শনিবার-১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

সর্দি-কাশি জ্বর ঘরে ঘরে

ইতিহাস৭১ ডেস্ক:

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বৃষ্টি কম থাকায় কাঠফাটা রোদে মানুষের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড দাবদাহে বাইরে বের হলেও অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে মানুষ। মাঝে মাঝে বৃষ্টির দেখা মিললেও সেটা খুব সামান্য। যার ফলে সব বয়সের মানুষের মধ্যে রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে এবং রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে জ্বর, কাশি, ঠাণ্ডা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া নিয়ে রোগীদের ভর্তি হতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলেও এখন ডেঙ্গু, ভাইরাস জ্বর, ডায়রিয়া, কলেরা, উচ্চরক্তচাপ, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড এবং প্যারা টাইফয়েড-এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে বয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও ঝুঁকির মধ্যে আছে। বিশেষজ্ঞরা মূলত আবহাওয়ার তারতম্যকে ঘরে ঘরে জ্বর, কাশি, ঠান্ডা, ডায়রিয়া হওয়ার কারণ হিসেবে দেখছেন। রোদ এবং প্রচন্ড তাপমাত্রা এবং গরম থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই দেখা যায় বাইরের ঠাণ্ডা পানি এবং খাবার খেয়ে থাকেন। এতে করে ডায়রিয়া এবং পানিবাহিত রোগ বাড়ছে। ঋতু পরিবর্তনের ফলেও অনেকের ঠান্ডা, কাশি এবং জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া এসব হয়ে থাকে। সাধারণত কয়েক দিন পরেই এসব ঠিক হয়ে যায়। তবে এসব থেকে নিজেদের সুস্থ রাখতে অবশ্যই বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে, প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে, স্যালাইন খাওয়া, সুতি কাপড় পরা এবং বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে। এছাড়াও রাস্তাঘাটের ঠাণ্ডা পানি বা লেবু শরবত খাওয়া যাবে না। এখন ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ বেশি। এছাড়াও দূষিত পানি এবং খাবার থেকে কলেরা অথবা ডায়রিয়ার মাত্রা বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সুতরাং এসব থেকে মুক্তি পেতে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে, বেশি ঘামলে অবশ্যই লবণযুক্ত শরবত অথবা স্যালাইন পান করতে হবে এবং বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে, তবে অতি ঠান্ডা পানি বর্জন করতে হবে। ভাইরাস জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও কম নয়। ডেঙ্গু জ্বরে বেশিরভাগ রোগীর জ্বর, গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, গায়ে লালচে ভাব এবং চোখের পিছনে ব্যথা হয়। সুতরাং এসব লক্ষণ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। রাজধানী ঢাকাতে এ বছরও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি তবে ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ নিয়ে এবছর মোট ৩ হাজার ২০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু হলে অবশ্যই ডাবের পানি, ফলের শরবত, ভাতের মাড়, দুধ ইত্যাদি খেতে পারবে এবং রোগীর প্রচুর বিশ্রাম দরকার সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়াতে হবে।

তবে ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই রাতে ঘুমানোর আগে মশারি টানাতে হবে, মশা নিরোধক স্প্রে, ক্রিম অথবা লোশন ব্যবহার করতে হবে, ঘরের জানালায় মশার নেট ব্যবহার করা, ফুলহাতা শার্ট/কাপড় পরতে হবে, পরিবারের কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে তাকে অবশ্যই মশারির ভিতরে রাখতে হবে, এখন যেহেতু বর্ষাকাল তাই বাড়ির আশপাশে, ফুলের টবে পানি জমে থাকলে সেটা পরিষ্কার করতে হবে।
করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলেও আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে অনেকেই কোনটা করোনা এবং কোনটা ভাইরাস জ্বর, কোনটা ডেঙ্গু এটা বুঝে উঠতে পারছেন না। করোনাআক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণ ডেঙ্গু থেকে আলাদা যেমন, জ্বরের পাশাপাশি যদি ঘ্রাণ ও স্বাদ চলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস আক্রান্ত এবং পাতলা পায়খানা হলে বুঝতে হবে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। করোনার সংক্রমণ এখন কিছুটা কম তবে কারও যদি জ্বরের পাশাপাশি এসব লক্ষণ থাকে তবে অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করাতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি যেমন- মাস্ক ব্যবহার করা, হাত ধোয়া এবং ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।

সুতরাং আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট এসব রোগ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তথ্যসূত্র : স্বাস্থ্য অধিদফতর

লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ডেপুটি ডিরেক্টর, মেডিকেল সার্ভিসেস, এভারকেয়ার হসপিটাল, ঢাকা

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype