সোমবার-১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৪ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

কাতারের মরুভূমিতে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের আসর

অনলাইন ডেস্ক : আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক কাতার মুখোমুখি হবে ইকুয়েডরের। ম্যাচের আগে হবে জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

আরব উপসাগরের এক দিক থেকে সূর্য ওঠে কাতারের মরুভূমিতে উত্তাপ ছড়িয়ে ডুবে গেছে আরেক দিকে। রাতের অন্ধকারে হিমশীতল করা বাতাস ছুটেছে মরুর বুকে। এই ঠাণ্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে বাড়তি কাপড় জড়াতে হয়। তবে গতকাল রাতে হিমশীতল বাতাসের মধ্যেও কাতারের রাজধানী দোহায় ছিল মধ্য গগনের উত্তাপ। ফ্যান ফেস্টিভ্যালের দারুণ আয়োজনে সেই উত্তাপ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে ফিফা। নিকি মিনাজ, মালুমা আর মরিয়মের আরবি-ইংলিশ-স্প্যানিশ ভাষার গান ‘তুকোহ তাকা’য় মুগ্ধ হয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা।

বিশ্বকাপের ঠিক আগমুহূর্তে উন্মাদনায় মেতে ওঠার ওয়ার্মআপই যেন সেরে নিয়েছেন সারা বিশ্ব থেকে ছুটে আসা কয়েক মিলিয়ন দর্শক। আজ আরব সাগরের গভীর থেকে উঠে আসা সূর্য ঘোষণা করবে নতুন দিনের। ফুটবলের বইয়ে লেখা হবে নতুন অধ্যায়। মধ্যপ্রাচ্যের আগুন-গরমে বিশ্বকাপ আয়োজনের ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে কাতার।   ফিফার তালিকায় থাকা তারকাদের মধ্যে নোরা ফাতেহি এখনো অন্তত ‘না’ করেননি। গতকাল যোগাযোগ করা হলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চূড়ান্ত কিছু জানায়নি ফিফা। তবে কেউ আসুক আর না-ই আসুক, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে জাঁকজমকপূর্ণই। তুকোহ তাকা, ম্যাজিক ইন দ্য এয়ার গানের তালে তালে ফুটবলের ছন্দে হারিয়ে যাবেন দর্শক। রেফারির বাঁশি বাজার আগেই শুরু হয়ে যাবে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত উন্মাদনা। বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে কাতার দারুণ এক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে পৃথিবীর সামনে।

ঝকঝকে তকতকে পরিবেশ। কাতার। আরব বিশ্বেরই কেবল নয়, সারা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ধনী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাদের মাথাপিছু আয় ৮২ হাজার ৮৭৭ ডলার। ধনীর তালিকায় পঞ্চমে অবস্থান কাতারের। অর্থবিত্তে দুনিয়ার সেরা দেশগুলোর মধ্যে থাকলেও নিজেদের অতীত ভুলে যায়নি তারা। ইতিহাসের সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যায় কাতাদের চারদিকে। কোথাও প্রাচীন দুর্গের মতো তৈরি করা হয়েছে বাড়ি।

কিছু সরকারি অফিস দেখলেও মনে হবে, যেন প্রাচীন কোনো যুগের তৈরি দুর্গম দুর্গ। কোথাও আবার যাযাবরদের খিমার মতো দেখতে ভবন। শীতকালে মরুভূমিতে এখনো খিমা তৈরি করে পরিবারসহ দিন কয়েকের জন্য চলে যান কাতারের স্থানীয় লোকজন। তারা নিজেকে এবং পরিবারের তরুণ সদস্যদের পূর্বপুরুষদের কষ্টকর দিনগুলোর কথাই যেন মনে করিয়ে দিতে চান।

প্রথমবারের মতো আরব মরুর দেশ কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন করতে গিয়ে মনে রেখেছে অতীতের কথা। বিশ্বকাপের স্টেডিয়ামগুলোকে তৈরি করেছে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা ভেবে। কাতার বিশ্বকাপে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও উদ্বোধনী ম্যাচ হতে যাচ্ছে আল খোর শহরের আল বাইত স্টেডিয়ামে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যাযাবরদের বিরাটাকৃতির কোনো খিমা, যেখানে হয়তো লুকিয়ে আছে মরুভূমির কোনো রহস্য! আসলেই হয়তো রহস্য লুকিয়ে আছে আল বাইত স্টেডিয়ামে। দোহা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের শহর আল খোর।

কাতারের লোকসংখ্যা খুব কম হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে খুব একটা ভাবতে হয় না সরকারকে। বিশেষ করে স্থানীয় ও বিদেশি প্রায় সবারই আছে ব্যক্তিগত গাড়ি। যাদের নেই, তারাও ভাড়া করা ট্যাক্সিতে চড়ে এপার-ওপার করেন। বিশ্বকাপের জন্য অবশ্য বিশেষ আয়োজন আছে কাতারের। তারা প্রায় ৪ হাজার নতুন গাড়ির ব্যবস্থা করেছে বিশ্বকাপের দর্শকদের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে আনা-নেওয়ার জন্য। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করেই তৈরি করেছে আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো লাইন। তবে বাসের সুবিধা কেবল ম্যাচের দিনই পাওয়া যাবে।

আল খোরের আল বাইত স্টেডিয়ামে আজ স্বাগতিক কাতার উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে লাতিন আমেরিকান ফুটবল শক্তি ইকুয়েডরের। এই মাঠে আরও একটা ম্যাচ খেলবে কাতার। ২৯ নভেম্বর, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। আল খোরের আল বাইত স্টেডিয়াম থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের মহারণ। শেষ হবে দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে, ১৮ ডিসেম্বর।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype