপিয়া সমস্যা রয়েছে তারা যেকোনো জিনিস কাছে থেকে দেখতে পান কিন্তু তারা দূরে দেখতে পান না।

তাই শিশুটির স্কুলে যাওয়ার বয়সের আগেই চোখ পরীক্ষা করে নিতে হবে। এরপর যদি মনে হয় তাদের চশমা নিতে হবে তখন চোখের পাওয়ার অনুযায়ী তা দিতে হবে।

শতকরা ২০ শতাংশ মানুষের চোখের গঠন এমন যে তারা দূরের জিনিসটাকে ঠিকমত দেখতে পারেনা। এজন্য তাদের কিছুটা সাহায্যের প্রয়োজন। সেজন্য চশমা পড়তে হয়।

একটি শিশু যখন চোখে দূরের জিনিস দেখতে পারে না, তখন থেকে চশমা না পড়লে বেড়ে ওঠার সাথে সাথে তার চোখের পাওয়ারও পরিবর্তন হয়ে যায়।

৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে কারো কারো ক্ষেত্রে চোখ দেখতে বড়দের মতো হয়। সেক্ষেত্রে চোখ নরমাল হলে তার আর চশমা পরতে হয় না। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাদের ছোটবেলা থেকেই চশমা লাগে পরবর্তীতে তাদের চোখটা আর নরমাল হয় না।

তাদের পরবর্তীতে সবসময়ই চশমা পরতে হয়। তবে এক্ষেত্রে চশমা পড়লে চোখ খারাপ হয়ে যাবে কিংবা চশমা পরে থাকলে চোখ ঠিক থাকবে এগুলো ভুল ধারণা।

কারণ চোখের পাওয়ার শেপের উপর ডিপেন্ড করছে। তাই শিশুদের যখন চশমা প্রয়োজন তখন চশমা পড়তে হবে। আর প্রতি বছর চশমার পাওয়ার চেক করে নতুন পাওয়ারের চশমা পরতে হবে।

লেজার বা লাইট এনার্জি দিয়ে আমরা নানা রকম কাজ করি। যদি লেজার দিয়ে চোখের কর্নিয়ার সেইপ চেঞ্জ করে থাকি তাহলে সেটাকে বলা হয় ল্যাসিক। ল্যাসিকের মাধ্যমে চোখের কর্নিয়ার সেপ বা গঠন পরিবর্তন করে চশমা পড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

শুধু মাইনাস পাওয়ারই নয়, প্লাস পাওয়ার এর ক্ষেত্রেও ল্যাসিক করা যায়। চোখের লেন্সটি অস্বচ্ছ হয়ে গেলে সেটিকে ছানি বলে। সেই অস্বচ্ছ লেন্সটি বের করার জন্য লেজার ব্যবহার করা হয়।

কারো চোখের রেটিনাতে লেজার করা হলে সেক্ষেত্রে তার চোখের কর্নিয়া বা লেন্সের লেজার করা হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তার চশমা পরা থেকে মুক্তি হচ্ছে না। ডায়াবেটিস রোগীদের যাতে রক্তক্ষরণ না হয়, সেজন্য চোখের রেটিনায় লেজার করা হয়।

গ্রামেগঞ্জে কোন শিশু খেলতে গিয়ে চোখে আঘাত পেলে অভিভাবকরা চোখে শামুক ঝিনুকের পানি লাগায়। এটা চোখের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। চোখের আলসার হতে পারে। এমনকি চোখটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চোখে আঘাত পেলে সাথে সাথে পরিষ্কার পানির ঝাপটা দিতে হবে। অথবা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এন্টিবায়োটিক ড্রপ দিতে হবে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype