শনিবার-১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

নিদ্রাহীনতা যখন রাত

ইতিহাস৭১ ডেস্ক: একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। নিদ্রাজনিত যে সব সমস্যা রয়েছে তন্মধ্যে সুনিদ্রার অভাব- এ অসুবিধাটিকেই প্রকট হিসেবে দেখা যায়। বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠী মৃদু থেকে অধিক বিভিন্ন মাত্রায় এ সমস্যায় পড়েন। দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, শারীরিক ও হরমোনাল পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে অন্তঃসত্ত্বা, নতুন মায়েরা এবং বয়স্ক ব্যক্তিগণের শতকরা ৫০ ভাগ এই অপর্যাপ্ত নিদ্রাজনিত সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। এমনকি সমীক্ষায় দেখা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের দরুন ২০২০ সালের লকডাউন চলাকালীন বাংলাদেশের প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ অনিদ্রায় ভুগেছেন।

ইনসোমনিয়া কী ও প্রকারভেদ : যখন কোনো ব্যক্তির ঘুমের সময় হলেও সহজে ঘুম আসে না কিংবা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে থাকে প্রতিনিয়ত বা ঘুমালেও কিছুক্ষণ পর ভেঙে যায় এবং পুনরায় ঘুম আসতে চায় না এরকম সমস্যায় ভুগতে থাকা অবস্থাকেই ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা বলে ধরে নেওয়া হয়। সাধারণত এটি তিন ধরনের হয়ে থাকে।
* হঠাৎ করে কোনো এক রাত নিদ্রাবিহীন যাওয়া বা মাঝে মাঝে মাসে একদিন ঘুমের সমস্যা পরিলক্ষিত হওয়া। এই ধরনের অনিদ্রার জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। কখনো নিজস্ব দৈনিক রুটিনের ব্যত্যয় হলেও এমন হতে পারে।

* এক সপ্তাহে অনধিক তিন রাত নিদ্রাহীন কাটানো। এ ধরনের অসুবিধা কতিপয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ও কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ সেবন করলে ঠিক হয়। * দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রা বা পর্যাপ্ত সুনিদ্রার অভাবজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকা। এ ক্ষেত্রে রোগীরা অন্তত তিন মাসব্যাপী। প্রতি সপ্তাহে তিন বা ততোধিক রাত নির্ঘুম হওয়ার যন্ত্রণায় কষ্ট পান। এরকম অবস্থার জন্য বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। তাই সমাধানের বেলায়ও মূল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ ও ওষুধ সেবন একান্ত প্রয়োজন।

কী কী কারণে এমন হতে পারে : * অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকা, বিষণ্নতায় ভোগা, মানসিকভাবে অস্থির ভাবসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। * শরীরে হরমোনের পরিবর্তন। * ব্যক্তিগত জীবনে কলহ কিংবা পারিবারিক, সামাজিক বা চাকরিক্ষেত্রে কোনো বিষয় নিয়ে বিষাদগ্রস্ত অথবা বিচলিত থাকা।

* জীবনধারায় শৃঙ্খলার অভাব, মাদক সেবন।

ইনসোমনিয়ার জটিলতাসমূহ : দিনের পর দিন ঘুম ঠিকমতো না হলে স্বাভাবিকভাবেই কিছু সমস্যা তৈরি হয় এবং অনিদ্রার দরুন সৃষ্ট কুন্ডপ্রভাব নিজের জীবনমানকে ক্রমান্বয়ে কমিয়ে দেয়। যেসব লক্ষণ প্রায়ই দেখা যায় সেগুলো হলো : * শরীর দুর্বল লাগা। * মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম ভাব * দীর্ঘদিন ধরে শরীর ম্যাজম্যাজ করা * আচরণে/ স্বভাবে সমস্যা দেখা দেওয়া * মেজাজ রুক্ষ হয়ে যাওয়া কিংবা মনমরাভাব থাকা * মনোযোগ কমে যাওয়া এবং স্মরণশক্তি দিন দিন হ্রাস পাওয়া * দিনের বেলার কাজকর্মে গতি হারানো

করণীয় : শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য দৈনিক ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম খুব উপকারী। যারা রাতের বেলা কাজে নিয়োজিত থাকেন তারা দিনের বাকি সময়ের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিতে হবে। পর্যাপ্ত সুনিদ্রার জন্য সাধারণভাবে কিছু পরামর্শ মেনে চলা যেতে পারে।

* সুষম খাবার গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত (সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন বিশেষ করে সকালে) আধাঘণ্টা করে হলেও শরীরচর্চা করা উত্তম। হাঁটা একটি অত্যন্ত ভালো ব্যায়াম। তবে রাতে ঘুমানোর আগে তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে কোনোরূপ ব্যায়াম না করাই শ্রেয়। দৈনিক একই সময়ে ঘুমের জন্য শুয়ে পড়া এবং ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তোলা। * ঘরের তাপমাত্রা, বিছানা ও ঘুমের পরিবেশ যেন সুনিদ্রা সহায়ক হয় তা খেয়াল রাখা। * ঘুমের সময় সারাদিনের সব কাজ, সমস্যা, ঘটনাবলি কিংবা পরের দিনের জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা ইত্যাদি চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকা। * ঘুমের আগে মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার, টিভি দেখা, গেমস খেলা এসব পরিহারযোগ্য। চা-কফি, চকোলেট এ জাতীয় খাবারও ঘুমের ব্যঘাত ঘটায়। * দিনের বেলা ২০ মিনিটের বেশি না ঘুমানোই ভালো।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype