শনিবার-১০ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৭শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১২ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু খুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রমত্ত পদ্মার দুই পাড়ে চলছে মহা কর্মযজ্ঞ

আজ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন । এ উপলক্ষে বইছে সারা দেশে আনন্দের হাওয়া। শনিবার (২৫ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু খুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রমত্ত পদ্মার দুই পাড়ে চলছে মহা কর্মযজ্ঞ। সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সারাদেশে উৎসবের আমেজ। বিশেষ করে পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের যেন আনন্দের সীমা নেই।তাদের মধ্যে বিরাজ করছে ঈদের আনন্দ!

সেতুর মাওয়া প্রান্ত ও মাওয়া সংলগ্ন উপজেলাগুলোতে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে।বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ শ্রীনগর, সিরাজদিখান,লৌহজং উপজেলার রাস্তাঘাট ও অলিগলি। এক্সপ্রেসওয়ের পাশের টংগিবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে‌ পোস্টার,‌ ব্যানার, ফেস্টুন দেখা গেছে। শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় রাস্তার পাশে শোভা পাচ্ছে বড় বড় বিলবোর্ড ফেস্টুন ও ব্যানার। শিমুলিয়া ঘাটে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়েজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের পাশেও বড় বড় ব্যানার ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে চায়ের দোকান, হোটেল, সেলুন, সরকারি-বেসরকারি অফিস, ক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে। ক্ষণ গণনা চলছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের আর কত সময় বাকি আছে। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও চান এই মহেন্দ্রক্ষণের অংশীদার হয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হতে।
এদিকে উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতুতে ইতোমধ্যে মহড়া দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর। শুক্রবার (২৪ জুন) বেলা ২টার দিকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে গাড়িবহরটিকে মাওয়া প্রান্তের দিকে আসতে দেখা যায়।

শনিবার সেতু উদ্বোধনের পর এ বহরে করেই টোল প্লাজায় টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে সড়কে, জলে, অন্তরিক্ষে চলছে নানা আয়োজন।

পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জের উত্তর মেদিনীমণ্ডলে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সুধী সমাবেশে বসানো হয়েছে চেয়ার; চলছে সবশেষ প্রস্তুতি। নিরাপত্তাকর্মীরাও আছেন সতর্ক দৃষ্টিতে।

পদ্মা নদী পারাপারের যাত্রীবাহী বেশ কিছু লঞ্চ নিয়ে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে একটি নৌ মহড়া দেখেছে স্থানীয়রা। এ সময় লঞ্চগুলোতে উড়ছিল লাল সবুজের পতাকা। শনিবার যখন প্রধানমন্ত্রী সেতু পাড়ি দেবেন, তখন পদ্মার জলে দেখা যাবে এই মহড়া।

আকাশেও ছিল জাতীয় পতাকাশোভিত সারি সারি হেলিকপ্টার। উড়তে দেখা যায় যুদ্ধবিমান। সবই শনিবারের জমকালো উদ্বোধনী আয়োজনের প্রস্তুতি বলে জানা গেছে।

শুক্রবার (২৪ জুন) বিকেলে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া চৌড়াস্তা এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মা সেতুর নিচে মানুষজনের ভিড় জমেছে। সেতুর পিলার ঘেঁষে ছবি, সেলফি তোলার হিড়িক পড়েছে। ছবি তুলে তারা কালের সাক্ষী হচ্ছেন।

এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আমেজ লেগেছে রাজধানীতেও। হাতিরঝিল জুড়ে সেতু বিভাগের আয়োজনে ও যমুনা ব্যাংকের অর্থায়নে লাগানো হয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন। এছাড়া রাতে আলোকিত করার জন্য লাগানো হয়েছে ঝাড়বাতি।

বন্ধের দিন থাকায় সাধারণ মানুষ বিকেলে এসেছেন ঝিলে অবসর সময় কাটাতে। এ সময় হাতিরঝিলের সাজসজ্জা তারাও উপভোগ করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেতে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা:

উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে আমন্ত্রিত অতিথিদের ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে কিছু নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

নির্দেশনাগুলো হলো:

১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউমার্কেট এলাকা থেকে আগত অতিথিদের চলাচলে রুট
ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন চাঁনখারপুল (নিমতলী) মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে প্রবেশ মুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা-ধোলাইপাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস।

২. জিরো পয়েন্ট (বঙ্গবন্ধু এভিনিউ গুলিস্তান) থেকে আমন্ত্রিত অতিথিদের রুট
জিরো পয়েন্ট-গুলিস্তান আহাদ বক্স সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার প্রবেশ মুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা-ধোলাইপাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস।

৩. মতিঝিল শাপলা চত্বর ও ইত্তেফাক থেকে আগত আমন্ত্রিত অতিথিদের গমনাগমন রুট
মতিঝিল শাপলা চত্বর-ইত্তেফাক ক্রসিং হাটখোলা মোড় সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা-ধোলাইপাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস।

৪. কমলাপুর, টিটিপাড়া থেকে আগত আমন্ত্রিত অতিথিদের চলাচলে রুট
কমলাপুর, টিটিপাড়া ক্রসিং-গোলাপবাগ মোড়-ইনগেট সংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখ-যাত্রাবাড়ী অংশের বাম লেন-ধোলাইপাড় টোলপ্লাজা-ধোলাইপাড় ক্রসিং-জুরাইন ফ্লাইওভার-বুড়িগঙ্গা সেতু-মাওয়া এক্সপ্রেস।

অনুষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে ঢাকা মহানগরী থেকে যাত্রা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসার জন্য অতিথিদের কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমন্ত্রণপত্রে। অতিথিদের আমন্ত্রণপত্র সঙ্গে আনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে এবং এটি হস্তান্তরযোগ্য নয় বলেও জানানো হয়েছে।

আমন্ত্রণপত্রে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগেই সবাইকে অনুষ্ঠানস্থলে আসার জন্য বলা হয়েছে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে রিপোর্ট সঙ্গে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে অতিথিদের। চাবি, চাবির রিং, কলম, মোবাইল, ছাতা, হাতব্যাগ, ক্যামেরা ও ইলেক্ট্রনিক্স বস্তু না নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে মাস্ক পরাসহ কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট সব প্রটোকল অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে দেওয়া স্টিকারটি গাড়ির সামনের কাচের বাম পাশে দৃশ্যমান স্থানে লাগানোর জন্য বলা হয়েছে।

পদ্মা সেতুর থিম সং দেখানো হবে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে। প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সোয়া ১০টায় বক্তব্য দেবেন। বক্তব্য শেষে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন তিনি। পরে সেখানে মোনাজাত হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে জাজিরা প্রান্তে এসে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন।যা করা যাবে না সেতুতে:

পদ্মা সেতু ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।  বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সেতু কর্তৃপক্ষের গণবিজ্ঞপ্তিতে পদ্মা সেতুতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুতে ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না।

১. পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
২. পদ্মা সেতুর ওপর যে কোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ।
৩. বিশেষভাবে জানানো যাচ্ছে যে, তিন চাকা বিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা ইত্যাদি), সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়ি যোগে ও হেঁটে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না।
৪. গাড়ির আকারের চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫ দশমিক ৭ মিটারের চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না।
৫. সেতুর ওপরে কোনো ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না।

নিরাপত্তার শঙ্কা নেই:

এদিকে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে নিরাপত্তার কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেছেন, ‌‘মানুষের মধ্যে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে যে পরিমাণ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখছি, তাতে বৃষ্টি না হলে মানুষ ১০ লাখ ছাড়াবে।’

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype