
আজ আওয়ামীলীগ ৭৩ বছরে পদার্পন করলো । ভাষা আন্দোলন, গণআন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং পরবর্তী দেশের সব অর্জন ও সমৃদ্ধির ইতিহাসের পাতার পরতে পরতে একটিই নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর এ দলটির প্রতিষ্ঠালগ্নেই অঙ্কুরিত হয় ‘স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নসূত্র’। ‘বঙ্গবন্ধু-আওয়ামী লীগ-বাংলাদেশ’।
ইতিহাসে এই তিনটি নাম অমলিন, অবিনশ্বর। ইতিহাসে এই তিনটি নাম একই সূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগ মানেই দেশের স্বাধীনতা, স্বাধীন মানচিত্র, স্বাধীন পতাকা। তেমনি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য ও অর্জনের নামও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী গণমানুষের প্রিয় দল আওয়ামী লীগের আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
আওয়ামী লীগ মানেই বাঙালী জাতীয়তাবাদের মূল ধারা। আওয়ামী লীগ মানেই সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের কাদা-মাটি গায়ে মাখা খেটে খাওয়া মানুষের কাফেলা। অতীতের মতো বাংলাদেশের ভবিষ্যতও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। বাঙালী জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেয়া উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আজ গৌরবোজ্জ্বল ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
দেখতে দেখতে আওয়ামী লীগ ৭৩ বছরে পদার্পণ করল। বাংলাদেশে গড় আয়ু ৭২ বছর। আর ৬৬ বছর হলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বার্ধক্য। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী কেউ ৬০ বছর পেরুলেই তিনি ‘সিনিয়র সিটিজেন’র মর্যাদা পান। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগ এ দেশের সিনিয়র রাজনৈতিক দল। শুধু এটি বললে কম হবে, বাঙালী জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেয়া উপমহাদেশে প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলও হচ্ছে আওয়ামী লীগ। স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, সর্বশেষ সামরিক স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তোরণ- এর প্রতিটি অর্জনের সংগ্রাম-লড়াইয়ে নেতৃত্ব দানকারী একটিই রাজনৈতিক দল, তা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাঙালী জাতির প্রতিটি অর্জনেরও দাবিদার প্রাচীন ও সুবিশাল এই রাজনৈতিক দলটির।
পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে যে দলটির প্রতিষ্ঠা, সেই দল পেয়েছে সুরম্য ১০তলা নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদসহ চতুর্থ দফায় সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দলটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য, প্রাজ্ঞ, কৌশলী ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ একটানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। উন্নয়নের মহিসোপান দিয়ে দেশকে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের অপ্রতিরোধ্য জনসমর্থন আর জনপ্রিয়তায় প্রতিপক্ষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক অস্তিত্বই এখন সঙ্কটের মুখে। বিরোধী পক্ষ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো শক্তি ও সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। তাই বর্তমানে রাজনৈতিক মাঠে আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে অপ্রতিদ্ব›দ্বী, অপ্রতিরোধ্য।
তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলটির জন্ম মোটেই সুখকর ছিল না। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠন করা হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হলে তৎকালীন পাকিস্তানী হানাদার সরকার ভীত হয়ে পড়ে। ওই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মওলানা ভাসানীকে গ্রেফতার করার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তখন নতুন সংগঠন গড়ে তোলার কারিগররা মওলানা ভাসানীকে আত্মগোপনে রাখার ব্যবস্থা করেন এবং সম্মেলনের অন্তত দু’দিন আগে তাকে রোর্ড গার্ডেনে নিয়ে আসা হয়।
এরপর আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। সম্মেলনে দলের নাম দেয়া হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরদিন ২৪ জুন ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রকাশ্য জনসভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে আন্দোলনের কর্মসূচী শুরু হয়, দীর্ঘ ৭২ বছরে তার বিরাম নেই। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনও বিরোধী দলে, কখনও সরকারে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ? ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে এ প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব বাঙালীর। গতবারের মতো এবারও দলটির জন্মদিন এসেছে চলমান এক বিভীষিকাময় বিশ্ব পরিস্থিতিতে। প্রাণঘাতী করোনার কারণে শুধু বাংলাদেশই নয়, সারাবিশ্ব আজ স্থবির। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিদিনই অদৃশ্য এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে।
দেশের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে অসহায় হয়ে পড়া লাখ লাখ মানুষ অকপটেই স্বীকার করছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতোই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, বিতরণ করে যাচ্ছে অর্থ-খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী। দলটির প্রধান কাণ্ডারী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দিনের পর দিন নির্ঘুম রাত কাটিয়ে চরম বিপদে পড়া দেশের কোটি কোটি মানুষকে রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভ্যাকসিন এনে তা দেশের মানুষের দেহে প্রয়োগ করার কাজও অব্যাহত রয়েছে।
শুধু সরকারই নয়, দেশের এই বিপদে দলের বিশাল সাংগঠনিক শক্তিকেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করোনা থেকে দেশের মানুষকে সুরক্ষায় কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সারাবিশ্বে করোনা মহামারীর মধ্যেও উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ।